বাংলাদেশের গণমানুষের ভালোবাসার নাম বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সমরে আমরা, শান্তিতে আমরা, সর্বত্র আমরা দেশের তরে-বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই মূলমন্ত্র যেন সার্থকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রাখছে তারা। দুর্নীতিমুক্ত থেকে গুণগত ও কারিগরি মান বজায় রেখে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোতে সেনাসদস্যদের অবদান অনস্বীকার্য। শিক্ষার বিকাশে এ বাহিনীর অবদান উল্লেখযোগ্য। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশকে আলোকিত করতে অবদান রাখছে।
সেনাবাহিনী ৪৪টি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ এবং ১৯টি ইংলিশ মিডিয়াম বা ভার্সনসহ সারা দেশে ১২টি ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করছে। উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও আধুনিক জ্ঞানচর্চার জন্য মিরপুর সেনানিবাসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস। প্রকৌশল শিক্ষার ক্ষেত্র প্রসারিত করার লক্ষ্যে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং কুমিল্লা, সৈয়দপুর ও কাদিরাবাদ সেনানিবাসে তিনটি আর্মি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পেশায় দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করছে। এছাড়া আর্মি ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নামে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাভার ও সিলেট সেনানিবাসে পরিচালিত হচ্ছে।
পদ্মা সেতুতে জাজিরা ও মাওয়া অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ, নদীশাসন ও নিরাপত্তা প্রদানের পাশাপাশি ব্রিজ অ্যান্ড ফ্যাসিলিটিজ সার্ভিস এরিয়ার কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট হিসাবে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছে এ বাহিনীর সদস্যরা। পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের জন্য সুপারভিশন পরামর্শক হিসাবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে তারা। বিভিন্ন সড়কের উন্নয়নমূলক কাজ, ব্রিজ, ওভারব্রিজ, নদী ড্রেজিং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন করা হচ্ছে। অবকাঠামো উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় হাতিরঝিল সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্প, চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর মহিপাল ফ্লাইওভার, ঢাকা শহরের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ৩০০ ফিট পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, মেঘনা-গোমতী ব্রিজের মেরামত কাজ, পদ্মা নদী ড্রেজিং প্রকল্প, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন সড়ক উন্নয়ন নির্মাণের কাজ ইত্যাদি সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন করা হচ্ছে।
রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় বিভিন্ন সড়ক নির্মাণ করায় এ অঞ্চলে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। পার্বত্য তিন জেলায় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ে এসেছে উন্নয়ন ও প্রাণের স্পন্দন। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ, রক্ষণাবেক্ষণ, পারমাণবিক জ্বালানি পরিবহণ এবং প্রতিরক্ষার দায়িত্বে আছে সেনাবাহিনী। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র তথা ভোটার আইডি কার্ড, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এবং মেশিন রিডেবল ভিসা তৈরিতে তাদের ভূমিকা অনন্য।