নিরাপদ ঈদযাত্রার জন্য চাই মধ্যমেয়াদি টেকসই পরিকল্পনা

প্রথম আলো সাইদুর রহমান প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০২৫, ১৯:৪৭

প্রতিবছরই ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে বিআরটিএ ও হাইওয়ে পুলিশ ঈদের আগে বিভিন্ন অংশীজনদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করে। এসব বৈঠকে প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয় যে কোনোভাবেই ঈদযাত্রায় লক্করঝক্কড় ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলতে দেওয়া হবে না; রাজধানীর সিটি সার্ভিসের বাস কোনোভাবেই দূরপাল্লায় চলতে দেওয়া হবে না; কোনোভাবেই ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে যাত্রী বহন করতে দেওয়া হবে না। সঙ্গে আরও বলা হয় যে ঈদযাত্রায় বাড়তি ভাড়া আদায় কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে; সড়ক-মহাসড়কের চাঁদাবাজি যেকোনো মূল্যে রুখে দেওয়া হবে ইত্যাদি।


কিন্তু বাস্তবে এসবের তেমন কিছুই ঘটে না। ঘটার কথাও নয়। কারণ, ঈদযাত্রায় মাত্র তিন/চার দিনে ঢাকা থেকে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রা করেন। এত অল্প সময়ে এত বিপুলসংখ্যক মানুষ পরিবহন করার মতো মানসম্মত গণপরিবহন দেশে নেই। রেলসেবা তো ব্যাপকভাবে অপর্যাপ্ত। নৌপরিবহন ও নৌ রুট সুবিধাজনক নয়। সুতরাং মানুষ আপনজনের টানে ঝুঁকি নিয়ে সড়কপথেই যাত্রা করেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো এই দৃশ্য শুধু নির্বিকারভাবে দেখতে থাকে। সড়কের চাঁদাবাজি, বাড়তি ভাড়া আদায় ও অনিরাপদ যানবাহন চলাচল বন্ধে তাদের তেমন কোনো তৎপরতা দৃশ্যমান হয় না। তবে কোনো কোনো বছর আবহাওয়া ও সড়ক ভালো থাকা সাপেক্ষে পুলিশ বাহিনীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় মানুষ কিছুটা যানজটমুক্ত ঈদযাত্রা করতে পারেন।


আসলে একটি নির্বিঘ্ন-নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে হলে ঈদের ১০/১৫ দিন বা ১ মাস আগে বৈঠক করে কর্মপরিকল্পনা সাজালে হবে না। এ জন্য প্রয়োজন কমপক্ষে তিন বছরের একটি মধ্যমেয়াদি টেকসই সমন্বিত পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনার অধীনে রেললাইন সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে ট্রেনের সংখ্যা বাড়িয়ে সড়কপথের মানুষকে ট্রেনমুখী করতে হবে। নদীপথ সংস্কার ও জনবান্ধব করতে হবে। সড়কে বিআরটিসির রুট বিস্তৃত করে বাড়াতে হবে বাসের সংখ্যা। একই সঙ্গে সড়কের সব মেয়াদোত্তীর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন বন্ধ করতে হবে। ঈদযাত্রায় পোশাকশ্রমিকেরা যাতে পর্যায়ক্রমে ছুটি উপভোগ করতে পারেন, সে জন্য পরিকল্পনা সাজাতে হবে। ব্যবস্থা করতে হবে পোশাকশ্রমিকদের জন্য অঞ্চলভিত্তিক যানবাহনের। এসব উদ্যোগ ঠিকমতো বাস্তবায়ন করলে ঈদযাত্রা সুস্থ, স্বাভাবিক ও নিরাপদ করা সম্ভব হবে।


মহাসড়কে দ্রুতগামী বড় যানবাহনের সঙ্গে স্বল্পগতির ছোট যানবাহন সিএনজি, অটোরিকশা, নছিমন, ভটভটি ইত্যাদির সংঘর্ষ ঘটছে অহরহ। এসব দুর্ঘটনায় অধিক প্রাণহানি ঘটছে। অনেক সময় পুরো পরিবার নিহত হচ্ছে। এ জন্য মহাসড়কে ধীরগতির ছোট যানবাহন চলাচল বন্ধ করা জরুরি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমাদের গ্রামীণ সড়কগুলো মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এসব সড়ক যদি মহাসড়কে সংযুক্ত না হয়ে পাশ দিয়ে চলে যেত, তাহলে ছোট ছোট যানবাহনকে মহাসড়ক ব্যবহার করতে হতো না। মূলত গ্রামীণ সড়কের ধীরগতির যানবাহনগুলো স্বল্প দূরত্বে চলাচলের সময় মহাসড়ক ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। এ ছাড়া আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কগুলোর সঙ্গে মহাসড়কের সংযোগ একেবারে সরাসরি হওয়ার কারণে ছোট যানবাহনগুলো সরাসরি মহাসড়কে উঠে পড়ছে। ফলে বড় যানবাহনগুলো হঠাৎ ব্রেক করতে না পেরে ধাক্কা বা চাপা দিচ্ছে। কাজেই গ্রামীণ সড়ককে মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত না রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। আর যদি সংযুক্ত করতেই হয়, তাহলে ধীরে ধীরে করতে হবে। হঠাৎ করে সরাসরি নয়।



উল্লেখ্য যে বিকল্প সড়ক না থাকার কারণে যেসব মহাসড়কে ছোট ধীরগতির যানবাহন চলতে দিতেই হবে, সেসব মহাসড়কে সার্ভিস রোড নির্মাণ করতে হবে। রোড ডিভাইডার না থাকলে কিছুদূর অন্তর ফিতা টানিয়ে হলেও সড়কে বিভাজক তৈরি করা যায়। মোটরসাইকেলের জন্য মহাসড়কে লেন থাকতে হবে। তবে গণপরিবহন সহজ ও সাশ্রয়ী করে মোটরসাইকেলকে নিরুৎসাহিত করা প্রয়োজন। মোটরসাইকেল কোনোভাবেই দূরপাল্লার গণপরিবহনের বিকল্প হতে পারে না। মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহীদের মানসম্পন্ন হেলমেটের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। মানসম্পন্ন হেলমেট সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঝুঁকি ৪৮ শতাংশ রোধ করে। প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়িয়ে প্রতিটি যানবাহনের গতিসীমা মানার বাধ্যতা নিশ্চিত করা দরকার। আর আইনের কঠোর প্রয়োগের ফাঁক তো রয়েই গেছে। সেই ফাঁক পূরণ করতে হবে।
সড়ক পরিবহন খাতের অস্থিরতা ও অব্যবস্থাপনার প্রধান কারণ পথেঘাটে রাজনৈতিক পোশাকের বেপরোয়া চাঁদাবাজি। এই অপকর্মের সঙ্গে পুলিশের কিছু অসাধু ব্যক্তিও জড়িত থাকেন। চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারকে কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। যদি রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীদের চাঁদাবাজি বন্ধ করা যায়, তাহলে পুলিশের অসাধু কর্মকর্তারাও চাঁদাবাজি করতে সাহস পাবেন না।


মোটরসাইকেল তৈরি ও বিপণন কোম্পানিগুলো যে ভাষা ও ভঙ্গিতে বিজ্ঞাপন প্রচার করে, তা সংশোধন করতে হবে। তাদের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে তরুণ-যুবক শ্রেণি মোটরসাইকেলের গতির প্রতিযোগিতায় উৎসাহিত হচ্ছে। তরুণ-যুবারা গতির মধ্যে রোমাঞ্চ অনুভব করেন। তাই মোটরসাইকেলের বিজ্ঞাপন অবশ্যই জীবনমুখী হতে হবে।
সড়কে নিরাপদে চলাচলের জন্য রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের প্রতি দলীয় প্রধানের নির্দেশনা থাকতে হবে। মসজিদে নামাজের খুতবায় নিরাপদ সড়ক ব্যবহারের বিষয়ে বয়ান থাকতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক বিভিন্ন আয়োজন করতে হবে। এসব উদ্যোগের ধারাবাহিকতা থাকলে সড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হবে।


পরিবহনশ্রমিকদের নিয়োগ, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকার কারণে অধিকাংশ চালক মানসিক ও শারীরিকভাবে অস্থির ও অসুস্থ থাকেন। ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে। তাই নিরাপদ যানবাহন চালনা নিশ্চিত করতে হলে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ অনুযায়ী পরিবহনের চালক ও শ্রমিকদের পেশাগত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।


এসব উদ্যোগের পাশাপাশি গণমাধ্যমে বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে আধেয় তৈরি করে নিরাপত্তা যে একটি সংস্কৃতি এবং জীবনেরই অংশ, মানুষের মধ্যে এই উপলব্ধি তৈরি করতে হবে। সচেতনতামূলক জীবনমুখী এসব কনটেন্ট বিটিআরসির মাধ্যমে এমনভাবে প্রচার করতে হবে যাতে ফেসবুক দেখার সময় স্ক্রিনে ভেসে ওঠে। বিজ্ঞাপনের মতো বারবার এগুলো মানুষের সামনে আনতে হবে। সড়কের নিরাপত্তাবিষয়ক আধেয় এভাবে প্রচার করলে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি মানুষের মনে গেঁথে যাবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও