
দারিদ্র্য দহনে তাড়িত মানুষ
দারিদ্র্য ফাঁদ এমন এক বৈষম্য ফাঁদ, যা প্রজন্মে হস্তান্তরিত হতে পারে। অথবা মাকড়সার জালের মতো বৈষম্য নিজেকে ধরে রাখে। পুরুষ শাসিত সমাজে একজন নারীর অবস্থান বৈষম্যের নির্দেশক, যেখানে একজন নারী সম্পত্তি এবং উত্তরাধিকার থেকে প্রায় বঞ্চিত। তাদের চলাচলের স্বাধীনতা সীমিত। কারণ সামাজিক নিয়ম ‘ভেতর’ ও ‘বাহির’ হিসেবে কাজ শনাক্ত করে দিয়েছে। এগুলোর সামাজিক প্রতিক্রিয়া খুব ভয়ংকর : মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়, বাড়ির বাইরে কাজ করা মহিলাদের জন্য দুষ্কর এবং পুরুষের চেয়ে মহিলারা কম আয় করে। এর ফলে মহিলাদের নির্ভরতা বৃদ্ধি পায়। রাজনৈতিক পরিণতির দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে, মহিলারা ঘরে-বাইরে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে অংশগ্রহণ করতে পারে না। এমন অসম সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কাঠামো অতি সহজে পুনরুৎপাদিত হতে থাকে।
যদি একজন নারীর মনে বিশ্বাস জন্মায় যে, চুপচাপ থাকা এবং সামাজিক রীতিনীতি মেনে চলা ভালো এবং সুন্দর মেয়ে মানুষের লক্ষণ, তা হলে বিশ্বাসটি সে তার মেয়ে অথবা ছেলের বউয়ের কাছে সংক্রমিত করবে। তেমনি ধনী-দরিদ্রের ক্ষমতা বৈষম্য গরিবের ওপর ধনীর আধিপত্যকে স্বীকৃতি দেয়। উদাহরণ হিসেবে একজন কৃষি শ্রমিকের কথা বলা যায়, যে একজন শক্তিশালী ভূস্বামীর জন্য কাজ করছে। অজ্ঞতা ও অপুষ্টির কারণে সে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বের হতে পারছে না। আবার সে তার ‘প্রভুর’ কাছ থেকে নেওয়া ঋণের জালে বন্দি। যদি দেশের আইন তার পাশে দাঁড়াবার জন্য অপেক্ষা করেও, সে কিন্তু অজ্ঞতা ও অভাবের কারণে রাজনৈতিক ও বিচারিক প্রতিষ্ঠানের সুযোগ নিয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না। এমনিভাবে, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অসমতা অসম সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের দুষ্টচক্রে আটকে আছে।