
ট্রাম্পীয় অভিবাসন নীতি কাঁদাচ্ছে স্ট্যাচু অব লিবার্টিকে
অভিবাসীদের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। নিউ ইয়র্ক শহরের বন্দর এলাকায় ফ্রিডম আইল্যান্ডে এখনও দাঁড়িয়ে আছে ৪৬ মিটার উঁচু স্ট্যাচু অব লিবার্টি, হাতে তার বিরাট এক মশাল। ১৪০ বছর ধরেই সে ডাকছে অভিবাসীদেরকে– তোমরা যারা নিজ দেশে নির্যাতিত, যারা নিজ দেশে ধর্ম পালন করতে পারছ না, যারা যুক্তরাষ্ট্রের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া লেখা করতে চাও, তোমরা চলে এসো, এখানেই মিলবে তোমাদের আশ্রয়। ডনাল্ড জে. ট্রাম্পের অভিবাসন নিয়ে কড়াকড়িতে আজ সেই স্ট্যাচু অব লিবার্টি যেন কাঁদছে। প্রথম মেয়াদে যেমন কড়াকড়ি ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের, দ্বিতীয়বারের মত তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তা বাড়ছে বলেই মনে হচ্ছে।
স্ট্যাচু অব লিবার্টির ডাকে ১৮৮৫ সালের ৭ অক্টোবর ফ্রেডরিক ট্রাম্প নামের এক জার্মান নাপিত জাহাজে ফিরতি টিকিট না কিনেই চলে এসেছিলেন আমেরিকায়। তার উদ্দেশ্য ছিল জার্মানির তিন বছরের বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ ফাঁকি দেওয়া। ফ্রেডরিক ছিলেন বেশ রুগ্ন। সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়া তো দূরের কথা ভারী কাজ একদম করতে পারতেন না। তাই সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য এই ফ্রিডম আইল্যান্ডের মধ্য দিয়ে তিনি চলে এলেন নিউ ইয়র্কে, শহরের মূলভূমিতে।
ওয়াশিংটন পোস্ট ২০১৮ সালের জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাদা ফ্রেডরিক ট্রাম্পকে নিয়ে একটা নিবন্ধ প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয়, ফ্রেডরিক যখন যুক্তরাষ্ট্রে আসেন, তখন পেশায় তিনি ছিলেন একজন নাপিতের সহকারী, ছোট্ট একটা বাক্সে সামান্য কাপড়চোপড় নিয়ে অবৈধ পথে যুক্তরাষ্ট্রে এসে নেমেছিলেন। ওয়াশিংটন পোস্ট আরও লিখেছিল, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কট্টর অভিবাসন নীতিতে, তার পরিবারের মার্কিনি দলপতি দাদা ফ্রেডরিক ট্রাম্প কস্মিনকালেও যুক্তরাষ্ট্রে আসতে পারতেন না।” এই পত্রিকাতে আরও লেখা হয়, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিবারের লোকজন সবসময় তাদের জার্মান পরিচয় লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করত। হয়তো নিজেকে অভিবাসী ভাবতে তারা পছন্দ করতেন না।”
১৯০৫ সালে জার্মান অভিবাসী এলিজাবেথ ক্রাইস্ট আর ফ্রেডেরিক ট্রাম্প সিনিয়রের ঘরে জন্ম হয় ডনাল্ড ট্রাম্পের পিতা ফ্রেডরিক ক্রাইস্ট ট্রাম্পের।এর এক শতাব্দীর একটু বেশি সময় পরে সিনিয়র ফ্রেডরিকের নাতি ডনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মত নির্বাচিত হলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে।
জুনিয়র ফ্রেডরিকের ১৩ বছর বয়সে তার বাবা সিনিয়র ফ্রেডরিক মারা যান। তিনি মার্কিনিদের কাছে ফ্রেড ট্রাম্প নামে অধিক পরিচিত। গত শতাব্দীর বিশের দশকে কুইন্স অঞ্চলে ছোট ছোট বাড়ি, যেগুলো এক পরিবারের উপযোগী, বিক্রির মধ্যে দিয়ে ডনাল্ড ট্রাম্পের বাবা ফ্রেড ট্রাম্পের ব্যবসা-বাণিজ্যের যাত্রা শুরু হয়।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে মাঝারি আয় করা পরিবারদের সহজে গৃহায়ন সুবিধা দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দারুণ ব্যবসাসফল হন ফ্রেড ট্রাম্প। সেসময় গৃহায়ন খাতে মার্কিন সরকারের বিনিয়োগকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা বড় করেন তিনি।উৎকৃষ্ট মানের বিল্ডিং বানানোয় প্রসিদ্ধ ছিলেন ফ্রেড ট্রাম্প। তার বানানো অনেক স্থাপনা এখনও টিকে আছে।ফ্রেড ট্রাম্প নিজেই যথেষ্ট ধনাঢ্য ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন, তার উত্তরাধিকারী তো ডনাল্ড ট্রাম্প রীতিমতন ধনকুবের।
তৃতীয় প্রজন্মের অভিবাসী আমেরিকান এই ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনই এখন বিশ্বের ৪৩ দেশের নাগরিকদের ভিসা পাওয়া নিয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করতে কাজ শুরু করেছে। রয়টার্স ও নিউ ইয়র্ক টাইমসের দেওয়া তথ্য অবশ্য ৪১ দেশের কথা বলছে। জানুয়ারির ২০ তারিখ শপথ গ্রহণ করার পর প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প একটা অধ্যাদেশ জারি করেন যার শিরোনাম ছিল– 'যুক্তরাষ্ট্রকে বিদেশী সন্ত্রাসবাদী ও অন্যান্যদের থেকে রক্ষা করা’। সেখানে বলা হয়, “এই অধ্যাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে ওইসব লোকদের থেকে রক্ষা করবে যারা দেশের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক, যারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে এবং যারা অভিবাসন নীতির সুযোগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি করতে চায়। এই অধ্যাদেশের সময় সীমা আর মাত্র সপ্তাহদুয়েক আছে, এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের স্টেটস ডিপার্টমেন্টকে এই বিধি অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।তারই ধারাবাহিকতায় কাজ চলছে ৪৩ দেশের নাগরিকের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের, এর মধ্যে ইরান, আফগানিস্তান, ভুটানসহ ১১টা দেশ আছে লাল গ্রুপে, সেই সব দেশের নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য কোনোভাবেই বিবেচিত হবেন না। অন্য দুই গ্রুপ কমলা ও হলুদ, এইসব দেশের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরণের নিষেধাজ্ঞা। কমলা গ্রুপে রাশিয়াও রয়েছে। এইসব দেশের যেসব লোক এরই মধ্যে ভিসা পেয়েছেন, তাদের স্ট্যাটাস কি হবে তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে। ট্রাম্পের গত মেয়াদে এই রকম ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যুক্তরাট্রের এয়ারপোর্টগুলোতে দারুণ বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল।তখন ছিল ৮টা দেশ, তার মধ্যে ৬টাই ছিল মুসলিম অধ্যুষিত। এইবার ৪৩টা দেশ, ঝামেলা বাধবে আরও বেশি।
- ট্যাগ:
- মতামত
- মার্কিন নীতি
- অভিবাসন নীতি