ডিসি–ইউএনও–এসি ল্যান্ডরা কি পারবে নদীর সুরক্ষা দিতে

প্রথম আলো তুহিন ওয়াদুদ প্রকাশিত: ১৪ মার্চ ২০২৫, ২০:৪৯

বাংলাদেশে এমন একজন ডিসি পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ, যিনি তাঁর কর্মজেলার সব নদীর নাম বলতে পারবেন। একজন ডিসি তাঁর মেয়াদকালে সব কটি নদীর পাড়ে অন্তত একবার করে গেছেন, এমনটি শোনা যায়নি। ডিসিদের মধ্যে এমন কাউকে পাওয়া যাবে না, যিনি নিজ কর্মজেলার সব নদীর সুনির্দিষ্ট সংকটের কথা বলতে পারবেন। তাঁরা প্রশাসনিক নিজ জেলার নদীগুলোর উৎসস্থল কিংবা পতিতস্থলও বলতে পারবেন না।


জেলার অভ্যন্তরে নদীর মোট কত অংশ কবুলিয়াত দেওয়া হয়েছে কিংবা বদ্ধ জলাশয় ঘোষণা করা হয়েছে কিংবা ব্যক্তির নামে লিখে দেওয়া হয়েছে, সেই তথ্যও কোনো ডিসি জানেন না। এমন কোনো জেলা নেই, যে জেলায় নদী ব্যক্তির নামে লিখে দেওয়া হয়নি, প্রবহমান নদীকে বদ্ধ জলাশয় দেখানো হয়নি। নদীর সর্বনাশের সঙ্গে জড়িত কোনো কর্মকর্তা নেই, এমন জেলা পাওয়া অসম্ভব। মোটের ওপর বলা যায়, যাঁদের ওপর নদীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাঁরা নদীর কোনো খবরই রাখেন না।


জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন বছর দুয়েক আগে একবার নদীর সংখ্যা নিরূপণ করেছে। তখন ডিসি-ইউএনওদের মাধ্যমে নদীর তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। ডিসিরা তখন সব তথ্য দিতে পারেননি। যেটুকু দিয়েছেন, তা–ও ভুলে ভরা। ভাবতে অবাক লাগে, নদীর প্রকৃত দেখভালের দায়িত্ব যাঁদের ওপর ন্যস্ত, তাঁরা নদীর জন্য একটি ফাইল প্রস্তুত করেননি, যে ফাইল দেখে জেলার সব নদীর তথ্য দেওয়া যাবে। একটি প্রধান ফাইল প্রস্তুত করে নদীভিত্তিক আলাদা তথ্য সংগ্রহ করতে একটি জেলায় সাত দিনের বেশি লাগার কারণ নেই। সহজ এ কাজ কখনোই করা হয়নি। এর প্রধানতম কারণ নদীকে গুরুত্ব না দেওয়া।


রংপুর অঞ্চলের খটখটিয়া, শালমারা, ঘাঘট, কুমলাই, স্বরমঙ্গলা, বুড়াইলসহ অনেক নদীর অনেকাংশ ব্যক্তির নামে লিখিত হয়েছে। তিস্তা নদীর মূল প্রবাহ ব্যক্তির নামে সম্প্রতি লিখে দেওয়া হয়েছে। এসব লিখে দেওয়ার সঙ্গে ডিসি, ইউএনও, এসি ল্যান্ডরা জড়িত। এঁদের হাতেই নদী রক্ষার দায়িত্ব হওয়া সত্ত্বেও এঁরাই কখনো প্রত্যক্ষ, কখনো পরোক্ষভাবে নদীর ক্ষতিসাধনে জড়িত থাকেন। বর্তমানে যাঁরা এসব পদে আছেন, তাঁরা হয়তো জড়িত নন। জড়িত আগেকার কোনো কোনো কর্মকর্তা। কিন্তু বর্তমানে যাঁরা ডিসি, ইউএনও, এসি ল্যান্ড আছেন; তাঁরা এগুলো মুক্ত করবেন না বলেই ধরে নেওয়া যায়। এটাই অভিজ্ঞতা। এরকমটাই এতকাল ধরে দেখে আসছি।



দেশের অসংখ্য নদী আছে, যেগুলো ব্যক্তির নামে কবুলিয়াত দেওয়া হয়েছে। নদী কবুলিয়াত দেওয়া বেআইনি। পূর্বেকার কোনো কর্মকর্তা কবুলিয়াত দিলেও পরবর্তী কোনো কর্মকর্তা এসে তা আর বাতিল করেন না। আমাদের অনেক নদীকে বদ্ধ জলাশয় দেখিয়ে অনেক ইউএনও, ডিসি লিজ দেন। একবার কেউ লিজ দিতে শুরু করলেও পরবর্তী আর কোনো কর্মকর্তা এসে তা ফেরানোর চেষ্টা করেন না।


ডিসিরা জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি এবং ইউএনওরা উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি। মাঠপর্যায়ে নদীর আন্দোলন করতে গিয়ে ডিসি এবং ইউএনওদের মাধ্যমে নদী উদ্ধারের চেষ্টা করেছি। তাঁরা তেমন সচেষ্ট থাকেন না। এসব কর্মকর্তার কাছে নদী একটি গৌণ বিষয়। নদী দখল  হোক, নদী থেকে বালু উত্তোলন হোক, নদী কবুলিয়াত হোক, নদীকে বদ্ধ জলাশয় ঘোষণা করা হোক কিংবা নদী ব্যক্তির নামে লিখে দেওয়া হোক, এতে তাঁদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। নদী ছাড়াও তাঁদের আরও অনেক কাজ আছে। সেসব নিয়ে তাঁরা ব্যস্ত থাকেন। অধিকাংশ সময়ে তাঁরা নদী ব্যক্তির নামে লিখে দেওয়া কিংবা লিজ দেওয়ার কাজে যতটা সক্রিয় থাকেন, উদ্ধারের কাজে ততটা নয়।
আমি প্রায় অর্ধযুগ থেকে রংপুর জেলা নদী রক্ষা কমিটির সদস্য। প্রতি মাসে একটি করে সভা হয়। এসব সভার প্রায় প্রতিটিতেই ইউএনওদের প্রতি নদী রক্ষার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো সভায় পূর্ববর্তী সভার নির্দেশনা অনুযায়ী কী কাজ হলো, তা আর দেখা হয় না। ছয় বছর আগে নদী সুরক্ষায় যে দাবি উত্থাপন করেছি, এখনো বাস্তবায়িত হয়নি, এমনটাও আছে। একজন নদীসংগঠক হিসেবে লেগে থেকেও নদী রক্ষায় ডিসিদের দিয়ে নদী মুক্ত করার কাজ সম্পূর্ণরূপে করা সম্ভব হয়নি। তাহলে যেসব জেলায় নদীর সংকট আলাদাভাবে তুলে ধরার কেউ নেই ,সেসব জেলার অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার কথা।


জেলা নদী রক্ষা কমিটিতে থেকে যে একবারেই কিছু হয়নি তা নয়, সভাগুলোতে বারবার বলার কারণে বুড়াইল নদীর ২৮টি বাঁধ অপসারণ করা হয়েছে, শালমারা এবং খটখটিয়া নদীর অবৈধ মালিকানা বাতিল করা হয়েছে। আরও ছোট ছোট অনেক কাজ করা সম্ভব হয়েছে। নতুন দখল রোধ করা গেছে। কখনো কখনো বালু উত্তোলন বন্ধ করা গেছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও