‘মুক্তিযুদ্ধ আমাকে এখনো স্বপ্ন দেখতে অনুপ্রাণিত করে’

প্রথম আলো রেহমান সোবহান প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০২৫, ২১:৩৫

১৯৬০-এর দশকে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্যের ব্যাপারে আপনি আগ্রহী হয়ে উঠলেন কীভাবে?


রেহমান সোবহান: অধ্যাপক কবীর চৌধুরী সে সময়ে ব্যুরো অব ন্যাশনাল রিকনস্ট্রাকশন বা বিএনআরের কাজ করতেন। ১৯৫৯ সালের কোনো একসময় তিনি আমাকে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতি সম্পর্কে বিএনআরের প্রকাশিতব্য জার্নালে একটা অধ্যায় লিখতে বললেন। প্রকাশনাটির উদ্দেশ্য ছিল সম্ভবত রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের সামরিক শাসনব্যবস্থার কৃতিত্ব প্রচার করা। লেখাটির জন্য গবেষণা করতে গিয়ে আমি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্যের বেশ কিছু প্রমাণ পেয়ে গেলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের নুরুল ইসলাম অথবা অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকসহ আরও কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে আলোচনার সুবাদে এ সম্পর্কে আগেও কিছু ধারণা আমার ছিল। বিএনআরের প্রকাশনায় আমার লেখাটিও অন্তর্ভুক্ত হলো। লেখাটিতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার বৈষম্য বিশদভাবে তুলে ধরেছিলাম। স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তান সরকার বিষয়টি একদমই পছন্দ করেনি। তাদের হুকুমে আমার লেখা প্রত্যাহার করে অর্থনীতি বিষয়ে অধ্যাপক আবদুল্লাহ ফারুকের লেখা একটি ইতিবাচক নিবন্ধসহ জার্নালটি আবার নতুন করে ছাপা হয়।


এরপর আমি বৈষম্য বিষয়ে আরও নিয়মিত লিখতে শুরু করলাম। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আমি নিবন্ধ লিখতাম, সভা-সমিতিতে বিষয়টি নিয়ে বলতাম। ১৯৬১ সালের অক্টোবরে যখন লাহোরে এক জাতীয় সম্মেলনে এই দুই অর্থনীতি নিয়ে আমার নিবন্ধটা পড়লাম, তখন তার ব্যাপক প্রচার হয়েছিল। ঢাকার পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায় পুরো লেখা ছাপা হয়েছিল।


আমরা দেখতে পাচ্ছি, আপনি কখনো পেছন থেকে, কখনো পাশে থেকে শেখ মুজিবকে সহায়তা করেছেন—সত্তরের নির্বাচনের আগে–পরে, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে। খুব কাছ থেকে আপনি ইতিহাসের পালাবদল দেখেছেন। রাজনীতির শর্ত তখন তৈরি হচ্ছিল পথে-প্রান্তরে ছড়িয়ে থাকা মানুষের সপ্রাণ অংশগ্রহণে। একাডেমির মানুষ হিসেবে আপনি কী দেখছিলেন, কী শিখছিলেন?


রেহমান সোবহান: ১৯৭০ সালের নির্বাচনী প্রচার ছিল বেশ ব্যতিক্রমধর্মী। কারণ, সেটির কারণেই বঙ্গবন্ধুর মতো রাজনীতিবিদেরা ১৯৫৪ সালের পর প্রথমবারের মতো জনতার সামনে দাঁড়াতে পেরেছিলেন। আমি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর বেশ কিছু জনসভায় গিয়েছি। তিনি যেভাবে মানুষের হৃদয় স্পর্শ করতেন, যেভাবে তাদের কাছে তিনি কেবল একজন রাজনৈতিক নেতা নন; বরং একটি আইকনে পরিণত হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে সেসব দেখতে পাওয়া আমার জন্য ছিল একটি অনন্য অভিজ্ঞতা। ছয় দফা দাবির মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বার্তা যাতে ঘরে ঘরে, এমনকি একেবারে অজপাড়াগাঁয়ে গিয়েও পৌঁছায়—১৯৭০ সালের প্রচারের সময় সেদিকে লক্ষ রাখাই ছিল আমার দায়িত্ব।


ডিসেম্বর ১৯৭০-এর ভোটেই শুধু নয়, ১৯৭১ সালের মার্চেও যখন বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পরাক্রমকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন—এই জনতাই তাদের সবকিছু দিয়ে তাঁকে সমর্থন করেছে। ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলন সর্বস্তরের সব শ্রেণির মানুষের সমর্থন পেয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর স্বতঃস্ফূর্তভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বাঙালি সেনাবাহিনী আর সাধারণ মানুষকে এ সমর্থন শক্তি জুগিয়েছে।


এসব ঐতিহাসিক ঘটনার অভিজ্ঞতা থেকে আমি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলাম, অভিজাত শ্রেণিকে কেন্দ্র করে অসম যে সমাজব্যবস্থা পাকিস্তানের উন্নতিকে আকার দিয়েছে, কিছুতেই তা স্বাধীন বাংলাদেশে চলতে দেওয়া যাবে না। বঙ্গবন্ধুসহ স্বাধীনতাযুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া আরও অনেকের মতো আমিও বিশ্বাস করতাম, আমাদের অবশ্যই একটা ন্যায়পরায়ণ ও সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে হবে।


সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও