
রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমলে বাংলাদেশ কী ধরনের বিপদে পড়বে?
এই মার্চের মধ্যে ১৫ মিলিয়ন ডলারের অর্থ সহায়তা জোগাড় করতে না পারলে এপ্রিলের শুরু থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য খাবারের বরাদ্দ অর্ধেক কমানো লাগতে পারে। এমন পরিকল্পনা করছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। এর ফলে আগে প্রত্যেক রোহিঙ্গাকে প্রতি মাসে মাথাপিছু যেখানে সাড়ে ১২ ডলারের (১,৫০০ টাকা) খাদ্য সহায়তা দেয়া হতো, তা কমে দাঁড়াবে ছয় ডলারে। এতে করে প্রতি বেলার খাবারের জন্য বরাদ্দ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৬ টাকা থেকে কমে হবে আট টাকা। পরিণতিতে আগে থেকেই থাকা খাদ্য সংকট এবং অপুষ্টি আরও তীব্র আকার ধারণ করবে।
বাংলাদেশের বাস্তবতায় মাত্র ১৬ টাকায় একজন মানুষকে এক বেলা খাওয়ানোই যেখানে রীতিমতো অসম্ভব, সেখানে এই টাকার পরিমাণ ৮ টাকায় নেমে এলে একজন মানুষের জন্য এক বেলায় বড়জোর একটি রুটির সমপরিমাণ খাবারের ব্যবস্থা করা যাবে— যা যে কোনো মানুষের জন্য বেঁচে থাকার কঠিন পরীক্ষা। এই পরিমাণ বরাদ্দে পুষ্টিমান নিশ্চিত করা তো দূরে থাক, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের পেট ভরানোই কঠিন।
বিদ্যমান বাস্তবতায় যেখানে এই দেশহীন মানুষগুলোর জন্য খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল, সেখানে সহায়তা কমানোর এই ঘোষণা একটি ভয়াবহ বিপদের অশনি সংকেত দিচ্ছে। কেননা এর মধ্য দিয়ে শুধু যে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জীবনই বিপদাপন্ন হবে তা নয়, বরং এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশও একটা নতুন ধরনের সংকটে নিপতিত হবে। রোহিঙ্গাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বাড়বে। তাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। তারা বাংলাদেশের মূল স্রোতে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করবে এবং এর ফলে ধীরে ধীরে একটি বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকটেরও জন্ম হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে।
কেন সহায়তা কমানোর আলাপ?
বিবিসির খবর বলছে, রোহিঙ্গাদের চাহিদা মেটাতে ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ প্রয়োজন হবে ৮১ মিলিয়ন ডলার। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রতি মাসে ১৫ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এবার সেই তহবিল জোগাড় না হওয়ায় অর্থ সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তবে এ মাসের মধ্যে ১৫ মিলিয়ন ডলারের তহবিল জোগাড় করা সম্ভব হলে, আগামী মাসেও একই হারে অর্থাৎ জনপ্রতি সাড়ে ১২ ডলার করে অনুদান দেয়া সম্ভব হবে। কিন্তু এই তহবিল জোগাড় করা সম্ভব না হলে রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে। (বিবিসি বাংলা, ৬ মার্চ ২০২৫)।
কেন এই শঙ্কা তৈরি হলো? মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির তহবিল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার সহায়তা কমানোর শঙ্কা তৈরির এটি একটি বড় কারণ। এর পাশাপাশি বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি স্থগিত করার কারণেও অনুদান কমতে পারে।
খাদ্য সহায়তায় বরাদ্দ কমার ফলে রোহিঙ্গাদের ওপর তীব্র প্রভাব পড়বে— বিশেষ করে লাখ লাখ মানুষ যে ক্ষুধা, রোগ ও নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে পড়বে তাতে সন্দেহ নেই। বিশেষ করে ঝুঁকিতে থাকা নারী ও শিশুদের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- তহবিল
- সংকট
- খাদ্য সহায়তা
- রোহিঙ্গা ইস্যু