
ভাষা আন্দোলনে সেনাবাহিনীর অবদান
ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, আমাদের সেনাবাহিনী প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে দেশের স্বার্থকে সমুন্নত রাখে। সেনাবাহিনীর প্রতিষ্ঠালগ্নেও এর জ্বলন্ত একটি ঘটনা বা উদাহরণ তারা সৃষ্টি করেন। আমরা ভাষা আন্দোলনে তমুদ্দুন মজলিস ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অবদান সম্পর্কে অবহিত। পরিতাপের বিষয়, বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের ত্যাগের ইতিহাস আমাদের অনেকেরই জানা নেই। আর সেটা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠা দিবসে সংঘটিত হয়েছিল। জেনে অনেকেই অবাক হবেন, এ রেজিমেন্টের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা স্পষ্টভাষী, তেজস্বী, নির্ভীক ও দুঃসাহসী কর্মকর্তা মেজর মোহাম্মদ আবদুল গণি ও মেজর এমআই হোসেন সর্বপ্রথম ভাষা আন্দোলনের সূচনা করেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসাবে গণ্য করতে থাকে।
তাদের যুক্তি ছিল, বাংলা ভাষার ওপর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও অন্য হিন্দু লেখকদের ব্যাপক আধিপত্য বিধায় এদেশের বাঙালি মুসলমানরা হিন্দুদের ধর্ম ও সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এক সময়ে পাকিস্তানের অবিচ্ছেদ্যতার ক্ষেত্রে হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। কেননা, পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিন্দুত্ববাদের প্রভাব ছিল খুবই শক্তিশালী; যা সম্ভব হয়েছিল বাংলা ভাষায় তাদের আধিপত্যের কারণে। এ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মাথামোটা পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী মাতৃভাষা, প্রাণের বাংলা ভাষাকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এবং তা প্রকাশ ও পরিষ্কার হয়ে যায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তৎকালীন ইস্টার্ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ আইয়ুব খানের (পরবর্তীকালে ফিল্ড মার্শাল ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট) একটি উক্তি বা নির্দেশের মাধ্যমে, যা অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ে সদ্য প্রতিষ্ঠিত সেনাবাহিনীতে। এটি আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের সূচনা করে।