
শিক্ষক পিটুনি-টিপ্পনি
রাজধানীর শাহবাগে শিক্ষকদের আন্দোলন ও দমনসহ আনুষঙ্গিক ঘটনা ভিন্ন দিকে চলে যাচ্ছে। সেটি আর দাবির মধ্যে থাকছে না। সেখানে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের বিষয়টি একটু ভিন্ন ধরনের। এটি রেল কর্মচারী, মিটার রিডার বা আনসারদের বায়নানামার মতো বিষয় নয়। তারওপর তাদের দমন করতে গিয়ে পুলিশের অ্যাকশনের পাশাপাশি কিছু ভাষা বিবেকবানদের নাড়া দিয়েছে। বিষয়টির একটা সমাধান অবশ্যই হয়ে যাবে। কিন্তু, ঘটনার ক্ষত শুকাবে না। এর রেশ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
নিয়োগ ফিরে পাওয়ার দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শাহবাগে জলকামানের ঠাণ্ডা-গরম-ঘোলা জলে নাকানিচুবানি খাচ্ছে ক’দিন ধরে। একজন নারী আন্দোলনকারী বলেছেন, ‘পুলিশ বলেছে, “স্বামীর সংসার কর, এখানে আসছোস ক্যান?” অভিযোগ আছে, আওয়ামী লীগের নেতা এমপি মন্ত্রীদের ঘুষ দিয়ে তারা চাকরির ব্যবস্থা করেছে। সে টাকা আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। তারা কীভাবে চাকরি পেয়েছে সরকার ভালোভাবেই জানে। যে পথে, যার মাধ্যমেই হোক একজন মানুষ চাকরি পেল, যোগদানও করলো- এরপর এক পর্যায়ে বলা হলো চাকরি নট; তা ওই ব্যক্তির জন্য কতো বেদনার ! ভুক্তভোগী হয়েই তা বুঝতে হবে? সামান্যতম বিবেকবান যে কারো পক্ষেই তা উপলব্ধি করা সম্ভব।
২০২৩ সালের সার্কুলার আর প্রাথমিকে একটা আলাদা আইন অনুসারে নিয়োগ হয় । এমনিতেই, এই ধাপের রেজাল্ট দেরি করে দেয়। সেই চাকরিটা পাওয়ার পর হারাতে চাইবে কে? শাহবাগে তাদের অবস্থানের কারণে ক’দিন ধরে শাহবাগসহ আশপাশে জনভোগান্তি যাচ্ছে চরমে। পুলিশ এসে খেদায়। তারা কথা শোনে না। আবার জড় হয়। শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে দুই সন্তানকে নিয়ে অবস্থান করছিলেন আন্দোলনকারী রাশেদা বেগম। সন্তানদের একজনের বয়স আট মাস, আরেকজনের ছয় বছর। তার অভিযোগ, ‘লাঠিচার্জের সময় মহিলা পুলিশগুলো বলেছে, “একে ধর, একে ধর”। এক পুলিশ এসে লাথি দেয়। পুলিশ তার শরীরের বিশেষ জায়গায় হাতও দিয়েছে। আরও অনেক নারীর সঙ্গেই এমন ঘটনা ঘটেছে।’
পুলিশ এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। শাহবাগ থানার ওসি খালেদ মনসুর গণমাধ্যমকে অভিযোগ অগ্রাহ্য করে বলেছেন, তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে আন্দোলনকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এ সময় কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে। সেখানে মহিলা পুলিশ ছিল। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
নিয়োগ পুনর্বহালের দাবিতে ‘জাস্টিস ফর টিচার’ কর্মসূচিটি হঠাৎ বা আকস্মিক নয়। সংশ্লিষ্ট জায়গায় কথা বলেছেন তারা। সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। উচ্চ আদালতের আদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেন। তিন ধাপে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল।
প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। ২০২৩ সালের ১৪ জুন তৃতীয় ধাপের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। লিখিত-মৌখিক পরীক্ষা শেষে গত বছরের ৩১ অক্টোবর ফলাফল প্রকাশ হয়। এতে ৬ হাজার ৫৩১ জন উত্তীর্ণ হন। নিয়োগবঞ্চিত কয়েকজন রিট করলে ৬ হাজার ৫৩১ জনের নিয়োগ কার্যক্রম ৬ মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। পরে ৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট তাঁদের নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল করে রায় দেন।
মোটকথা ঘটনার পরম্পরাতেই শাহবাগ। পুলিশ থামছে না। সরকারের দিক থেকেও ফয়সালা আসছে না। তাই হাইকোর্টের রায়ে নিয়োগ বাতিল হওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নির্বাচিতদের ওপর ফের জলকামান দিয়ে পানি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করা। রবিবার পুরুষ প্রার্থীদের লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। এতে পুরুষ প্রার্থীরা সেখান থেকে সরে গেলেও রাস্তায় বসে পড়েন নারী প্রার্থীরা। এরপর বিকালে শিক্ষা ভবনের সামনে সচিবালয়মুখী সড়কে অবস্থান। নারী আন্দোলনকারীদের ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান।