![](https://media.priyo.com/img/500x/https://media.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2025-02-14%2F4f65ogil%2Fautorikshaw.jpg?rect=64%2C0%2C1290%2C860&w=622&auto=format%2Ccompress&fmt=avif)
বিআরটিএ কেন অটোচালকদের প্রতি এতটা কঠোর হলো
আমাদের এক সহকর্মী থাকেন মোহাম্মদপুরের আদাবরে। বৃহস্পতিবার সকালে বাসা থেকে বের হয়ে দেখেন, রাস্তায় কোনো সিএনজিচালিত অটোরিকশা নেই। অগত্যা তিনি কতকটা পথ রিকশায়, কতকটা হেঁটে কারওয়ান বাজারের অফিসে এলেন। এ রকম সমস্যায় কেবল তিনি নন, আরও অনেকে পড়েছেন। সাপ্তাহিক ছুটির আগের দিন তাদের নানা বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, অটোরিকশার চালকেরা গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন কম। বিআরটিএর এক সিদ্ধান্তের পর এমন প্রভাব পড়েছে ঢাকার রাস্তায়। বিআরটিএ সম্প্রতি ডিএমপিকে পাঠানো এক চিঠিতে বলেছে, কোনো অটোরিকশার চালক মিটারে চালাতে রাজি না হলে তাঁকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে হবে।
নগরে যান চলাচলে শৃঙ্খলা আনতে আইন কার্যকর হওয়া জরুরি; কিন্তু বিআরটিএ কি সংশ্লিষ্টদের আইন মানাতে পারছে? এর সরল ও সহজ উত্তর—পারেনি।
বিআরটিএ বলেছে, লাইসেন্স ছাড়া কোনো যানবাহন সড়কে নামতে পারবে না; কিন্তু সড়কে যত্রতত্র লাইসেন্সবিহীন যানবাহন চলছে। বিআরটিএ বলেছে, লাইসেন্স নবায়ন ছাড়া চালকেরা রাস্তায় গাড়ি চালাতে পারবেন না। আমরা দেখছি, মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স নিয়ে চালকেরা হামেশা গাড়ি চালাচ্ছেন। বিআরটিএ বলেছে, ব্যস্ত সড়কে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী নেওয়া যাবে না, বাসগুলো নিচ্ছে। বিআরটিএর আইন অনুযায়ী, ফিটনেসবিহীন যান সড়কে চলতে পারবে না। তবে হরদম চলছে। কালো ধোঁয়ায় পুরো এলাকা আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে।
বিআরটিএ দেখেও না দেখার ভান করছে। সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা থেকে জনগণেকে ১৬ ধরনের সেবা দেওয়া হয়। এর মধ্যে আছে লাইসেন্স গ্রহণ, নবায়ন, ফিটনেস সনদ প্রদান, মালিকানা বদল ইত্যাদি। এসব সেবা বাসায় বসে অনলাইনে পাওয়ার কথা থাকলেও সেটি পাওয়া যায় না। দিনের পর দিন একটি লাইসেন্স পেতে বা নবায়ন করতে বিআরটিএ অফিসে ধরনা দিতে হয়। আর প্রতিটি স্তরে দালালদের টাকা দিতে হয়।
সড়ক পরিবহন আইনে ভাড়াসংক্রান্ত অপরাধে চালকের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮–এর ধারা ৩৫(৩) অনুযায়ী কোনো কন্ট্রাক্ট ক্যারিজের মালিক বা চালক রুট পারমিট এলাকার মধ্যে যেকোনো গন্তব্যে যেতে বাধ্য থাকবেন এবং মিটারে প্রদর্শিত ভাড়ার অতিরিক্ত অর্থ দাবি বা আদায় করতে পারবেন না। এর ব্যত্যয় হলে আইনের ধারা ৮১ অনুযায়ী অনধিক ছয় মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং চালকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত হিসেবে দোষসূচক ১ পয়েন্ট কর্তন করার বিধান রয়েছে।
যারা পয়েন্ট কাটবেন, তাদের পয়েন্ট তো শূন্য। আইন অমান্য করার কারণে পুলিশ চালকদের ধরছেন, মামলার ভয় দেখাচ্ছেন। আবার টাকার বিনিময়ে ছেড়েও দিচ্ছেন। কয়েকজন অটোচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে পুলিশ টাকা নিত প্রকাশ্যে, এখন নিচ্ছে আড়ালে। সন্ধ্যার পর উৎকোচের মাত্রা বেড়ে যায়। সরকার বদল হয়েছে। সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি।
এখানে উল্লেখ করা দরকার, বিআরটিএ অটোচালকদের মিটারে চালানোর পাশাপাশি মালিকের ভাড়াও ঠিক করে দিয়েছিল দৈনিক ৯০০ টাকা। অথচ মালিকেরা সেটি মানছেন না। চালকদের অভিযোগ, দিনে দুই বেলায় তাঁদের ভাড়া হিসেবে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। অর্থাৎ নির্ধারিত ভাড়ার দ্বিগুণ। তাহলে চালকেরা মিটারে চলবেন কীভাবে? মালিক চালকদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নিচ্ছেন। আর চালকেরা যাত্রীদের কাছ থেকে। মিটারে অটোরিকশার সর্বনিম্ন (প্রথম দুই কিলোমিটার) ভাড়া ৪০ টাকা। চালকেরা বলছেন, যখন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল, তখন চালের দাম ছিল প্রতি কেজি ২৫ টাকা। এখন চালের দাম ৫৫–৬০ টাকা। গত কয়েক বছরে গ্যাসের দামও বেড়েছে।
এ অবস্থায় বিআরটিএকে চালকদের কথাও ভাবতে হবে। আর আইন যদি মানাতে হয়, আগে মালিকদের ভাড়া কমাতে হবে। সাম্প্রতিককালে যেকোনো সিএনজি স্টেশনে দেখা যায়, অটোরিকশাচালকদের লম্বা লাইন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের অপেক্ষা করতে হয়। এ বিষয়েও বিআরটিএ নিশ্চুপ। তাহলে আইন কি কেবল অটোচালকদের জন্য?