![](https://media.priyo.com/img/500x/https://cdn.bdnews24.com/bdnews24/media/bangla/imgAll/2024October/bangladesh-women-22102024-01-1729613582.jpg)
সাবিনা-মনিকাদের বিদ্রোহে ফুটবলার-কোচ-বাফুফে কার দায় কতটা?
কয়েক মাসের ব্যবধানে দুটি বিস্ফোরণ। একটি নেপালে, অন্যটি ঢাকায়। দুই বিস্ফোরণে প্রবল ঝাঁকুনিতে টালমাটাল নারী ফুটবল। কোচ বনাম খেলোয়াড়– স্রেফ এই দুই পক্ষে এখন আর সীমাবদ্ধ নেই বিষয়গুলো। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন, তদন্ত কমিটি, নানা মতের-পথের সমর্থকগোষ্ঠীও নেমেছে ময়দানে। দেদার চলছে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের তীর ছোঁড়াছুঁড়ি। তাতে ক্ষত-বিক্ষত, রক্তাক্ত হচ্ছে কেবল নারী ফুটবল।
গত অক্টোবরে নেপালে উইমেন’স সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ চলাকালীন প্রথম বোমাটি ফাটিয়েছিলেন মনিকা চাকমা। জাতীয় দলের মাঝমাঠের এই তারকার এক বিস্ফোরক মন্তব্য দিয়ে পিটার জেমস বাটলারে বিরুদ্ধে ‘এক দল বিদ্রোহীর’ সম্মুখযুদ্ধের শুরু। মনিকা বলেছিলেন, দলের সিনিয়রদের পছন্দ করেন না কোচ। তখনও পিটার সরাসরি আক্রমণ করেননি মেয়েদের; এই ইংলিশ কোচ বরং তোপ দাগিয়েছিলেন, আড়ালে থাকা কুশীলবদের উদ্দেশে। বলেছিলেন, সাবেক কোচ, বাফুফের টিডিসহ (টেকনিক্যাল ডিরেক্টর) আরও অনেকে মেয়েদের প্রলুব্ধ, প্ররোচিত ও বিপথগামী করছে।
এরপর ঘটনা নিয়েছে নানা বাঁক। সবশেষ পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে, যার সমাধানের পথ মসৃণ নয় মোটেও। সমাধান খুঁজতে দেরি করার পুরানো রীতি মেনে একটি তদন্ত কমিটি করেছে বাফুফে। আজ বাদে কাল বৃহস্পতিবার তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা। এরপর সিদ্ধান্ত নেবে দেশের ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থাটি। তবে, সিদ্ধান্ত যাই হোক, যে ক্ষত তৈরি হলো নারী ফুটবলের বাড়ন্ত শরীরে, তা শুকাবে কী আদৌও?
প্রশ্ন আছে আরও অনেক। এই বিষবৃক্ষের বীজ আসলে পোতা হয়েছিল কখন? কীভাবে? এই বিস্ফোরণের হেতু কী শুধুই পিটার? নাকি সেখানে স্রেফ ছোট্ট একটা অংশ তিনি? নাকি দিনের পর দিন, মাসের পর মাস ধরে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের অবশেষে প্রবল উদগীরণ? এত প্রশ্নের উত্তর মেলাতে একটু পেছন ফেরা যাক, মানে ঘটনাপ্রবাহের শুরুতে।
সীমাহীন দারিদ্র্যের কষাঘাত, সমাজের চোখ রাঙানি, চপেটাঘাত সয়েই প্রতিকূল স্রোতে নাও ভিড়িয়েছিল মেয়েরা। ডিফেন্ডার নিলুফা ইয়াসমিন নীলার মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছিল কয়েকদিন আগে। তিনি বলছিলেন মেয়েকে ফুটবলে দেওয়ার সময়ের ভাবনা, “ওকে তো দেখার কেউ নেই। হয় ভেসে যাবে, না হয় জেগে উঠবে।” নীলার মতো সাবিনা, মাসুরা, মনিকা, মারিয়া কিংবা শামসুন্নাহারদের গল্প একই। এরা সবাই প্রতিকূল স্রোতে ফুটবলকে আঁকড়ে ধরে জেগে উঠেছে। দেশের ফুটবলকে জাগিয়েছে। এনে দিয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। অচেনা, অখ্যাত থেকে তারা হয়ে উঠেছেন চেনামুখ, বিখ্যাত।
এই যশ-খ্যাতির সঙ্গে এসেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। অনিশ্চিত জীবনে এসেছে স্বস্তি, কিছুটা নিরাপত্তাও। যেহেতু পাওয়ার সঙ্গে হারানোর ভয়ও জড়িয়ে; সেহেতু মেয়েদের মনের গহীনে তখন থেকে একটু একটু করে হারানোর ভয়ও বাসা বাধতে থাকে। সম্ভবত প্রথম ধাক্কাটা আসে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে; যখন বসুন্ধরা কিংস মেয়েদের লিগ থেকে সরে গেল। এই দলটিতে খেলে মোটামুটি ভালো অঙ্কের পারিশ্রমিক পাচ্ছিলেন সাবিনা-ঋতুপর্ণারা। কিন্তু তারা দল না গড়ায় অর্থের স্রোতে পড়ল ভাটার টান, স্বস্তির জায়গাটুকু ছিনিয়ে নিল উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা।