পাণ্ডুলিপি যাচাই: শিল্প-সাহিত্যে পুলিশিং নতুন নয়

বিডি নিউজ ২৪ আমীন আল রশীদ প্রকাশিত: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২:২৩

শিল্প-সাহিত্যে পুলিশিং বা পুলিশের খবরদারির চেষ্টা নতুন নয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ‘আই থিয়েটার’ নামক একটি অ্যাপে আংশিকভাবে মুক্তি পাওয়া ‘নবাব এলএলবি’ সিনেমায় ধর্ষণের শিকার এক নারীকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদের দৃশ্যে পুলিশকে হেয় করা হয়েছে— এমন অভিযোগে সিনেমার পরিচালক ও অভিনেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হয়। অথচ ২০১২ সালের পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে ‘পর্নোগ্রাফি’ বলতে বুঝানো হয়েছে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কোনো অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অর্ধনগ্ন নৃত্য যা চলচ্চিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও ভিজ্যুয়াল চিত্র, স্থিরচিত্র, গ্রাফিক বা অন্য কোনো উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যার কোনো শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই। সুতরাং সিনেমায় একজন ভিকটিমকে ধর্ষণের বিষয় নিয়ে পুলিশের প্রশ্ন করার দৃশ্য দেখানোর মধ্য দিয়ে কী করে যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি করা হলো— সেটি বিরাট প্রশ্ন। সেখানে যে সংলাপ ব্যবহৃত হয়েছে তাও ‘অশ্লীল’ ছিল বলে মনে হয় না।


অসংখ্য সিনেমার সংলাপে গালাগাল আছে। বিশেষ করে নায়ক ও খলনায়কের মধ্যে যখন বাহাস হয়। সে হিসেবে ওইসব সিনেমার বিরুদ্ধেও অশ্লীলতার অভিযোগ তুলে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করা যায়। সিনেমার প্রচুর গানে নারীর শরীর যেভাবে প্রদর্শন করা হয়, তা কি অশ্লীল? যদি তা-ই হয়, তাহলে বাংলাদেশের অধিকাংশ সিনেমার বিরুদ্ধেই এই আইনে মামলা করা যায়। তার চেয়ে বড় কথা, স্বাভাবিক জীবনের অশ্লীলতা আর শিল্পের অশ্লীলতা এক নয়। শিল্পী অনায়াসে একজন নগ্ন নারীর ছবি আঁকতে পারেন, কিন্তু চাইলেই একজন মানুষ নগ্ন হয়ে রাস্তায় হাঁটতে পারেন না। আবার একজন শিল্পী নগ্ন ছবি আঁকলেও তিনি নিজে নগ্ন হয়ে রাস্তায় বের হতে পারেন না। একজন অভিনয়শিল্পী গল্পের প্রয়োজনে সিনেমায় গালাগাল করলেও ওই একই গালি তিনি ব্যক্তিজীবনে দিলে অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। তার মানে ব্যক্তিজীবন ও শিল্পী-জীবনের এই স্বাধীনতার পার্থক্যটি সারা বিশ্বেই স্বীকৃত।


একইভাবে লেখকেরও স্বাধীনতা রয়েছে। তিনি যা দেখেন ও বোঝেন ওই বিষয়ে তিনি নিজের মতো করে লিখতে পারেন। নানা সূত্র থেকে তথ্য জোগাড় করে বা মাঠেঘাটে ঘুরে তিনি যেমন ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে ননফিকশন লিখতে পারেন, তেমনি যেকোনো বিষয়ের ওপর ফিকশন বা কল্পকাহিনী লেখার অধিকারও তার রয়েছে। পাঠক সেটি গ্রহণ করবে না কি করবে না সেটি লেখক ও পাঠকের সম্পর্কের বিষয়। রাষ্ট্র এখানে খবরদারি করতে পারে না। তবে এটা ঠিক যে, কেউ যদি সচেতনভাবে সমাজ ও রাষ্ট্রে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য কিছু লেখেন— সেখানে রাষ্ট্র বা সরকার নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে। তর্কটা উঠেছে ওই কারণেই।



তবে অতীতের ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে এবারের ঘটনার একটা সুস্পষ্ট পার্থক্য হলো, এবার পুলিশের তরফে বই প্রকাশ বিষয়ক একধরনের ‘পুলিশিংয়ের’ পরামর্শ দেয়া হলেও সরকার সঙ্গে সঙ্গেই এর বিরোধিতা করেছে এবং এটি নাকচ করে দিয়েছে। কিন্তু অতীতে এই ধরনের পুলিশিংয়ের চেষ্টায় সরকার কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। তাতে মনে হয়েছে যে, সরকার নিজেই এই ধরনের পুলিশিং চায় বা সরকার চায় বলেই পুলিশ বা অন্য কোনো বাহিনী শিল্প-সাহিত্যের ওপর খবরদারি করতে পারে।


বইয়ের পাণ্ডুলিপি যাচাই


সংবাদমাধ্যমের খবর বলছে, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে— এমন বিষয়বস্তু ঠেকাতে মেলায় বই প্রকাশের আগেই পাণ্ডুলিপি যাচাই করতে বাংলা একাডেমিকে পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) চাইছে, ২০২৬ সালের একুশে বইমেলা থেকে এই ব্যবস্থা চালু করা হোক। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবারের বইমেলার নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ কথা বলেন।


সংবাদ ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, এর আগে বইয়ের কনটেন্ট নিয়ে মেলায় সমস্যা হয়েছে, এমন পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশের কোনো উদ্যোগ আছে কি না? জবাবে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, “আমরা একটা সমন্বয় সভা করেছিলাম; সেখানে বাংলা একাডেমির কর্মকর্তারা ছিলেন। তাদের আমরা রিকোয়েস্ট করেছি– এরকম কোনো বই যেন মেলায় না আসে, যেখানে উসকানিমূলক কথা বা লেখা আছে। এটা যেন ওনারা স্ক্যানিং করে, ভেটিং করে স্টলে উপস্থাপন করেন। আমি আশা করি, তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন।”

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও