
ভূমি কর্মকর্তা মহোদয়, শালমারা নদী বিল হলো কীভাবে
সম্প্রতি রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ এলাকা থেকে রিভারাইন পিপলের শালমারা নদী সুরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক শাহ জালাল ফোন দিয়েছিলেন। তিনি খুব উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলছিলেন ‘শালমারা নদী বিল হইলো কীভাবে? সরকারের লোকজন তো লাল পতাকা দিয়ে সীমানা করে দিয়ে গেইচে। ভূমি অফিসার কি অন্ধ? দেখে না, এটা নদী না বিল?’
শাহ জালাল প্রবীণ ব্যক্তি। এ নদীর জন্য সারা জীবন লড়াই করে গেছেন। কারাগারেও গেছেন। তাঁর কথার সূত্র ধরে নদী লিজ দেওয়ার বিষয়টি খুঁজতে থাকি। খোঁজ নিয়ে জানলাম, শালমারা নদীকে তিন নামে তিনটি স্থানে ইজারা দেওয়া হয়েছে।
স্থানবিশেষে শালমারা নদীর চমকা নামেও পরিচিতি আছে। নদীটি কাফ্রি খাল নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে বুড়াইল নাম নিয়ে ঘাঘট নদে পড়েছে। নদটির একটি অংশ কয়েকজন প্রভাবশালী জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশে লিখে নিয়েছিল। রিভারাইন পিপলের শালমারা নদী সুরক্ষা কমিটির আন্দোলনে রংপুরের ডিসি তিন-চার বছর আগে ব্যক্তিগত মালিকানা বাতিল করেছেন।
‘শালমারা বিল’ নাম দিয়ে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নে ৩৯ একর ৪০ শতক জমি ইজারা দেওয়া হয়েছে। এ অংশের ইজারামূল্য ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। পার্শ্ববর্তী বড় হযরতপুর ইউনিয়নে ‘শাল রিভার ছোট’ নাম দিয়ে ৪ একর ২০ শতক জমি ১ লাখ ৫২ হাজার টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। ভাংনি ইউনিয়নে ‘বুড়াইল নদী’ নামে ১১ একর ৬৪ শতক জমি ১৫ হাজার ৫০০ টাকায় লিজ দেওয়া হয়েছে। এসব লিজ দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হয় চৌহদ্দি নির্ধারণের ক্ষেত্রে। যেমন শালমারা প্রবহমান নদীটিকে বদ্ধ জলাশয় প্রমাণ করার জন্য বলা হয়েছে, এর পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ চারদিকে আবাদি জমি।
রংপুর জলা প্রশাসনের সায়রাতভুক্ত জলমহালের সংখ্যা ২০৫। এগুলোর মধ্যে ২০ একরের চেয়ে বেশি আয়তনের ৩৮টি এবং ২০ একরের কম আয়তনের ১৬৭টি। যার ১০১টি ইজারা দেওয়া হয়। এই তালিকায় ১৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ ঘাঘট নদসহ অনেক নদ-নদীও আছে।
শালমারা-বুড়াইল ছাড়া ইজারা দেওয়া উল্লেখযোগ্য নদ-নদী বাইশাডারা, ধুম, ফরিঙ্গা ও মাশানকুড়া। রংপুর জেলার এ ছয় নদ-নদী সরকারি তালিকাভুক্ত। একটি জেলাতেই যদি ছয়টি নদ-নদী ইজারা দেওয়া হয়, তাহলে সারা দেশে আরও কত নদ-নদী ইজারা দেওয়া হয়, তার ইয়ত্তা নেই। বদরগঞ্জে মকলার ডারা এবং গাওচুলকার ডারাও প্রবহমান। খাল নামে খনন করা এ দুটি উন্মুক্ত জলাশয়ও ইজারা দেওয়া হয়েছে।
রংপুর জেলায় ইজারা দেওয়া নদ-নদীগুলোর তথ্য বছরখানেক আগেকার। ধুম নদ ছাড়া উল্লিখিত নদ-নদীগুলো রংপুর জেলা এবং সংশ্লিষ্ট উপজেলা থেকে ইজারা দেওয়া হয়েছে। ধুম নদ ইজারা দেওয়া হয়েছে ছয় বছরের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে।
প্রতিবছর ১৪ এপ্রিল অর্থাৎ বাংলা সনের প্রথম দিন থেকে কার্যকর হয়। যেগুলোর ইজারার মেয়াদ পূর্ণ হবে, সেগুলো এ বছর ইজারা হবে। সারা দেশে নতুন ইজারা দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে। অতীতের বছরগুলোতে রাজনৈতিক সরকারের দোহাই দিয়েও অনেক নদী কিংবা উন্মুক্ত জলাশয় বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছিল। এ বছরও আশঙ্কা করা যায়, আগের ধারাবাহিকতায় নদী এবং উন্মুক্ত জলাশয় ইজারা দেওয়া হবে।