রাশিয়ায় মৃত্যুমুখে আরো ১৮ যুদ্ধদাস
ইউরোপের উন্নত দেশে পা ফেললেই ঘুরে যাবে ভাগ্যের চাকা—দালালের এমন প্রলোভনে পড়েন নাটোরের সিংড়া উপজেলার হুলহুলিয়া গ্রামের হুমায়ুন কবির। জমি বন্ধক রেখে ১৮ লাখ টাকা তুলে দেন দালালের হাতে। ভাগ্যবদলের যে স্বপ্ন বুকে নিয়ে দেশ ছেড়েছিলেন, তা স্বপ্নই থেকে গেল। ইউরোপে পা ফেলার আগেই দালালচক্র তাঁকে বিক্রি করে দেয় রাশিয়ায়।
সে দেশে গিয়ে তাঁকে বরণ করতে হয় যুদ্ধদাসের জীবন। শেষ পর্যন্ত আর প্রাণে বাঁচতে পারেননি। কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে এই নির্মম তথ্য।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কবিরের সঙ্গে গিয়েছিলেন তাঁর ভগ্নিপতি রহমত আলী। তিনিও ইউরোপের স্বপ্নযাত্রী ছিলেন। দালালচক্রের কাছে ‘পণ্য’ হয়ে তিনিও বিক্রি হয়ে যান রাশিয়ার চক্রের কাছে। একইভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যেকোনো দিন তাঁকেও পাঠানো হবে যুদ্ধের মাঠে।
গত ২৮ জানুয়ারি কালের কণ্ঠে ‘রাশিয়ায় যুদ্ধে আট বাংলাদেশি’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ খবর দেখার পর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক অভিযোগ আসতে শুরু করে। চার দিন ধরে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করেছে কালের কণ্ঠের অনুসন্ধান বিভাগ। এ পর্যন্ত ছয় জেলার অন্তত ১৮ জন যুদ্ধদাসের বিস্তারিত তথ্য মিলেছে।
ভুক্তভোগী কয়েকজনের সঙ্গেও কথা বলেছে কালের কণ্ঠ। যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়েছে। ইউরোপের স্বপ্ন দেখা ব্যক্তিরা কিভাবে রাশিয়ায় বিক্রি হয়ে যুদ্ধদাসের জীবন বরণ করে নিয়েছেন, তা সবিস্তারে উঠে এসেছে সবার বক্তব্যে।
তাঁদের বক্তব্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় মানবপাচারের একটি বড় ধরনের ফাঁদ পেতেছে ড্রিম হোম ট্রাভেলস নামে ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান। গ্রাম পর্যায় থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্তরে তাদের একটি চক্র সক্রিয় রয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ থেকে রাশিয়া পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রায় প্রতিটি পয়েন্টে এই চক্রের সদস্যরা কাজ করছেন।