‘কাঠামোগত সংস্কার ও ঋণনির্ভরশীলতা থেকে বের হওয়া জরুরি’
ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল, সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (স্যানপা)। সহযোগী গবেষক (অনাবাসিক), ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট পলিসি, ইউনিভার্সিটি অব অনটার্প, বেলজিয়াম। জননীতি, জনপ্রশাসন এবং উন্নয়ন নীতির রাজনৈতিক-অর্থনীতি নিয়ে তিনি গবেষণা করেন। বাংলাদেশে বিদ্যমান আমলাতন্ত্রের সংকট এবং বৈদেশিক ঋণ ও সহায়তানির্ভর অর্থনীতির নানা জটিলতা নিয়ে কথা বলেন বণিক বার্তায়। এ সাক্ষাৎকারের প্রথম অংশ ৯ জানুয়ারি প্রকাশ হয়েছিল। আজ দ্বিতীয় অংশ প্রকাশ হলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাবিদিন ইব্রাহিম
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে জাতিসংঘ, এডিবি ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে ৬-৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ ও অনুদান প্যাকেজের বিষয়ে আলোচনা করেন। এর অগ্রগতি কতটুকু হয়েছে? সামনের দিনগুলোয় আমরা কী আশা করতে পারি?
রাজনৈতিক ট্রানজিশনের মধ্যে অনেক সময় নীতি ধারাবাহিকতার ব্যাপারে অনেকে সন্দিহান থাকেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সহায়তা প্রদানের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাই সময় নেবে। হয়তো কমিশনগুলো যখন রিপোর্ট দেয়া শুরু করবে, তখন বোঝা যাবে সরকারের গতি-প্রকৃতিটা আসলে কোন দিকে যাচ্ছে। এর ফলে পরিস্থিতি উন্নত হবে।
প্রাথমিকভাবে কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা দূর করা নিয়ে সরকার কাজ করছে। এর যথার্থতা রয়েছে। কারণ এর সমাধান ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমার জানামতে, পৃথিবীর এমন কোনো দেশ নেই যারা বাংলাদেশের মতো ১০০ বিলিয়ন ডলারের ওপর বৈদেশিক সহায়তা বা ঋণ নিয়েছে। এর পরও সংকটটা যাচ্ছে না। কেন? এর পেছনে কারণ হলো কাঠামোগত সংকট।
বৈদেশিক সহায়তার ক্ষেত্রে চীনের উদাহরণ আমলে নেয়া যায়। প্রাথমিকভাবে জাপান থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ মাত্র ২২ বিলিয়ন ডলার পেয়েছিল তারা। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংক বা অন্যান্য অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৪০ বা ৪৫ বিলিয়ন ডলার নিয়েছে। এ সহায়তা নিয়ে চীন আজকে পৃথিবীর দ্বিতীয় শক্তিশালী অর্থনীতি হিসেবে নিজেকে দাঁড় করিয়েছে। এটা কীভাবে সম্ভব হলো? এক্ষেত্রে তারা বৈদেশিক সহায়তাকে তিনভাবে ব্যবহার করেছে। এটাকে তারা ট্রিনিটি তত্ত্ব বলে। বিদেশী সহায়তাকে তারা বিনিয়োগে রূপান্তর করেছে। তারপর বিনিয়োগকে রফতানি সম্প্রসারণে কাজে লাগিয়েছে। যেটা আমরা অনেক ক্ষেত্রে বিবেচনাই করিনি।
এছাড়া নীতিশৃঙ্খলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উন্নয়ন সহযোগীসহ বিভিন্ন স্বার্থের দ্বারা এখানে উন্নয়ন নীতি প্রভাবিত হয়। একটা স্বাধীন দেশের সঙ্গে এটি একদমই বেমানান। যদি উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে নীতির ক্ষেত্রে নানা শর্তে আবদ্ধ থাকি, তাহলে আমাদের জন্য সংশ্লিষ্ট খাতে জোরালো উন্নয়ন নিশ্চিত করা কঠিন হবে। রাজনীতি আমাদের নীতি সক্ষমতাকে ব্যর্থ করেছে এবং আমাদের বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল করেছে। চীন, কোরিয়া, রুয়ান্ডা রাজনৈতিকভাবে চায়নি যে তারা বৈদেশিক সহায়তার ওপর স্থায়ীভাবে নির্ভরশীল থাকবে। ফলে তারা উন্নয়ন মডেলকে নিজের মতো করে গড়ে তুলেছে। এমনকি ভিয়েতনামও আমাদের পৃথক বার্তা দেবে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- সংস্কার প্রস্তাব
- সংস্কার কাজ