
জিয়ার মতো অন্য রাজনীতিবিদেরা কেন হতে পারেন না?
তারেক রহমানের জন্মদিনে আমি বাংলা আউটলুকে লিখেছিলাম ‘তারেক রহমান কি জিয়ার যোগ্য উত্তরসূরি হতে পারবে?’ এই লেখার পরই আসলে প্রশ্ন আসে, জিয়ার উত্তরসূরি হতে আসলে কী প্রয়োজন? কেন বারবার একই কথা বলি।
আচ্ছা, আপনাদের কাছে কিছু প্রশ্ন করি? জার্মানিতে ট্রেনে করে চললে খুব সাধারণ দৃশ্য বইপড়া। এমনকি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েও তাঁদের বই পড়তে দেখেছি। সেই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করি। আমি যতবার বিমানে উঠি, দেখার চেষ্টা করি কয়জন বই পড়ছে। বিশ্বাস করেন, সংখ্যাটা কখনো দুজনের বেশি হয় না।
বাংলাদেশের কোনো রাজনীতিকের হাতে বই দেখেছেন? আমি অন্তত দেখিনি। এখন আব্বাকে বললাম, জিয়াউর রহমানকে নিয়ে একটা স্মৃতি বলো তো। আব্বা বললেন, তিনি সব সময় বই পড়তেন। আমি তাঁকে যতবার দেখেছি, গাড়ির মধ্যেও বই পড়তে পড়তে যেতেন। এখানেই আসলে সব রাজনীতিবিদের সঙ্গে পার্থক্য দৃশ্যমান।
জিয়াউর রহমানের নিজের দিকের কয়জন আত্মীয়স্বজনকে আমরা চিনি? কে কে রাজনীতিতে আছে বা অবৈধ সুযোগ নিয়েছে বলে মিডিয়ায় কথা উঠেছে?
আমি কয়েকজন সিনিয়র মানুষকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। সবাই শুধু তাঁর ছোট ভাইয়ের নাম বলতে পারলেন। তা–ও অন্য কারণে। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকার সময় সেই ছোট ভাইয়ের ডবল প্রমোশনের কথা উঠেছিল, যা জিয়াউর রহমান অত্যন্ত ক্ষুব্ধভাবে বাতিল করে দিয়েছিলেন।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবের স্মৃতিকথায় একটা ঘটনার বর্ণনা আছে। চায়নার সামরিক অ্যাটাশে হিসেবে তাঁর থেকে ইন্টারভিউ নেওয়া হচ্ছে। তাঁর বাড়ি দিনাজপুর শুনে জিয়াউর রহমান একজনের নাম বলে জিজ্ঞেস করলেন, তাঁকে চেনেন? মাহবুব সাহেব বললেন, চেনেন না। পরে বের হয়ে এসে শোনেন এটা জিয়াউর রহমানের শ্বশুরের নাম ছিল এবং এই কথা শুনে তিনি মোটামুটি নিশ্চিত ছিলেন, তাঁর পোস্টিং হবে না। কিন্তু তাঁর পোস্টিং হয় এবং এই না চেনা ছিল একটা বড় যোগ্যতা। কিন্তু আমরা কী করি? নিজেকে প্রশ্ন করেন তো? একবার তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে রাগও করেছিলেন তাঁর আত্মীয়রা তদবিরের জন্য আসতেন বলে।
আমি নিজে প্রায় সব জেলায় ঘুরেছি। সব জেলার একটা নিজস্ব কালচার আছে, খুব সূক্ষ্ম পার্থক্য। তাঁদের সঙ্গে না কথা বললে বুঝবেন না। আর এটা সব থেকে ভালো বুঝেছিলেন জিয়াউর রহমান ও মাওলানা ভাসানী। তাঁরা হাঁটতেন। মানুষের কথা শুনতেন। প্রটোকল ভেঙে মানুষ তাঁর কাছে গিয়ে কথা বলতে পারত। আচ্ছা, এই দেশে কয়জন ডিসি বা এমপি এভাবে হেঁটে হেঁটে নিজের এলাকার সব জায়গায় গেছেন? প্রটোকলের মধ্য দিয়ে যে রাজ শ্রেণি প্রতিষ্ঠিত হয়, তাতে তাঁরা মানুষের কথা শুনবেন কী করে? গাড়িতে চরে ঘুরে হাত নাড়িয়ে আর যা–ই হোক, মানুষের কাছে যাওয়া সম্ভব নয়। সমস্যা জানা তো দূর অস্ত।
নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো। এই কথা আমরা সবাই বলি, কাজে প্রমাণ দেখাই কয়জন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানের সামনেই শিক্ষকেরা তাঁর প্রচণ্ড সমালোচনা করলেন। অন্য কেউ হলে কী হতো? সেই সমালোচকদের একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ডক্টর খন্দকার মোশাররফ হোসেন এখন বিএনপিরই একজন কান্ডারি। এ রকম চাটুকারমুক্ত দলই সেই সময়ের বিএনপি ছিল।
- ট্যাগ:
- মতামত
- রাজনীতিবিদ
- জিয়াউর রহমান