এ তুফান ভারী দিতে হবে পাড়ি
কেউ যদি বৈঠা হাতে নৌকা বেয়ে থাকেন তিনি জানবেন, নিস্তরঙ্গ নদীর কিনার থেকে ছেড়ে এসে তীব্র স্রোতের মধ্যে পড়লে নৌকা ঘুরে যেতে চায়। দক্ষ মাঝি তখন বৈঠা, স্রোত আর নৌকাকে সমন্বয় করে গতিপথ সোজা রাখতে ঘনঘন একবার ডানে আরেকবার বামে বৈঠা চালান। জুলাই-আগস্টের টালমাটাল সময়ের পরবর্তী সময়টি হচ্ছে সেই নদী। বর্তমান সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস হচ্ছেন এ নৌকার চালক। নিঃসন্দেহে তিনি একজন দক্ষ মাঝি। বিশ্বব্যাপী তার আকাশচুম্বী সুনাম থাকায় তাকে বলা যেতে পারে ছোট নৌকার বড় মাঝি। সাম্পান আর সমুদ্র দেখে দেখে তিনি অভ্যস্ত। তিনি কি সাম্পানকে সঠিক লক্ষ্যের তীরে পৌঁছাতে পারবেন? সাম্পানে করে খোলভর্তি নানা সওদা আসবে কি? তাতে থাকবে কি সোনালি, রুপালি মাছ? এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে জনগণকে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে-নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ‘এই ডুবেছে’, ‘ডুবল বুঝি’ বলে আওয়াজ তোলা লোক জড়ো হয়েছে অনেক। তারা আগের জনবিরোধী সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল।
তাদের চোখে বর্তমান সরকারের জন্য বিপদের আগাম আশঙ্কা মেলে ধরার অপচেষ্টা দৃশ্যমান। তবু আগের জনবিরোধী সরকারের সমর্থকদের নিরাশ হতে হবে; কারণ, অভিজ্ঞ মাঝি ঠিকই যাত্রী হিসাবে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পৌঁছে যাবেন সঠিক গন্তব্যে। এর কোনো বিকল্প নেই, থাকতে পারে না। বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য বিশ্বের বুকে গৌরবের সঙ্গে টিকে থাকতে হবে। টিকে থাকতে হলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো বহির্বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন নেতার দরকার; এ বিষয়টি সমালোচকরা বুঝতে চাইছেন না। বড় বড় দেশের নেতারা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের শুভাকাঙ্ক্ষী। বিশ্বের তাবত এ রিসোর্সফুল ফ্যান ক্লাবের গুণী-জ্ঞানী শুভানুধ্যায়ীদের শুভদৃষ্টি থাকলে অশুভ শক্তি টিকতে পারবে না। ঠিক সময়ে সূর্য পূর্বাকাশে উঁকি দেবেই। সেই শুভ সময়ের প্রতীক্ষায় আছে দেশবাসী। একটা একটা ফাড়া কেটে যাচ্ছে, তা তো সবাই দেখতেই পাচ্ছি। আমরা লক্ষ্য করছি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর মনোবল বেড়েছে। অর্থনৈতিক অবস্থার ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। ভোগ্যপণ্যের বাজারে আগের তুলনায় স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে একটি-দুটি ব্যতিক্রম ছাড়া সম্পর্ক উন্নত হচ্ছে এবং পাসপোর্ট-ভিসাবিষয়ক জটিলতা কেটে যাচ্ছে। আগের সুবিধাভোগীদের নানা অভিযোগ থাকলেও শেষ পর্যন্ত এসব টিকবে না। জনগণ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। ফাঁকিজুকির উন্নয়ন দিয়ে এখন হাততালি পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। আগামীতে যে সরকারই আসুক না কেন শাসন করার নামে অনৈতিক সুবিধা নিতে, তাদের জন্য সময় হবে কঠিন থেকে কঠিনতর।