কমিশনের সুপারিশ আন্তক্যাডার বৈষম্য কমাবে নাকি বাড়াবে
বেশ কয়েক বছর আগে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেছি। সেখানে মূলত সরকার ও রাজনীতির কাঠামোসংক্রান্ত একটি কোর্স পড়াতাম।
ওই কোর্স পড়ানোর সময় আমি বেশ কয়েকটি ব্যাচকে প্রায় নিয়মিতভাবেই একটি প্রশ্ন করতাম, তাদের ভবিষ্যতে কী ধরনের পেশায় যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে।
তাদের বেশির ভাগই একবাক্যে উত্তর দিত, প্রশাসন কিংবা পুলিশ ক্যাডারে তারা যেতে চায়। এর কারণ কী, সেটি জানতে চাইলে উত্তর দিত, তারা মূলত ক্ষমতা কিংবা প্রভাবের জন্য প্রশাসন বা পুলিশ ক্যাডারের প্রতি বিশেষ মনোযোগী।
তাদের উত্তরটি আরও আদর্শিক হবে—এমন প্রত্যাশা থাকা সত্ত্বেও প্রায় সবার কাছ থেকেই অভিন্ন উত্তর পেয়েছি। কিন্তু আমি তাদের লক্ষ করেছি, ক্ষমতা কিংবা প্রভাবের বিষয়টি তারা বেশি গুরুত্ব দিয়ে আমার কাছে বারবার প্রকাশ করেছে।
হয়তো এর পেছনে সুযোগ-সুবিধার প্রসঙ্গটিও থাকতে পারে। দেশের সেবা বা ন্যায্য কর্মকাল প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি কিংবা প্রত্যাশায় একজর ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার প্রশাসন ক্যাডারে যেতেই পারেন। কিন্তু বাস্তব প্রবণতা আসলেই ভিন্ন।
এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে চাকরির নিরাপত্তা ও জীবনযাত্রায় স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ক্যাডার সার্ভিসের ভালো বিকল্প বাংলাদেশে এ মুহূর্তে নেই। আর এ কারণে বর্তমান সময়ে শিক্ষার্থীদের বিসিএসের প্রবণতাও অত্যধিক বেড়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে একজন শিক্ষার্থীর প্রথম প্রত্যাশা হলো কীভাবে সে নিজেকে ক্যাডার সার্ভিসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে উপযুক্তভাবে প্রস্তুত করবে। আর সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় প্রথম দিন থেকেই একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি কীভাবে চাকরির প্রস্তুতি গ্রহণ করা যায়, সেটির দিকে বিশেষ নজর থাকে।
আমি আমার অসংখ্য শিক্ষার্থীকে ফেসবুক ইন্ট্রোতে স্বপ্ন হিসেবে প্রশাসন ক্যাডারে যাওয়ার বিষয়টি লিখে রাখতে দেখি। এমনকি তারা সব সময়ই স্বীকার করে এবং প্রকাশ করে যে তাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো প্রশাসন কিংবা পুলিশ ক্যাডার হওয়া।
দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশে আন্তক্যাডার বৈষম্য বিদ্যমান। এমনকি আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন কমিটি কিংবা অ্যাসোসিয়েশনের কথাও আমরা জানি। তারা অনবরত আন্তক্যাডার বৈষম্য দূরীকরণের দাবি জানিয়ে আসছে।
প্রশাসন বা পুলিশ ক্যাডার, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে পররাষ্ট্র, ট্যাক্স, কাস্টমস—এসব ক্যাডারের প্রতি প্রার্থীদের আগ্রহ অনেক বেশি। বিশেষ করে কয়েক বছর ধরে আমরা লক্ষ করেছি, বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পাওয়ার পর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেশাবদলের বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।
এমনকি সম্প্রতি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকারের উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ এবং অন্যান্য ২৫ ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রাখার সুপারিশ করা হবে।
আগে থেকেই টেকনিক্যালসহ বেশ কিছু ক্যাডার সার্ভিসে থাকা ক্যাডারদের মধ্যে এ নিয়ে একটা চাপা অভিমান রয়েছে। বিশেষ করে উপসচিব নিয়োগের সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ ও অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ নিয়োগ পেত। তাহলে কেন প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৭৫ শতাংশ পদ সংরক্ষণ থাকবে, তা নিয়ে একধরনের প্রশ্ন রয়েই গেছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বিসিএস ক্যাডার
- বৈষম্য দূর