বাস্তবতায় নতুন রাজনৈতিক দল
বাংলাদেশের রাজনীতি আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে ঘিরেই এই পর্যন্ত আবর্তিত হয়ে আসছে। এই দুই প্লাটফর্মের বাইরে নতুন কোনো রাজনৈতিক দলের সৃষ্টি হোক এমনটা বহুবছর ধরেই মানুষের আকাঙ্ক্ষা। জন আকাঙ্ক্ষা পূরণে কিছু উদ্যোগ নিতেও দেখা গেছে। বাস্তবতা হচ্ছে-বিগত ৫৩বছরে দুই দলেই ঘোরপাক খাচ্ছে রাজনীতি। জাতীয় পার্টি কিংবা জামায়াতে ইসলামির অবস্থান লক্ষণীয় হওয়ার পরও কিংবা আরও অনেক দলের সৃষ্টি হলেও কেউই এই দুই শক্তির কাছাকাছি পৌঁছাতে পারেনি। রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে,‘আমরা আর তোমরা’-এই হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতির মালিকানা।
বৈচিত্র্য এবং প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান তৈরির একটা ইতিবাচক সুযোগ তৈরি হয়েছে গত জুলাই- আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীকালে। যা এমন অভ্যুত্থানের পরবর্তী পর্যায়ে দেখা যায়-বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশে গোটা আন্দোলনই পরিচালিত হয়েছে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে থেকে এবং পরিচালকদের মধ্যে একক কোনো নেতৃত্ব ছিল না। শুধু তাই নয়,তাদের সাংগঠনিক ও ব্যক্তি পরিচয়ও জাতীয়ভাবে তেমন একটা ছিল না। এই আন্দোলনকে বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়,বাংলাদেশে নতুন একটা রাজনৈতিক পরিবেশের সূচনা হয়েছে। আন্দোলনের সাফল্যের পরপরই বোঝা গিয়েছিল,নতুন কিছু একটা প্ল্যাটফরম হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে।
সেই আলোকেই- এই সূচনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া কতটা সম্ভব হবে কিংবা নতুন আঙ্গিকে কোনো রাজনৈতিক দলের উদ্ভব হলেও তারা কতটা সফল হবে,এমন পর্যালোচনা হতেই পারে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী প্রথম সারির নেতৃবৃন্দের দেওয়া ভাষ্যমতে- তারা শিগগিরই নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছেন। আরও খতিয়ে দেখলে তাদের এই উদ্যোগ যে ইতোমধ্যে এগিয়ে যাচ্ছে, তাও প্রতীয়মান হয়। সম্ভবত ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নতুন দলের ঘোষণা করতে যাচ্ছে, নবীন রাজনীতিবিদগণ। তাদের দ্বারা গঠিত নাগরিক কমিটি সেই কাজটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যে নাগরিক কমিটিতে ছাত্রদের নেতৃত্বে দেখা যায়।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরের উদ্যোগগুলোর সঙ্গে তাদের উদ্যোগের তুলনা করলে কিছুটা ব্যতিক্রম চোখে পড়ে। বিএনপি সৃষ্টিকালে নতুন দল করার মতো ক্ষেত্র ছিল বিশাল। স্বাধীনতা বিরোধীরা তখন ছিল রাজনীতির বাইরে। সাংবিধানিকভাবে তাদের রাজনীতি করার সুযোগ ছিল না। ফলে মুসলিম লীগ,পিডিপি ও নেজামে ইসলামীর মতো দলের কর্মীদের পাওয়া সহজ হয়েছিলো।অন্যদিকে স্বাধীনতা লাভের পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠিত বিশাল রাজনৈতিক সংগঠন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বা জাসদের নেতাকর্মীদের মধ্যেও হতাশা ও নেতৃত্বের কোন্দল ছিল প্রকাশ্যে। আওয়ামী লীগেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শূন্যস্থান পূরণ করার মতো ওই মাপের নেতা ছিল না।
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ন্যাপও ছিল অনেকটা ছত্রভঙ্গ। প্রবীণ এই নেতার অনুসারী মশিউর রহমান জাদু মিয়ার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নেতাদের বড় একটা দেয়াল তৈরি হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে। কারণ জাদু মিয়া মুক্তিযুদ্ধ বিরোধিতা করে তাদের থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। ফলে ভাসানী ন্যাপেরও বড় একটি অংশকে জিয়াউর রহমান কাছে টানতে পেরেছিলেন।
আর বিভিন্ন মতাবলম্বী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে মিশ্রধারার দল গঠন করতে সক্ষম হয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। তাকে সহযোগিতা করেছিল ক্ষমতায় থাকাটা।তিনি ক্ষমতার সুযোগটি গ্রহণ করেছেন।দেশে সব রাজনীতি বন্ধ করে দিয়ে তিনি নিজে সরকারি কাজের উছিলায় চষে বেরিয়েছেন আর দল সংগঠিত করার কাজ করেছেন।যে মুহূর্তে তিনি ঘরোয়া রাজনীতি চালু করলেন, তার আগেই তাঁর দলীয় সংগঠন মোটামুটি দাঁড়িয়ে গেছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- রাজনীতিতে নতুন দল