মধুপুর শালবনের জন্য দায় ও দরদ
বর্তমানে কেবল টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা এবং ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলায় বিস্তৃত ক্ষয়িষ্ণু মধুপুর শালবন পৃথিবীর এক প্রাচীন পত্রঝরা অরণ্য।'
‘গড়’ হিসেবে পরিচিত এই বনের আদিবাসিন্দা মান্দি (গারো) ও কোচ-বর্মণ জাতি। মান্দি ভাষায় এই বন ‘বলসাল ব্রিং’ এবং মধুপুর গড় ‘হা.বিমা’ নামে পরিচিত। ব্রিটিশ উপনিবেশিক আমলে ফ্রান্ক বি সিমসন শালবন থেকে উপকূল দেশের নানাপ্রান্তে বন্যপ্রাণী শিকার করে বেরিয়েছেন। তার সেসব নির্মম শিকার কাহিনি লন্ডন থেকে ‘দ্য লেটার্স অন স্পোর্টস ইন ইস্টার্ন বেঙ্গল’ নামে বিশাল এক বই প্রকাশিত হয়। ওই বইতে বন্যপ্রাণী ভরপুর শালবনের বহু স্মৃতি আছে। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার বিখ্যাত জমিদার শ্রী সূর্যকান্ত আচার্য বাহাদুর মধুপুর শালবনে তার বহু শিকার কাহিনি লিপিবব্ধ করে গেছেন এবং সেসব শিকার কাহিনি ১৩১৩ বাংলায় লেখা। সেসব কাহিনিতে মধুপুর শালবনের যে চিত্র পাওয়া যায় তা এক দুর্ভেদ্য জঙ্গল বোঝায়। মধুপুর গড় কেবল এক পত্রঝরা শালবন নয়। এর বাস্তুতন্ত্র ধানের পাশাপাশি পাট, আনারস, কলা, কাঁঠাল, কচু, আখসহ নানান শস্য ফসল প্রতি বছর বাংলাদেশকে জোগান দেয়।
এ গড়ের মধুপুরের আনারস, চামারা ধান, কালিয়াকৈরের ধনীর চিড়া, টাঙ্গাইল শাড়ি, তুলসীমালা ধান, মুক্তাগাছার মন্ডা, জামালপুরের নকশিকাজ, বাবুরহাটের তাঁত বাংলাদেশের অনন্য ভৌগোলিক নির্দেশনা। মধুপুর শালবনের বৈচিত্র্য ও বৈভব আজ বিদীর্ণ এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অধিকার লুণ্ঠিত। মধুপুর শালবনের এ করুণ পরিণতির জন্য দায়ী রাষ্ট্র ও নয়াউদারীকরণ ব্যবস্থার বৈষম্যমূলক নীতি, দৃষ্টিভঙ্গি ও উন্নয়ন কর্মকা-। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের বহুমুখী দাবি উঠেছে। স্মরণ রাখা জরুরি, এই মধুপুর শালবনেই দেশের প্রথম সংবিধান রচিত হয়েছিল, কিন্তু নিদারুণভাবে শালবনের অধিকারকে আড়াল করা হয়েছে। মধুপুর শালবনের ভূমিপ্রশ্ন, আদিবাসী অধিকার, বাণিজ্যিক বাগান, আগ্রাসী গাছের বাগান, ইকোপার্কসহ বহু প্রশ্ন এখনো অমীমাংসিত। আমরা আশা করব, রাষ্ট্র মধুপুর শালবনের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে। মহামান্য হাইকোর্ট ২০১৯ সালে মধুপুর শালবনের ক্ষেত্রে যেসব রায় দিয়েছে সেসব বিবেচনায় নিয়ে সর্বস্তরের সর্ববর্গের জনতার প্রস্তাব ও অংশগ্রহণরে ভেতর দিয়ে এক জনমুখী ও শালবনবান্ধব উদ্যোগ গ্রহণে তৎপর হবে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- শালবন বিহার
- শালবন