আরএসএসের শত বছরে দক্ষিণ এশিয়ায় যে ‘আশঙ্কা’
শেষ হতে চলেছে আরেকটি বছর। দক্ষিণ এশিয়ায় ২০২৪ সালের সবচেয়ে বড় ঘটনা কী? নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের গণ-অভ্যুত্থান। আঞ্চলিক বড় বড় থিঙ্কট্যাংক যতই উদাসীন থাকার চেষ্টা করুক, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় একটি ভূকম্পন ঘটিয়েছে; অন্তত ভারতের বিদেশনীতিতে তো বটেই। তবে ভারতীয় সমাজের দিক থেকে এ বছরের বড় ঘটনা নিশ্চয়ই ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ’ বা আরএসএসের ১০০ বছরে পদার্পণ।
বিজেপির তৃতীয় মেয়াদে দিল্লি বিজয় এবং ভারত-যুক্তরাষ্ট্র উদীয়মান মৈত্রী এ সময়ে এমন এক বাস্তবতা তৈরি করেছে যে আরএসএসের সেঞ্চুরি উৎসবের দিকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যদেরও মনোযোগ দিতেই হচ্ছে। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় হিন্দুত্ববাদী জনসমাজ সময়টা উদ্যাপন করতে চাইছে।
তবে এ রকম যাবতীয় ‘উদ্যাপনের’ মধ্যে এ প্রশ্নও উঠছে, দক্ষিণ এশিয়ার সমাজ ও রাজনীতিকে ধর্মবাদী এই দলের এক শতাব্দীতে ভূমিকা কী ছিল? আসন্ন দিনগুলোতে তাঁরা ভারতকে কোথায় নিয়ে যেতে চায়? তা ছাড়া আরএসএসের সেঞ্চুরিতে আঞ্চলিক পরিসরে উৎকণ্ঠারই-বা আবহ কেন?
যখন ভারতীয় সমাজ অনেকখানি করায়ত্ত
যেকোনো সংগঠনের শত বছর পূর্তির সুযোগ অনেক বড় অর্জন। ১৪৪ কোটি মানুষের সমাজ ও রাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন হয়ে সেটি উদ্যাপন দুর্দান্ত এক সফলতা।
১৯২৫ সালের সেপ্টেম্বরে এই ‘সংঘের’ জন্ম। পরাধীন দেশে আবির্ভাব হলেও স্বাধীনতার সংগ্রামে আরএসএস সংগঠকদের অবদান উল্লেখযোগ্য নয়। কংগ্রেসের সঙ্গে তুলনীয় তো নয়ই। তবে ৯৯ পেরিয়ে ১০০ উদ্যাপনের সময় ভারতীয় সমাজ তাদের অনেকখানি করায়ত্ত; সীমান্তের বাইরেও বিস্তৃত তাদের চোখ।
সবচেয়ে বড় বিষয়, শত বছরের ফলক ছোঁয়ার সময়ে আরএসএস একটি সংগঠনের চেয়েও বেশি কিছুতে পরিণত হয়ে গেছে। বিজেপি তাদের বিশাল দেহের এক সামান্য অংশমাত্র।
বাকি শুধু ‘হিন্দুরাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠা
জন্মকালে আরএসএসের লক্ষ্য ছিল হিন্দু পুনর্জাগরণ। ঔপনিবেশিক শাসনমুক্তির সঙ্গে তারা ধর্মীয় জাগরণকে যুক্ত করে এগোতে চেয়েছে। শুরু থেকে হিন্দুরাষ্ট্রও গড়তে চেয়েছে তারা; এখন যা সামনের বড় লক্ষ্য।
ক্রমাগত সফলতা সংঘকে বাড়তি আত্মবিশ্বাসী করেছে। আগামীতে তাদের চাওয়া অনেক কিছু। সংগঠকদের অতীত স্মৃতিচারণা এবং ভবিষ্যৎ নির্দেশনার এই মূহূর্তে সংঘ পরিবারের সূচনাকালের দীর্ঘ সময়ের গুরু এম এস গোলওয়ালকরের দর্শনের কথা বারবার আসছে, যিনি নিজে জার্মান নাৎসিদের বিশেষ ভক্ত ছিলেন এবং ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্রে রূপান্তরের ধারণাবীজ তাঁর দ্বারাই বপিত হয়। সে লক্ষ্যে এগোতে এগোতে প্রায় ১৯টি ভারতীয় রাজ্যে সংঘ পরিবার একক বা জোটগতভাবে এখন ক্ষমতায়। লোকসভায় তাদের রয়েছে ২৪০টি আসন। কংগ্রেসের যেখানে ৯৯ মাত্র।
সাংগঠনিক আকারে আরএসএস পরিবার এখন বিশাল বটবৃক্ষের মতো। বিশ্ব হিন্দু পরিষদসহ সহযোগী সংগঠন আছে অন্তত ৪০টি। ‘অফিশিয়াল’ সহযোগীদের বাইরেও অনেক সংগঠন মিত্র হিসেবে কাজ করে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- দক্ষিণ এশিয়া
- আশঙ্কা
- আরএসএস