সরকার নিজেও মূল্যায়ন করুক তার কাজের
নতুন একটি সরকারের তিন মাস কিংবা ১০০ দিনের ‘পারফরম্যান্স’ নিয়ে আলাদা করে আলোচনার অবকাশ থাকে। সরকারের তরফ থেকেও ১০০ দিনের কার্যসূচি ঘোষণার রীতি রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার অবশ্য তেমন ঘোষণা দেয়নি। কোনো স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে দেশ পরিচালনার দায়িত্বও নেননি তারা। কোটা আন্দোলন ঘিরে মাত্র ক মাস আগে নতুন করে ক্ষমতায় বসা একটি সরকারের পতনই ঘটে যাবে, সেটাও কারও হিসাবের মধ্যে ছিল না। তবে পতনের পূর্বশর্তগুলো পরিপূর্ণভাবে বিরাজ করছিল। এ অবস্থায় রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানে সরকারের পতন ঘটলে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়, তা পরিপূরণে একটি সরকার গঠিত হয়, যা এক নতুন অভিজ্ঞতা। এর আগে দেশে এমন ধারার আন্দোলন হয়নি আর এ ধরনের সরকারও গঠিত হয়নি। সরকারটি অবশ্য শপথ নিয়েছে হাসিনা সরকারের রেখে যাওয়া রাষ্ট্রপতির কাছেই। এর আগে এ বিষয়ে আপিল বিভাগের মত নেওয়া হয়।
গণ-অভ্যুত্থানের পর ভিন্ন উপায়েও সরকার গঠিত হতে পারত বলে কেউ কেউ মনে করেন। তাতে সরকারটি অধিকতর কর্তৃত্ব নিয়ে কাজ করতে পারত বলে তাদের ধারণা। কিন্তু যেটা হয়নি, তা নিয়ে কথা বলে এখন বোধহয় ফায়দা নেই। ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন ঘটে গেলে একটা অপ্রস্তুত অবস্থায় যা ভালো মনে হয়েছে, করা হয়েছে সেটাই। তাতে বিদ্যমান সংবিধান অনুসরণের প্রয়াস আছে বলেই মনে হচ্ছে। সংবিধানের অনেক বিধিবিধান নিয়ে বিতর্ক অবশ্য আগে থেকেই ছিল। মূল সংবিধানও অবিতর্কিত নয়। অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কার কমিশন করেছে, এর মধ্যে আছে সংবিধান সংস্কার কমিশনও। মোট ১০টি কমিশন করেছে সরকার। নির্দিষ্ট সময়ে তাদের সুপারিশ দেওয়ার কথা। সেগুলো নিয়ে আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে সরকার। যেসব সুপারিশে সব পক্ষ একমত হবে, সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকার যথেষ্ট সময় না পেলে তা বাস্তবায়ন করবে পরবর্তী সরকার। তেমন একটি অঙ্গীকারপত্রে সব রাজনৈতিক দলের সম্মতি নিয়ে রাখা হবে সেক্ষেত্রে। দলীয় রাজনৈতিক সরকারের অঙ্গীকার ভঙ্গের উদাহরণ তো কম নেই। অবিশ্বাস তীব্রভাবেই আছে যে, কোনো দলীয় সরকার সর্বদলীয় অঙ্গীকার রাখবে না। এরশাদ পতনের আন্দোলনে গৃহীত তিন জোটের রূপরেখা বাস্তবায়ন করেনি বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগ সরকার। অতঃপর ওয়ান-ইলেভেন সরকার সংস্কারে সবিশেষ জোর দিলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসা হাসিনা সরকার চলেছে এর বিপরীতে। বর্তমান সংকটের জন্য রাজনৈতিক সরকারের অঙ্গীকার ভঙ্গের প্রবণতাই মূলত দায়ী বলে মনে করা হয়। সেজন্যই বলা হচ্ছে, ইউনূস সরকারকে জরুরি সংস্কারগুলো সেরে যেতে হবে। জাতীয় নির্বাচন লক্ষ্য অবশ্যই; কিন্তু সংস্কারের পথেই সেদিকে যেতে হবে।