পাঠচক্র থেকে গণ-অভ্যুত্থানে
ভাবিনি কখনো সামনের সারিতে এসে রাজনীতি করব। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরু থেকে রাজনীতিতে আগ্রহ ছিল। যুক্ত ছিলাম প্রথম কোটা আন্দোলনে। সামাজিক একটা পরিবর্তন চাইতাম। যখন প্রথম বর্ষে পড়ি, ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনে আমার এক সহপাঠীকে আটক করা হয়। ঘটনাটি আমাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে।
২০১৯ সালে নুরুল হকের প্যানেল থেকে ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিই। কিন্তু প্রথাগত ধারার রাজনীতি কখনো সেভাবে আমাকে আকর্ষণ করেনি। তাই নুরুল হকের সংগঠনে পরে আর যুক্ত হইনি। তবে ক্যাম্পাসের যেকোনো ন্যায্য আন্দোলনে সব সময় সোচ্চার ছিলাম। ২০১৯ সালে আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে যে আন্দোলন হয়, সেখানে ছিলাম। সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আমার ভূমিকা ছিল। ২০২০ সালে সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্যের সামনে নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী ৫৫ দিন কর্মসূচি পালন করেন। সেখানে আমরা অড্ডা দিয়েছি, মাহফুজ ভাইয়ের (মাহফুজ আলম) সম্পাদনায় কাঁটাতার নামে পত্রিকা বের করেছি। ওই সময় আমার ভেতরে একটা পরিবর্তন আসে। বুঝতে পারি, নতুনভাবে শুরু করতে হবে। তবে কী করব, তা জানতাম না। এ সময় পৃথিবীতে করোনা শুরু হলো।
করোনার পর ক্যাম্পাসে ফিরে দেখলাম, আবরার হত্যাসহ আরও কিছু নিপীড়নমূলক ঘটনায় ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি যেভাবে নাজুক হয়েছিল, তারা সেটা কাটিয়ে উঠেছে—ছাত্রবান্ধব কর্মসূচি দিচ্ছে, লাইব্রেরি করছে ইত্যাদি। অনুভব করলাম, ছাত্র আন্দোলন হারিয়ে যাচ্ছে। তাই একটু পড়াশোনার মধ্যে ঢুকলাম। এই পর্যায়ে মাহফুজ ভাইয়ের নেতৃত্বে অনেকটা গোপনেই শুরু হলো গুরুবার আড্ডা। রাজনৈতিক সংস্কৃতি, ছাত্র আন্দোলন, ধর্ম প্রভৃতি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা আর তর্ক—এভাবেই আড্ডাটা চলছিল।
২০২২ সালে আবরারের স্মরণসভায় হামলা হয়। এ ঘটনায় সে সময় ছাত্রদের পাশে কেউ দাঁড়ায়নি। একপর্যায়ে ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি নামে নতুন সংগঠন করলাম। এর মধ্যে ২০২৪ সালের ৬ জানুয়ারি কোনো বাধা ছাড়াই ভোটারবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এল। সবার মধ্যেই হতাশা।
আমি তখন টিউশনি করতাম, কোচিংয়ে ক্লাস নিতাম। তবে মূল লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে ছাত্রশক্তির সাংগঠনিক বিস্তার ঘটানো। আমরা হাল ছাড়িনি। নানা ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছি। সংগঠনের ব্যানারে না করে সাধারণ ছাত্রদের ব্যানারে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, ইফতার মাহফিল, ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতি, নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে কর্মসূচি—এসব করেছি। আমাদের চিন্তা যত না ছিল সংগঠন করা, তার চেয়ে বেশি ছিল সংগঠনের হাত ধরে একটা রাজনৈতিক পরিসর রচনা এবং ছাত্রদের সেখানে যুক্ত করা। এ জন্য আমরা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ওপর জোর দিই। মাহফুজ ভাই, আসাদ ভাই (ভূঁইয়া মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান) মিলে পূর্বপক্ষ ও রণপা নামে পত্রিকা বের করেন। পাশাপাশি চলে গুরুবার আড্ডা, রসিক আড্ডা নামের পাঠচক্র এবং ছয়চক্র নামের একটি একাডেমিক আড্ডা। আরও ছিল রাষ্ট্রকল্প লাইব্রেরি। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ভেতর দিয়ে এগুলো আদতে ছিল লড়াই।