আন্তঃরাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড ও বিশ্ব রাজনীতি
খালিস্তানের স্বাধীনতাকামী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরকে হত্যার দায়ে কানাডা আবারও ভারতকে দোষারোপ করেছে। ১৩ অক্টোবর কানাডা সরকারের তদন্তকারী সংস্থা নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে ভারতীয় হাইকমিশনার সঞ্জয় কুমার বর্মার জড়িত থাকার কথা বলেছে। তদন্ত সংস্থা অবশ্য নিজ্জর হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার ব্যাপারে সঞ্জয় কুমার বর্মাকে কূটনৈতিক ভাষায় ‘স্বার্থ সম্পর্কিত ব্যক্তি’ বলে উল্লেখ করেছে। এ ঘোষণার ঠিক পরদিন ১৪ অক্টোবর কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘বিদেশি হস্তক্ষেপের অভিযোগ’ সংক্রান্ত কমিটিতে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার তথ্যপ্রমাণ দেওয়া হলেও নয়াদিল্লি তা অস্বীকার করছে।’ ভারত তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করছে বলেও ট্রুডো অভিযোগ করেন। ভারত কানাডার এ অভিযোগকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অযৌক্তিক’ বলেছে। কানাডার তথ্যপ্রমাণ দেওয়ার কথা অস্বীকার করে ভারত উলটো অভিযোগ করেছে, বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও কানাডা সরকার নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ দেখায়নি। ভারত কানাডার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য কানাডার পক্ষ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত গুরুতর। ভারতকে বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু ভারত সে পথে যায়নি। ওদিকে কানাডার বিচারব্যবস্থায় পূর্ণ আস্থাশীল জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। এ ঘটনার জেরে কানাডা ভারতের হাইকমিশনার সঞ্জয় কুমার বর্মাসহ ছয়জন ভারতীয় কূটনীতিককে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতও পালটা একই ব্যবস্থা নিয়েছে।
মার্কিন সংবাদপত্র দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, কিছুদিন আগে সিঙ্গাপুরে কানাডার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নাটালি ড্রোনিনের সঙ্গে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের এক গোপন বৈঠক হয়। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেন কানাডা-ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টারা। কানাডার উপদেষ্টা ভারতীয় কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে পাওয়া সব প্রমাণ দোভালের কাছে তুলে দেন। ওই বৈঠকে কানাডার প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, তদন্ত করতে গিয়ে যেসব প্রমাণ তাদের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের হাতে এসেছে, তা থেকে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, হরদীপ সিং নিজ্জরকে হত্যা এবং অন্যান্য শিখদের ওপর হামলার জন্য ভারতের মহারাষ্ট্রের সাবেক মন্ত্রী বর্ষীয়ান নেতা বাবা সিদ্দিকির হত্যাকারী বহুল আলোচিত লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের মতো কুখ্যাত সন্ত্রাসীর বেশকিছু সদস্যকে কাজে লাগিয়েছে ভারত। তাদের অভিযোগ, ভারতের উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা কানাডায় খালিস্তানপন্থিদের দমনে ভয়ংকর সন্ত্রাসীদের সাহায্য নিচ্ছে। তারা আরও অভিযোগ করেন, দক্ষিণ এশিয়ার কমিউনিটিকে, বিশেষ করে খালিস্তানপন্থি কার্যকলাপে টার্গেট করার জন্য এ সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর সাহায্য নিচ্ছে ভারত। ওই বৈঠকে কানাডার তরফে ভারতকে জানানো হয়, ছয়জন ভারতীয় কূটনীতিকের বিরুদ্ধেও শিখদের হত্যা বা হুমকি দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। এতদসংক্রান্ত যাবতীয় প্রমাণ হস্তান্তর করার পরও মানতে চাননি ভারতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা দোভাল। প্রথমে লরেন্স বিষ্ণোইকে চিনতেই চাননি দোভাল। তবে পরে মেনে নেন, জেলে বসেও যে কোনো স্থানে হিংসাত্মক তৎপরতা চালানোর ক্ষমতা রাখে এ কুখ্যাত গ্যাংস্টার। তবে কলকাতা থেকে প্রকাশিত বাংলা পত্রিকা সংবাদ প্রতিদিনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা দোভাল সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, ‘প্রমাণ যাই থাকুক না কেন, কানাডায় কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রমে ভারতের যুক্ত থাকার দাবি মানা হবে না।’ এর আগেও একাধিকবার কানাডার অভ্যন্তরে হিংসা ছড়ানোর প্রশ্নে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে কানাডা। ভারত তা বরাবরের মতো অস্বীকার করে আসছে। ওয়াশিংটন পোস্ট দাবি করেছে, পর্যাপ্ত প্রমাণ নিয়েই ভারতের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন কানাডার প্রতিনিধিরা।
- ট্যাগ:
- মতামত
- হত্যাকাণ্ড
- বিশ্ব রাজনীতি