গ্রাম ও শহরে যক্ষ্মাসচেতনতা বাড়াতে হবে

প্রথম আলো ডা. শাহরিয়ার আহমেদ প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৩:২৩

লোকসংগীতের জন্য বিখ্যাত বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিম, হাসন রাজা কিংবা রাধরমণ দত্ত—সবাই সুনামগঞ্জের মানুষ। সেই সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকার এক শিশু সাব্বির (ছদ্মনাম), বয়স ১০। খেটে-খাওয়া মজুর পরিবারের সন্তান সাব্বির। যেখানে খেলাধুলা নিয়ে তার ব্যস্ত থাকার কথা, সেখানে চার মাসের বেশি সময় যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হয়ে কষ্ট ভোগ করছে শিশুটি। সাব্বিরের দিনমজুর বাবা মোহাম্মদ ফারুক আসলে যক্ষ্মায় আক্রান্ত ছিলেন। অভাব–অনটনের মধ্যে সাব্বিরের চিকিৎসার জন্য যেতে হয় সেই সুদূরের সিলেটে।


সাব্বিরের মতো দেশে অসংখ্য শিশু যক্ষ্মারোগের ঝুঁকিতে আছে। বড়দের মতো শিশুদেরও যক্ষ্মা হয়। দেশে যক্ষ্মার চিকিৎসা ও ওষুধ বিনা পয়সায় দেওয়া হচ্ছে, তা সাব্বিরের মা-বাবার মতো অনেক অভিভাবকই জানেন না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২১ সালের তথ্যমতে, বাংলাদেশে শনাক্ত মোট যক্ষ্মা রোগীর ১০ থেকে ১২ শতাংশ শিশুরোগী হওয়ার কথা।


এ হিসাবে দেশে যক্ষ্মায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বছরে ৩০ হাজারের মতো হওয়ার কথা, যেখানে আমরা শনাক্ত করছি মাত্র ১০ হাজার। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিশু, কিশোর ও তরুণেরা যক্ষ্মার ঝুঁকিতে আছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জনশুমারি ও গৃহগণনা জরিপ ২০২২-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৯ শতাংশ (প্রথম আলো, ১৪ আগস্ট, ২০২৩)। সেই হিসাবে বলা যায়, শহর কিংবা গ্রামে সব জায়গায় যক্ষ্মায় আমাদের শিশুরা ভীষণ ঝুঁকির মধ্যে আছে।


গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, শিশুদের মধ্যে যক্ষ্মার লক্ষণ সুনির্দিষ্ট করে পাওয়া যায় না। আবার অনেক সময় অন্য সব রোগের লক্ষণের সঙ্গে যক্ষ্মার লক্ষণ মিলে যায়। একেবারে কম বয়সী শিশুরা সাধারণত কফ দিতে পারে না বলে কফ পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। সচেতনতার অভাবে সব যক্ষ্মা রোগীকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না।



একইভাবে যক্ষ্মায় আক্রান্ত অনেক শিশু শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছে। আমরা ১৭ মাসের এক শিশু সাবরিনার (ছদ্মনাম) কথা বলতে পারি। দ্বীপজেলা ভোলা থেকে আসা সাবরিনা মা-বাবা দেখেন, সাবরিনার ঠান্ডা-কাশি কোনোভাবেই সারছে না। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বারবার গেলেও কোনো পথই খুঁজে পাচ্ছিলেন না। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষা করালে সাবরিনার যক্ষ্মার জীবাণু ধরা পড়ে। দ্রুত চিকিৎসা হয় সাবরিনা। মা–বাবা সচেতন ছিলেন বলেই সাবরিনা দ্রুত চিকিৎসা পেয়েছে।


দেশের নানা প্রান্তে চালু করা হয়েছে আইসিডিডিআরবি যক্ষ্মা নির্ণয় ও চিকিৎসাকেন্দ্র। এসব কেন্দ্র থেকে সপ্তাহে সাত দিনই যক্ষ্মা নির্ণয় ও চিকিৎসার সুযোগ আছে। এসব যক্ষ্মা স্ক্রিনিং সেন্টার শহর ও গ্রামের মানুষের জন্য ওয়ান স্টপ সেন্টার হিসেবেই কাজ করছে। যেসব রোগী প্রাইভেট প্র্যাকটিশনারের কাছে যাচ্ছেন, তাঁরাই যক্ষ্মার স্ক্রিনিং সেন্টারে আসেন। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা বিনা মূল্যে করানোর সুযোগ পাচ্ছেন। নিরীক্ষার পরে রোগ শনাক্ত হলে বিনা মূল্যে সরকারি ওষুধ দেওয়া হয় সবাইকে।


শিশুদের যক্ষ্মা নির্ণয়ে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি) নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। শিশুর যক্ষ্মা নিয়ে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির অধীন আইসিডিডিআরবি পরিচালিত ইউএসএআইডি’স অ্যালায়েন্স ফর কমব্যাটিং টিবি ইন বাংলাদেশ (এসিটিবি) কার্যক্রম দেশজুড়ে সচেতনতাসহ নানা গবেষণার কাজ করছে। শিশুদের যক্ষ্মা স্ক্রিনিং, শনাক্তকরণ, নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বিকাশ, হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে কার্যকর টুল ব্যবহারের জন্য কাজ করছে।


সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধপথ্য বিনা মূল্যে দিচ্ছে। শিশুর যক্ষ্মায় আক্রান্তের বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে হবে। এখনো গ্রামের মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়ে গেছে।
জীবাণুযুক্ত ফুসফুসীয় যক্ষ্মা রোগীর সঙ্গে নিয়মিত বসবাস করে শিশুদের যক্ষ্মা হতে পারে। আবার কফে জীবাণুযুক্ত যক্ষ্মা রোগীর (যেমন মা-বাবা, ভাই–বোন, নিকটাত্মীয়, প্রতিবেশী, শিক্ষক ও বন্ধুবান্ধব) সঙ্গে এক বাড়িতে বাস করলে বা ঘন ঘন সংস্পর্শে এলে যক্ষ্মার ঝুঁকি বাড়ে। এ ছাড়া পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, যারা মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে, তারাও ঝুঁকিপূর্ণ। যেসব রোগে শিশুর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়, সেই রোগে আক্রান্ত শিশুরাও ঝুঁকিপূর্ণ। যক্ষ্মা যে শুধু নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুদের হচ্ছে, বিষয়টি এমন নয়; মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের শিশুরাও যক্ষ্মার ঝুঁকিতে আছে। ফুসফুসীয় যক্ষ্মা রোগীর সঙ্গে বসবাস করা শিশুর যক্ষ্মার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে যক্ষ্মা প্রতিরোধক ওষুধ খাওয়াতে হবে। শিশুকে জন্মের পর বিসিজি টিকা দিতে হবে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী অন্যান্য টিকা সময়মতো দিতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। এতে শিশুর প্রয়োজনীয় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের শিশুর সামগ্রিক স্বাস্থ্য ও পুষ্টির দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও