ছোটো ছোটো দুঃখ-কষ্ট
কেউ দেখে, কেউ দেখে না ছোটো ছোটো দুঃখ-কষ্ট। এ-কথাগুলো প্রচলিতই, তবে সবসময় না। যখন কষ্টগুলো বানের জলের মতো আসে তখন তা ভয়াবহ আকার নেয়। কিন্তু আমরা যারা রাজধানীবাসী, গ্রামগঞ্জের লোকদের নিত্যদিনের দুর্ভোগ নিয়ে তেমনভাবে মেতে উঠি না। কেউ কিউ বুঝতেও পারেন না যে তারা নিদারুণ অভাবে দিন কাটাচ্ছে। সরকার অবশ্য এটা বোঝে, কিন্তু সরকারের সীমাবদ্ধতা যেমন আছে তেমনি জনপ্রশাসনও তেমনভাবে অ্যাক্ট করেন না। তারা গদাই লস্করি তালে চলেন। ততদিনে দুঃখগুলো বানের জলে ভেসে যায়। যাওয়ার সময় গরিব মানুষের যা কিছু ছিলো তাও ছিনিয়ে নিয়ে যায় দস্যুর মতো।
বানভাসির কারণ উজানের দেশ থেকে তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ড্যামগুলোর বাঁধের দরোজাগুলো একযোগে খুলে দিয়েছিলো এবার, সেই জলে ভেসে গেছে সব কিছু। এতেই ভাটির বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ডুবে যায় পানির নিচে। হাহাকার ওঠে বন্যার্ত মানুষের কণ্ঠে। আমরা সে গলার স্বর শুনেছি, ত্রাণের জন্য দৌড়ঝাপ করেছি টাকা-কড়ি, কাপড় চোড়, শুকনো খাবার, ঔষধ-পত্র। সেগুলো ছাত্র-জনতা নিয়ে গিয়ে বিতরণ করেছে। দুঃখগুলো এ-ভাবে আমরা ভাগ করে নিয়ে শেয়ার করেছি। আবারো ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে বাংলাদেশ।
ঢাকা মহানগরে যারা বাস করেন তারা জানেন জলবিদ্যুতের লীলাখেলা। আকাশের বিজলির মতোই আজকাল পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের বিদ্যুৎ লুকোচুরি খেলে। যখন উৎপাদন ছিলো ৪/৫ /৬ হাজার মেগাওয়াট, তখনও যেমন ছিলো, সেই অবস্থা থেকে কুইক রেন্টাল ও ভারতীয় বিদ্যুৎ এনেও আজ সামাল দেয়া যায়নি। তাই বিদ্যুতের লীলা চলছেই। শুধু কি তাই? বিদ্যুৎ বিলের কারসাজি আরো রকমারি আয়োজনে চলছে। ডিম্যান্ড চার্জ, মিটার চার্জ কেন পিডিবি আরোপ করে নিচ্ছেন, তা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। মিটার তো আমি কিনে দিয়েছি। কেবল সংযোগ দিয়ে গেছে পিডিবির লোকেরা। আবার ডিমান্ড চার্জ কেন প্রতিমাসেই দিতে হবে? যখন বিদ্যুতের জন্য ডিমান্ড করেছিলাম, তখনই তো মোটা অংকের চার্জ তারা নিয়েছে।
সেটা কেন চক্রবৃদ্ধি করে প্রতিমাসেই নেয়া হচ্ছে? সেটা কি বেসরকারি রেন্টাল, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদকদের তাদের উৎপাদনের জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের জন্য? এই যে ক্যাপাসিটি চার্জ নামক লুটের উইংস খোলা হয়েছে, এই কুবুদ্ধির মধ্যেই কতো লাখ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে, সে হিসাব কি আমরা পুরোপুরি জানি? ভারতের আদানিকে তার ক্যাপাসিটির জন্য প্রতিমাসেই ক্যাপাসিটি চার্জ দিচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য তারা ওই কেন্দ্র স্থাপন করেছে, এটাই বলা হয়। আমাদের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করে টাকা নিচ্ছে আদানি। তাহলে তার মূলধন ওই কেন্দ্রের জন্য কেনে আলাদাভাবে চার্জ দিতে হবে? এখানেই আছে বিগত স্বৈরাচারি হাসিনা সরকারের টাকা লুটের ফন্দি-ফিকির। ৭ টাকা পার ইউনিটের জন্য হাসিনা সরকার নির্ধারণ করে দেয় ১৫ টাকা। ওই টাকার কিয়দংশ কি হাসিনার পেটে যাচ্ছে?
এখন আদানি বকেয়া পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছে। কথা হচ্ছে বিদ্যুতের বিল তো ব্যবহারকারী গ্রাহক পরিশোধ করছে নিয়মিতই। তাহলে বিল কেন বকেয়া পড়ে থাকবে? দ্বিতীয়ত, পিডিবি ও বিতরণকারী কোম্পানিগুলো কেন আদায়কৃত অর্থ মূল পিডিবিকে পরিশোধ করেনি? আবার পিডিবি কেন আদানিসহ দেশীয় বেসরকারি কুইক রেন্টালদের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেনি? তারা কি উৎপাদন না করেই কেবল ক্যাপাসিটি চার্জ গ্রহণ করেন? আবার বিদ্যুতের জন্যও বিল পরিশোধের জন্য চাপ দেয়?
এবার ব্যক্তি পর্য়ায়ের দুঃখ-কষ্ট নিয়ে দুই-চার কথা। প্রথমত, বিদ্যুৎ ব্যবহারের চাঙ্গ করে কেন রেট নির্ধারণ করেন? ১শ ইউনিটের জন্য যে রেট, ১ হাজার ইউনিটের জন্য সেই একই রেট হবে না কেন? ওই ১ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে কি পিডিবি/ডেসা/ডেসকো/ডিপিডিসিসহ নতুন লাইন বসাতে হয় বা হয়েছে? না হয়নি। অথচ বিদ্যুৎ কর্তারা এসি রুমে বসে ব্যবহারকারীদের ঘামে-ভেজা শ্রমের টাকাটা লুটে নেবার ব্যবস্থা করেছেন ঠিকই। এই লুটেরা কারসাজি বন্ধ করতে হবে। না হলে যে তুষের আগুন জ্বলেছে ছাত্র-জনমনে, তা একদিন ধিকি ধিকি থেকে স্ফূলিঙ্গে এবং বিশাল অগ্নিকান্ডে পরিণত হবে, হবেই।
- ট্যাগ:
- মতামত
- লোডশেডিং
- ক্যাপাসিটি চার্জ