লটারি মানে ভাগ্যই তো?
প্রথম ও ষষ্ঠ শিক্ষার দুই স্তর তথা প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে প্রবেশের দুটি প্রারম্ভিক শ্রেণি। প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে লটারি হোক– এর পক্ষে প্রায় সবাই থাকলেও ষষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি লটারিতে হোক– এটা অনেকেই চান না। অথচ বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর এটা স্পষ্ট, উভয় পর্যায়ের ভর্তিতে এবারও লটারি পদ্ধতি থাকছে। এক যুগের অধিক সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের ভর্তির ক্ষেত্রে লটারি হচ্ছে। মাঝে মাঝে এটি আলোচনায় আসে। ২০২০ সালে করোনার পর নতুন করে এবার লটারি পদ্ধতি আলোচনায় এসেছে।
অনেক দেশেই লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। বিশেষ করে আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় প্রবেশের আগেই শিশুদের পরীক্ষার বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার চেয়ে নিশ্চয় উত্তম। অবশ্য এটাও বলা দরকার, সব প্রতিষ্ঠানেই যে ভর্তি হতে লটারির প্রয়োজন হয়, এমন না। শহরের নামিদামি স্কুল এবং গ্রামের সাধারণত সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে প্রার্থী বেশি থাকে বলেই সেখানে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী বাদ দেওয়ার প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ অভিভাবকদের চাহিদার শীর্ষে থাকার কারণে কিছু প্রতিষ্ঠানে আসন সংখ্যার কয়েক গুণ শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন করে। অন্যদিকে নামডাকহীন অনেক প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট আসন পূরণের জন্য অনেক সময় শিক্ষার্থীও পায় না।
এই সমস্যার সমাধানে শিক্ষা বিজ্ঞানে ক্যাচমেন্ট এরিয়া বা প্রতিষ্ঠানসংলগ্ন এলাকা বলে একটা অভিধা আছে। ২০২০ সালে ঢাকা মহানগরীতে স্কুলের আশপাশ এলাকার ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া আছে। তার আগে ক্যাচমেন্ট এরিয়ার ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হতো। আমি মনে করি, এটি আরও বাড়ানো প্রয়োজন। অনেক দেশেই এ নিয়ম আছে; এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শিক্ষার্থীকে ভর্তি হতে হবে। ভালো প্রতিষ্ঠান বলে অন্য এলাকায় গিয়ে সন্তানকে ভর্তি করানোর সুযোগ নেই। সে জন্য নির্দিষ্ট এলাকার শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে অগ্রাধিকার আরও বাড়িয়ে অন্তত ৮০ শতাংশ করে ভর্তির ক্ষেত্রে সঠিকভাবে তা বাস্তবায়ন করলে এলাকাভিত্তিক প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই মানসম্পন্ন হয়ে উঠতে পারে।
লটারির পক্ষে-বিপক্ষে যেহেতু কথা উঠছে, এ নিয়ে ভবিষ্যতে নিশ্চয় আলোচনা হবে। প্রাথমিকে এর বিকল্প চিন্তা করার সুযোগ নেই। কারণ এটি শিশুদের জন্য বেশি চাপ হয়ে যাবে এবং লটারি চালু হওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তিই প্রধান। যদিও এর সঙ্গে শিক্ষা বাণিজ্যের বিষয়ও জড়িত; মাধ্যমিকে লটারির ব্যাপারে বিকল্প বিবেচনার সুযোগ আছে। এখানে শিক্ষার্থীরা কিছুটা ‘ম্যাচিউরড’ হয়। ক্যাডেট কলেজগুলোতে পরীক্ষার মাধ্যমেই ভর্তি হতে হয়। তা ছাড়া মাধ্যমিক পর্যায়ে যে সরকারি প্রতিষ্ঠান আছে, যদিও সংখ্যায় কম, সেগুলোতে নগণ্য ফি দিয়ে পড়াশোনা করা যায়। সামাজিক মাধ্যমে একজন শিক্ষক লিখেছেন, পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি নিলে এসব প্রতিষ্ঠানে দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা বেশি সুযোগ পাবে। যেমনটা আমরা দেখি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন-মধ্যবিত্তের মেধাবীরা বেশি সুযোগ পায়। তা ছাড়া ভর্তি পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়াশোনার যে স্পৃহা থাকবে, তা শ্রেণিকক্ষের পড়াশোনার জন্যও প্রেষণা হিসেবে কাজ করতে পারে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- লটারিতে ভর্তি
- স্কুলে ভর্তি