বিসিএস আন্তক্যাডার বৈষম্যের অবসান হবে কবে
বিসিএস ক্যাডারের পদোন্নতির নৈরাজ্য আজও দূর করা সম্ভব হয়নি। বিসিএসে এক ক্যাডারের সঙ্গে অন্য ক্যাডারের যে বৈষম্য, তা সরকারি চাকরির এক লজ্জাজনক অংশ। একই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, একই পরীক্ষা, একই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে একই দিনে যোগদান করা কর্মকর্তাদের মধ্যে যে বৈষম্য, তাকে কোনোভাবে সুস্থ পদ্ধতি বলা যায় না। এই অসুস্থ পদ্ধতি দূর করার কোনো চেষ্টা আগের কোনো সরকার করেনি।
রাজনৈতিক সরকারগুলোর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বা ভিন্নমত বন্ধ করতে সরকারকে যে ক্যাডারের কর্মকর্তারা যতটা সহায়তা করতে পারেন, সেই ক্যাডার সরকারের কাছে তত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিসিএস প্রশাসন ও পুলিশ এই বাস্তবতায় রাজনৈতিক সরকারের সবচেয়ে প্রাধিকারভুক্ত দুই ক্যাডার।
এই দুই ক্যাডারের কর্মকর্তারা তরতর করে পদোন্নতি পান। কোনো কোনো ক্যাডারের সঙ্গে উল্লিখিত দুই ক্যাডারের এতটাই বৈষম্য করা হয় যে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন কর্মকর্তারা নিজেদের পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করেন। লজ্জায়–অপমানে ক্ষেত্রবিশেষে এই বৈষম্য মানসিক বৈকল্যের কারণ হয়ে ওঠে। ২০ বছরে মাত্র একবার পদোন্নতি পাওয়ার রেকর্ড আছে। ১৭ বছরে পদোন্নতি হয়নি এমনও আছে। কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাওয়ার মতো ঘটনাও পাওয়া যায়।
রাজনৈতিক সরকারের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্যাডার প্রশাসন। কিন্তু প্রায় ১৫ বছরে ক্ষেত্রবিশেষে এই ক্যাডারের চেয়ে পুলিশ ক্যাডার বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এরা সরকারের সব রকম অনিয়ম-দুর্নীতির রক্ষাকবচ হয়ে উঠেছিল। মাঠে যেকোনো বিরুদ্ধ মতকে দমানোর জন্য পুলিশ যথেষ্ট ছিল। বিনা ভোটে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার জন্য নেওয়া হয়েছে পুলিশি সহায়তা। সরকারের পুলিশ–নির্ভরতা যেকোনো সময়ের চেয়ে গত ১৫ বছরে বেশি হয়েছে।
এই নির্ভরতার সুযোগ নিয়ে তারাও প্রশাসন ক্যাডারের মতো নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। পুলিশ আর প্রশাসন ক্যাডার সরকারের সঙ্গে থাকলে আর কোনো ক্যাডারের কথা না ভাবলেও চলে। এই ভাবনা যে চূড়ান্ত সত্য নয়, ২০২৪–এর ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান তা প্রমাণ করেছে।
কেবল পদোন্নতির ক্ষেত্রে নয়, অন্য যেকোনো সুবিধার সর্বোচ্চটা দেওয়া হয় এই দুই ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সুবিধাও চালু করা হয়েছে। যেমন প্রশাসন ক্যাডারের উপসচিবদের (পঞ্চম গ্রেডভুক্ত) ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার জন্য সুদমুক্ত ৩০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। গাড়ির চালক, তেলের খরচ, গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ মাসিক আরও ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হচ্ছে। সুবিধা পেলে একই গ্রেডের সব কর্মকর্তার পাওয়া উচিত, নয়তো কারও নয়।
বর্তমান বৈষম্যবিরোধী সরকার দায়িত্ব নিয়েই এই দুই ক্যাডারের ভেতরের বৈষম্য দূরীকরণে হাত দিয়েছে। এই দুই ক্যাডারের সঙ্গে অন্য ক্যাডারের বৈষম্য দূরীকরণ কিংবা অন্য ক্যাডারের মধ্যে যে বৈষম্য আছে, সেটা নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের হাতে অন্যান্য ক্যাডারের পদোন্নতি নির্ভর করার কারণেও বৈষম্য বাড়ছে। যেকোনো ক্যাডারের কর্মকর্তা সর্বোচ্চ পদোন্নতি পাওয়ার পর যে স্থানে উন্নীত হন, তার চেয়ে দুই থেকে চার ধাপ ওপরে যান প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
- ট্যাগ:
- মতামত
- প্রশাসন ক্যাডার
- বিসিএস ক্যাডার