পুলিশকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে

যুগান্তর এ কে এম শামসুদ্দিন প্রকাশিত: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৫২

“২৫ মার্চ কালরাতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ঢাকা শহরে পরিচালিত বীভৎস পৈশাচিকতার অন্যতম লক্ষ্যস্থল ছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইনস। সেই রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের অকুতোভয় বীর পুলিশ সদস্যরা আকস্মিক আক্রমণে হতবিহ্বল না হয়ে থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে যে প্রতিরোধ যুদ্ধের সূচনা করেন, তা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। রাজারবাগসহ ঢাকা শহরের অন্যান্য স্থান ও স্থাপনায় পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর আক্রমণের সংবাদ তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের বেতারের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। দেশের সব পুলিশ লাইনসে শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রস্তুতি।...সীমিত সামর্থ্য নিয়েও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সুযোগ পায় পুলিশের অসীম সাহসী বীরযোদ্ধারা। রাজারবাগ পুলিশ লাইনস থেকে পুলিশের সেই অসম কিন্তু দুঃসাহসী প্রতিরোধ যুদ্ধ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের দীর্ঘ পরিক্রমাজুড়ে উদ্দীপনা জুগিয়ে গেছে।”


ওপরের এ বাক্যগুলো আমার নয়। আমি বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর থেকে প্রকাশিত ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’ নামক বইয়ের সম্পাদকীয় থেকে উদ্ধৃত করেছি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইনস আক্রমণ করলে বাঙালি পুলিশ সদস্যরা যার যে অস্ত্র ছিল, তাই নিয়ে সে আক্রমণ প্রতিরোধ করে মুক্তিযুদ্ধের যে সূচনা করেছিল, তার ওপর ভিত্তি করে এই মূল্যবান তথ্যবহুল বইটি প্রকাশিত হয়। বইটিতে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি দখলদারদের বিরুদ্ধে বাঙালি গর্বিত পুলিশ সদস্যদের বীরগাথা বর্ণিত আছে। ট্যাংক ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পশ্চাৎপদ, ধীরগতির থ্রি নট থ্রি এবং মার্ক ফোর রাইফেল দিয়ে অসীম সাহসী বাঙালি পুলিশ সদস্যরা জীবনবাজি রেখে বীরত্বের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছিলেন, সেই প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী পুলিশ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ খান মোহাম্মদ আলীর ভাষায়, ‘পাকিস্তান বাহিনী যখন রাজারবাগ পুলিশ লাইনস চারদিক দিয়ে ঘিরে আক্রমণের জন্য এগিয়ে আসছিল, তখন পুলিশ লাইনসের চারশ বাঙালি সিপাহি বুকফাটা চিৎকারে রাজারবাগ কাঁপিয়ে বলছিলেন, অস্ত্র দাও। আমাদের হাতে অস্ত্র তুলে দাও, আমরা লড়ব, লড়তে লড়তে মরব, শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়াই করব, কিছুতেই পিছু হটব না, হটব না’। টগবগে তরুণ বাঙালি পুলিশ সদস্যরা এমনভাবেই সেদিন শত্রুর মোকাবিলায় আত্মোৎসর্গ করেছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রায় ১৪ হাজার পুলিশ সদস্য সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন। যুদ্ধে ১১ শতেরও বেশি শহিদ হয়েছেন এবং চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন অনেকেই। এমনই ইস্পাতকঠিন যাদের মনোবল, এমনই গৌরবময় ইতিহাস যাদের, সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ সদস্যদের নিয়ে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ পুলিশের আজকের অবস্থা দেখে সত্যিই দুঃখ হয়। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে সংগঠন গড়ে উঠেছে, তাদের পরিণতি যে এমন হবে তা কল্পনাও করা যায়নি। পুলিশের যে এত বড় সেট ব্যাক হবে, আগে থেকে কেউ কি ভেবেছিল? ৫ আগস্ট স্বৈরশাসকের পতনের পর যেভাবে পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনায় আক্রমণ হয়েছে, অস্ত্র-গোলাবারুদ লুটপাট হয়েছে, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, পুলিশ সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা ছিল সব ধারণার বাইরে। পুলিশের প্রতি জনরোষের এত তীব্র বহিঃপ্রকাশ এর আগে কখনো দেখেনি কেউ।



প্রশ্ন হচ্ছে, পুলিশের এমন পরিণতি কেন হলো? এর জন্য দায়ী কে? পুলিশের আজকের অবস্থার জন্য কি পুলিশই দায়ী? নাকি অন্য কেউ? এসব প্রশ্নের উত্তর আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। যে পুলিশ সার্ভিসের মুক্তিযুদ্ধের মতো গৌরবগাথা আছে, যাদের জঙ্গিগোষ্ঠী দমনে সাফল্যের রেকর্ড আছে, দেশের দুর্যোগ-দুর্বিপাকে যে পুলিশ জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে, যে পুলিশের জনগণের বন্ধু হওয়ার কথা, সে পুলিশকে কেন এভাবে জনগণের মুখোমুখি করে দেওয়া হলো? আসলে স্বাধীনতার পর থেকেই ‘পুলিশকে পুলিশের মতো’ গড়ে তোলা হয়নি। স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিটি রাজনৈতিক সরকার দলীয় স্বার্থে পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছে। দলের প্রয়োজনে পুলিশকে নিজেদের লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত করেছে। অথচ পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। দেশে আইনের শাসন জারি রাখতে হলে পুলিশকে অবশ্যই নীতি-নৈতিকতা ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হয়। এ জন্য পুলিশকে রাজনৈতিক পক্ষপাতমুক্ত হতে হবে, যাতে কেউ রাজনৈতিক ফায়দা নিতে না পারে। জনগণ বাধ্য হয়েই পুলিশের কাছে যান, কিন্তু যে সাহায্যের আশায় পুলিশের কাছে যান, পুলিশ যদি সেভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে না দেয়, তখন পুলিশের প্রতি মানুষের আর আস্থা থাকে না। গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ পুলিশকে যেভাবে ব্যবহার করেছে, তাতে দিনে দিনে পুলিশের ওপর জনগণ আস্থা হারিয়েছে।


যদিও দলীয় সব সরকারই রাজনৈতিক স্বার্থে পুলিশকে ব্যবহার করেছে, তবে গত তিনটি টার্মে আওয়ামী লীগ সরকার পুলিশকে যেভাবে ব্যবহার করেছে, তা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। শেখ হাসিনা পুলিশকে নিজস্ব বাহিনী রূপে গড়ে তুলেছিলেন। ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার লক্ষ্য নিয়েই তিনি এ কাজটি করেছেন। বিগত দেড় দশকে পুলিশে রিক্রুটমেন্টের সময় আওয়ামী লীগ পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও দলীয় আদর্শে বিশ্বাসীদেরই পুলিশে নেওয়া হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তা হিসাবে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ ক্যাডারের লোকদেরই বাছাই করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, পুলিশের সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাদের সরিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে তাদেরই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পুলিশের সুযোগ-সুবিধা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি করা হয়েছিল। চাকরি শেষে আমৃত্যু রেশন দেওয়ার সুবিধাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পুলিশের সংগঠনে ৭.৬২ সেমি অটোমেটিক রাইফেল ও লাইট মেশিনগানের মতো মারাত্মক মারণাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার কোনো প্রয়োজনই ছিল না। পৃথিবীর আর কোনো দেশের পুলিশ সার্ভিসে এ ধরনের মারণাস্ত্র ব্যবহারের প্রচলন নেই।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও