নিজে কতটা দুর্নীতিমনা ভেবে দেখেছি?

সমকাল ইকরাম কবীর প্রকাশিত: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১:০০

প্রথম প্রেক্ষাপট


কল্পনা করুন, অফিসে বসে কাজ করছি। বাড়ি থেকে আমার ছেলে ফোন করে বলল–‘বাবা, আজকে বাংলাদেশের ম্যাপের একটা প্রিন্ট আউট নিয়ে আসবা আমার জন্য? এটা আমার কালকের হোমওয়ার্ক; প্লিজ একটা প্রিন্ট আউট নিয়ে এসো। না হলে আমাকে বকা খেতে হবে।’


এমন ফোন এলে আমি কী করব? অফিসের প্রিন্টার থেকে কি ছেলের জন্য একটি প্রিন্ট আউট নিয়ে যেতাম না? আপনারা হয়তো বলবেন, এ তো শুধু একটি কাগজ আর একটু কালি। কিন্তু তবুও কাগজ আর কালি তো আমার অফিসের সম্পত্তি, আমার নয়।


প্রিন্ট করে নিয়ে গেলাম। আমি কি আমার সম্পদ নিয়ে গেলাম? না। আমি আমার অফিসের সম্পদ নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।


দ্বিতীয় প্রেক্ষাপট 


কল্পনা করুন, একটি সেমিনারে অংশ নিতে এসেছি, যেখানে ফ্লিপচার্টে লেখার জন্য অনেক মার্কার ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছে। সেমিনারের আয়োজকরা আমাকে একটি ফ্রি নোটবুক, কলম ও একটি ব্যাগ দিয়েছেন। সারাদিন পর সেমিনার শেষ হলে আমি ইচ্ছাকৃতভাবে দুটো মার্কার ব্যাগের ভেতর ঢুকিয়ে নিলাম, যেন সেগুলোও আমার নিজেরই। মার্কার আমার নেওয়ার কথা ছিল না। আমাকে শুধু নোটবই, কলম আর ব্যাগ দেওয়া হয়েছিল। তাহলে আমি কি আয়োজকদের সম্পত্তি চুরি করলাম না? আপনারা কি এই সামান্য চুরির কাজটিকে দুর্নীতি বলবেন?


অবশ্যই বলবেন; যা আমার নয়, তা কাউকে না বলে বা জোর করে নিয়ে নেওয়া–চুরি বা ডাকাতি।



তৃতীয় প্রেক্ষাপট


ধরুন, একটি রিকশা ভাড়া করেছি। ভাড়া ১০০ টাকা। গন্তব্যে পৌঁছানোর পর আমি ইচ্ছাকৃতভাবে রিকশাওয়ালাকে ৯০ টাকা দিয়ে বললাম, আমার কাছে আর টাকা নেই। রিকশাচালক আমাকে ক্ষমা করে দিয়ে ৯০ টাকাই নিলেন। তিনি হয়তো কিছু মনে করলেন না, কিন্তু আমি তো তাঁকে ১০ টাকা ঠকিয়ে দিলাম। এই কাজকে আপনারা কী বলবেন? যদি দুর্নীতি না হয়, তাহলে কী?


চতুর্থ প্রেক্ষাপট


ধরে নিতে পারেন, আমি একজন ঠিকাদার। এক কিলোমিটার রাস্তায় পিচ বসাচ্ছি। বাজেট ধরা হয়েছে ১ কোটি টাকা। আমি এ কাজের জন্য ২০ লাখ টাকা খরচ করে সরকারের কাছে ১ কোটির বিল পাঠিয়ে দিলাম। আপনারা আমার এ কাজকে কী বলবেন? দুর্নীতি, তাই না? নাকি না?


এই দুর্নীতিগুলো আমাদের মতো সাধারণ মানুষই করে। এতে আমাদের সবার হাত আছে। সরকারি অফিসে সেবা নিতে গিয়ে তাড়াতাড়ি সেবা পেতে টাকা দেওয়া, চাকরি বা পদোন্নতির জন্য ঘুষ দেওয়া–এমনটি আমরা সবাই করছি। সন্তানদের ভালো স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য আমাদের কানেকশনের আশ্রয় নিই বা ঘুষ দিই। হাসপাতালে একটু ভালো যত্ন বা দ্রুত পরিষেবা পেতে আমরা অতিরিক্ত টাকা দিই। বাড়িতে বৈদ্যুতিক সংযোগ বা মিটার লাগাতে বা মেরামতের জন্য আমরা ইউটিলিটি কর্মীদের ঘুষ দিই। আমরা পরীক্ষায় নকল করি; অনেকে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন অনেক দামে কিনে পরীক্ষা দেয়। আমাদের দেশের বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের ভালো ফল পাইয়ে দেওয়ার জন্য শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ঘুষ দেন। আমরা ঘুষের মাধ্যমে মিথ্যা সার্টিফিকেট বা ডিগ্রি পাই। আমরা ব্যক্তিগত লাভের জন্য জাল নথি তৈরি করি বা সরকারি রেকর্ড বদলে ফেলি। আমরা ব্যক্তিগত কাজের জন্য সরকারি যানবাহন ব্যবহার করি। আমাদের ভোটের প্রার্থী বা রাজনীতিকরা নির্বাচনের সময় ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য টাকা দেন। 


এই আমরাই। এগুলো সব আমরাই করি। আমাদের প্রায় সবার জীবনেই দুর্নীতির কিছু না কিছু ছিটেফোঁটা আছে।
আসুন এবার আরও দুটো প্রেক্ষাপট দেখি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও