বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা ও বিরামহীন মামলা
নির্বাচন ছাড়া যে কোনো উপায়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যা যা করা প্রয়োজন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার বিগত দেড় দশকে তা-ই করেছে। সংবাদমাধ্যম থেকে আইন ও বিচার, বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্প-বাণিজ্য, পরিবেশ-প্রকৃতি, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি-খেলাধুলা প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজস্ব বাহিনী গড়ে নিজেদের রেজিম সংহত করতে চেয়েছে। পাশাপাশি তারা উদ্ভাবন করে এককেন্দ্রিক ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার নিত্যনতুন উপায়। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বিশ্বের দীর্ঘতম সময় ক্ষমতায় থাকা নারী শাসক শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতি ও দেশত্যাগের পর বিভিন্ন প্রেক্ষিত যুক্তিসংগত কারণেই আলোচনায় আসছে, সংগত কারণেই আরও আসবে।
শনিবার নাগরিক সংলাপে বক্তারা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে আড়ি পাতা ও নজরদারির সরঞ্জাম কিনেছে; যা মূলত ব্যবহার হয়েছে ক্ষমতায় টিকে থাকতে। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘একটি প্রতিষ্ঠানও নেই, যেখানে দলীয়করণ হয়নি। ক্ষমতা ধরে রাখতে আড়ি পাতা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এই নজরদারি করা হতো ভিন্নমত দমনে।’ (সমকাল, ২৫ আগস্ট ২০২৪)।
তদন্ত ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্বজুড়ে আড়ি পাতা ও নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে জবাবদিহির মাধ্যমেই তা হয়, উদ্দেশ্য নাগরিকের অধিকার হরণ নয়। আইনগত আড়ি পাতায় সুনির্দিষ্ট বিধিমালা থাকে। ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য বাংলাদেশে যে আড়ি পাতা প্রক্রিয়া গড়ে তোলা হয়েছে, তাকে বলা যায়, নজরদারিভিত্তিক রাষ্ট্র কাঠামো। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত অবিলম্বে সরকারের বর্তমান আড়ি পাতা প্রক্রিয়া সম্পর্কে জনসাধারণকে জানানো। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকার কোন প্রক্রিয়ায় নাগরিকদের ওপর নজরদারি করত, তাও জানিয়ে দেওয়া।
আজ যারা ক্ষমতায় আছেন বা ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসবেন, তারা নাগরিকদের ওপর কী ধরনের নজরদারি করছেন বা করবেন, তা প্রকাশ্য থাকা দরকার। ব্যক্তিগত ফোনালাপ থেকে শুরু করে মেসেজিং বা বার্তা বিনিময় কোনো কিছুই রাষ্ট্রের আড়ি পাতার আওতার বাইরে থাকে না। ব্যক্তির একান্ত স্পেস কোন পর্যন্ত– এই ন্যূনতম শালীনতাও মানতে চান না রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা। আর নাগরিকদের রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে সরকারি নজরদারির কথা তো বলাই বাহুল্য। দমনপীড়নের অব্যর্থ অস্ত্র তাই আড়ি পাতা। নাগরিকদের মত ও বাক্স্বাধীনতা চর্চায় এর যথার্থ প্রয়োগবিধি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তৈরির অনিবার্য অংশ।