ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী গন্তব্য

যুগান্তর সাইফুল হক প্রকাশিত: ১৯ আগস্ট ২০২৪, ১১:২০

গেল ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অবিস্মরণীয় গণঅভ্যুত্থান ও আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিদায় সমকালীন বিশ্বে এক নজিরবিহীন ঘটনা। কিন্তু ছাত্র-জনতার এ অভূতপূর্ব গণজাগরণ-গণঅভ্যুত্থান ও আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ষোলো বছরের চরম স্বেচ্ছাচারী আপাদমস্তক দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনের পতন আকস্মিক ঘটনা ছিল না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ ষোলো বছরের ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দেশের জনগণের বহুমাত্রিক পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ছাত্র-জনতার এ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। চরম দমন-নিপীড়ন মোকাবিলা করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নৃশংস ফ্যাসিবাদী শাসন বিদায় দিতে জানবাজি লড়াই এগিয়ে নিয়েছে। শিক্ষার্থী-জনতা মিলে সেই লড়াই ছত্রিশ দিনে মরণপণ লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে; হাসিনা সরকার উৎখাত হয়েছে।


আওয়ামী সরকারকে মানুষ কোনোভাবেই আর বরদাশত করতে পারছিল না। দরকার ছিল একটি স্ফুলিঙ্গের। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আপাতত অরাজনৈতিক একটি ন্যায্য দাবি নিয়ে এ স্ফুলিঙ্গের সূত্রপাত করেছিল। কিন্তু এ ন্যায্য ও যৌক্তিক আন্দোলন দমন করতে গিয়ে সরকার ও সরকারি দল আওয়ামী লীগ, তাদের দলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী, পুলিশসহ গোটা রাষ্ট্র ছাত্রদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, তার ফলে দ্রুত এ আন্দোলন পুরোপুরি সরকারবিরোধী রাজনৈতিক চেহারা নিতে বাধ্য হয়েছে; শিক্ষার্থীদের নয় দফা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ তথা সরকার পতনের এক দফায় পরিণত হয়েছে।



ছাত্র-জনতা সমগ্র সশস্ত্র রাষ্ট্রব্যবস্থা মোকাবিলা করে কার্যত রাষ্ট্র অচল করে দিয়েছিল। যে রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে সব ধরনের বিরোধিতা ও বিরোধীদের দমন-নিপীড়নের নিষ্ঠুর হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছিল, উগ্র বলপ্রয়োগের হাতিয়ার সেই গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে বুকের রক্ত দিয়ে ছাত্র-জনতা চ্যালেঞ্জ করেছে এবং তাকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়ে পিছু হটাতে বাধ্য করেছে। এদেশে এরকম ঘটনা আগে আর ঘটেনি।


দমনমূলক যে রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর নির্ভর করে আওয়ামী লীগ ভোট ছাড়াই ক্ষমতা কব্জা করে রেখেছিল, গণঅভ্যুত্থানের মুখে সে রাষ্ট্রব্যবস্থা অনেকটাই ভেঙে পড়ল, বিপর্যস্ত হলো। এটি ছিল জনসমর্থনবিহীন জনবিচ্ছিন্ন এক নিপীড়ক রাষ্ট্রব্যবস্থা। চারশ’র বেশি থানা আক্রান্ত হলো, ছাত্র-জনতার ভয়ে অধিকাংশ থানার পুলিশসহ রাষ্ট্রের অপরাপর বাহিনীর সদস্যরা পালিয়ে গিয়ে আত্মরক্ষা করল। তারা রাষ্ট্রের বাহিনী হলেও যেভাবে দলীয় বাহিনীর মতো সরকার ও সরকারি দলের হয়ে কাজ করেছে, স্বাভাবিকভাবেই মানুষের ক্ষোভের কেন্দ্রে ছিল এসব বাহিনী। সুবিধাভোগী ও উচ্চাভিলাষী একশ্রেণির কর্মকর্তার কারণে বাহিনী ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সাধারণ সদস্যদের নিরাপত্তাও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গিয়েছিল।


ছাত্রদের সঙ্গে সঙ্গে এ গণঅভ্যুত্থানে সবচেয়ে বলিষ্ঠ ও সংগ্রামী ভূমিকা পালন করেছে শহরের শ্রমজীবী-মেহনতি সাধারণ মানুষ। এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, আর নানা শ্রেণি-পেশার বিক্ষুব্ধ লাখ লাখ মানুষ। যে এক-দেড় হাজার (সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি) মানুষ শহিদ হয়েছেন, তার মধ্যে শিক্ষার্থীদের বাইরে শহরাঞ্চলের সর্বহারা-আধা সর্বহারা শ্রেণির মানুষের সংখ্যাই বেশি। এ মানুষদের হারানোর কিছু ছিল না। কিন্তু তাদের শত বঞ্চনা, বেকারত্ব, না খাওয়া আর মানবেতর জীবনের গ্লানি তাদের গণপ্রতিরোধ-গণঅভ্যুত্থানের কাফেলায় শামিল করেছে।



বাংলাদেশে ২০২৪-এর এ গণঅভ্যুত্থান ছাত্র-তরুণদের প্রায় সমগ্র একটি প্রজন্মকে রাতারাতি বড় করে তুলেছে, করে তুলেছে দায়িত্বশীল। রংপুরের শহিদ আবু সাঈদের বীরোচিত আত্মদান হাজারো, লাখো তরুণকে জুলুম আর জালেমশাহি রাজত্বের বিরুদ্ধে দেশাত্মবোধের চেতনায় জাগিয়ে তুলেছে। তাদের অনেকের কাছে এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধে শামিল হওয়ার মতো গৌরবের বিষয়। হাজার হাজার তরুণ শিক্ষার্থী, নারী-পুরুষ আবু সাঈদের মতো আত্মদানে গুলির মুখে দাঁড়িয়ে গিয়েছে।


এ শক্তিকে কে পরাজিত করে! অভ্যুত্থানের পর তারা যেভাবে সারা দেশে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করেছে, ডিবি অফিস, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, থানাগুলোকে পরিষ্কার করেছে, থানা থেকে শুরু করে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের মন্দির ও অঞ্চলগুলোকে পাহারা দিয়ে আসছে, তা দায়িত্ব ও সম্প্রীতির নতুন ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে। কোমলমতি বলে যাদের ছোট করা হতো, প্রয়োজনে তারা কীভাবে অভিভাবকের ভূমিকায় আবির্ভূত হলো, তা রীতিমতো বিস্ময়কর। আমাদের সব যে শেষ হয়ে যায়নি, ‘জেন জি:-এর এ প্রজন্ম তা দেশবাসীকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও