গণ-অভ্যুত্থান: নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত কেন জরুরি
২০২৪-এর ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং দেশ ত্যাগ করেন। এই ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ বাঁক হিসেবে গণ্য হবে।
এটা সত্যিই অভাবনীয় যে আপাতদৃষ্টে কোটা সংস্কারের মতো একটি ছোট দাবির ওপর গড়ে ওঠা আন্দোলন কীভাবে অতিদ্রুত কয়েক দিনের মধ্যে একটি ব্যাপক ও তীব্র গণ-আন্দোলনের রূপ নেয়। নানা কারণেই জনগণের মধ্যে যে অসন্তোষ ধূমায়িত ছিল, এই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তা প্রকাশিত হয়।
এই গণ-অভ্যুত্থানের চারটি প্রধান কারণ ছিল।
প্রথমত, কোটার সংস্কারের দাবি ছাত্র ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন লাভ করেছিল।
দ্বিতীয়ত, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, সংকুচিত চাকরি ও ব্যবসার সুযোগ এবং সর্বব্যাপী দুর্নীতির কারণে জনসাধারণের মধ্যে গভীর অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছিল।
তৃতীয়ত, রাজনৈতিক স্বাধীনতার অভাব, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ এবং বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক দমন-পীড়নের কারণে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বৃদ্ধি পায়।
চতুর্থত, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা আন্দোলন দমন করার সময় অহংকার ও দাম্ভিকতা দেখিয়েছেন। বিক্ষোভ দমন করার জন্য তাঁদের অত্যধিক শক্তিপ্রয়োগের ফলে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে ছাত্র এবং সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে অভূতপূর্ব সংখ্যক প্রাণহানি ঘটে, যা প্রতিবাদের ক্রোধ এবং তীব্রতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
২০২৪ সালের ৮ আগস্ট, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে। অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর প্রাথমিক দায়িত্ব থাকবে অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে দেশ পরিচালনা করা এবং ক্রমান্বয়ে একটি স্থিতিশীল ও সুসংগঠিত স্থায়ী সরকারের লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক উত্তরণের ভিত্তি স্থাপন করা।
শেখ হাসিনা সরকারের অধীন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের চিত্র
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের রাজনীতি একটি কর্তৃত্ববাদী শাসন দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। যদিও ২০০৮ সালের নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক ছিল, পরবর্তী নির্বাচনগুলো ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচন বিরোধী দলগুলো বর্জন করার কারণে ৫০ শতাংশের বেশি সংসদীয় আসনে শাসক দলের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিলেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণ সত্ত্বেও ব্যাপক কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলগুলো আবার বর্জনের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর গুরুতর অনাস্থার ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন থাকে।
শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী দলীয় শাসনের পাঁচটি মূল বৈশিষ্ট্য দেখা গিয়েছিল। প্রথমত, এই শাসনব্যবস্থা পাঁচটি প্রধান অংশীদারের একটি জোট দ্বারা চিহ্নিত ছিল: শাসক দলের রাজনীতিবিদেরা, প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা (গোষ্ঠীতন্ত্রের সুবিধাভোগী), বেসামরিক আমলাতন্ত্র, সামরিক আমলাতন্ত্র এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো, যার সবই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করে। এই জোট বিভিন্ন খাতে নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব বজায় রাখার জন্য যৌথভাবে কাজ করেছে।