নির্বিচার হত্যাকাণ্ডে বদলে গেছে প্রেক্ষাপট

ডেইলি স্টার মাহফুজ আনাম প্রকাশিত: ০২ আগস্ট ২০২৪, ১৯:৩৭

প্রধানমন্ত্রী ও বেশ কয়েকজন মন্ত্রী বারবার বলছেন, কোটা সংস্কারের সব দাবি মেনে নেওয়া সত্ত্বেও কেন শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ এখনো চলছে? বারবার এমন প্রশ্ন প্রমাণ করছে যে, সরকার ও আওয়ামী লীগের নেতারা এতটাই জনবিচ্ছিন্ন যে সত্যটা জেনেও তারা এর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছেন না। পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) বিবেচনাহীন গুলিতে দুই শতাধিক নিহত ও হাজারো মানুষ আহত হওয়ার ঘটনা যে সামগ্রিক পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে দিয়েছে, সেটা তারা অস্বীকার করছেন কিংবা ভুলে যেতে চাইছেন। এই ঘটনায় দেড়শ জন নিহত হওয়ার বিষয়টি সরকারই স্বীকার করেছে।


সাম্প্রতিক সহিংসতায় চোখে আঘাত পেয়ে ঢাকার একটি চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ৪০০ জন, যাদের মধ্যে ৩০০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে এবং আড়াইশ জনকে চোখের অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই এক বা উভয় চোখে ছররা গুলির (সাম্প্রতিক সহিংসতায় পুলিশের ব্যবহার করা গুলি) আঘাত পেয়েছেন। এ থেকে ধারণা করা যায় এরকম আহতের মোট সংখ্যা কত হতে পারে। গুলির আঘাতে কতজন মানুষ একটি বা উভয় হাত-পা হারাবেন, সেই সংখ্যা আমাদের জানা নেই। কতজনের অস্ত্রোপচার করাতে হবে, তাও আমরা জানি না। আহতদের মধ্যে কতজন আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন?


এসব ঘটনা এমনই নির্বিচার সহিংসতার প্রতিচ্ছবি, যেগুলোকে বিশ্বব্যাপী বিক্ষোভ দমনে পুলিশের প্রচলিত পদক্ষেপের সঙ্গে কোনোভাবেই মেলানো যায় না। এসব ঘটনা 'দেখামাত্র গুলি করার' চিন্তার প্রতিফলন, যেই ঘোষণা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের এক নেতা।


আজকের আলোচ্য বিষয় ন্যায়বিচার চাওয়া। সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের হত্যা, জনমানুষের বিরুদ্ধে পুলিশ ও বিজিবিকে ঘাতকের ভূমিকায় নিয়োজিত করা, অসংখ্য মানুষকে গ্রেপ্তার, 'ব্লক রেইড', বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি, মিথ্যা মামলা এবং বিক্ষোভকারীদের ঢালাওভাবে নাশকতা সৃষ্টিকারী ও রাষ্ট্রবিরোধী তকমা দিয়ে অপমান করার বিপরীতে ন্যায়বিচার।


যে বিষয়টি সার্বিকভাবে শিক্ষার্থীদের বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে এবং জনমনে ক্রোধ তৈরি করেছে, তা হলো এক ভীতিকর পরিবেশ, যার মধ্যে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষার্থী, তরুণ-তরুণী ও রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট মানুষ। (এক বাবা আমাকে ফোন করে বললেন, 'আমার ছেলে স্কুলে পড়ে। রাতে যখনই আমার বাড়ির কাছে কোনো গাড়ি থামার শব্দ পাই, তখনই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি।')


বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী ইতিহাসে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো নিঃসন্দেহে কোনো নাগরিক আন্দোলনের বিপরীতে সরকারের সবচেয়ে সহিংস প্রতিক্রিয়া। পুরো উপমহাদেশেও এমন নজির আছে কি না, সেটাও দেখার বিষয়। কীভাবে একটি বেসামরিক সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিজের দেশের মানুষের ওপর এমন নির্মম হামলা চালাতে দিয়েছে, তা চিন্তা করে আমরা শিউরে উঠি। এই হত্যাকাণ্ড শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কারণ বেশ কয়েক দিন ধরেই এটি চলেছে। প্রথম, দ্বিতীয়, এমনকি তৃতীয় দিনের মতো এমন ঘটনার শেষেও কি কোনো উপলব্ধি, চিন্তাধারার পরিবর্তন বা ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়নি? কেউ কি ভাবেনি যে নিজ দেশের মানুষের ওপর এই নির্মম ও ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের অবসান হওয়া উচিত?



যে দলটি আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে, কী কারণে আজ তারা এই পর্যায়ে এসে পৌঁছাল? কোনো ধরনের জবাবদিহিতা ছাড়া ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা, লোভ, বিপুল সম্পদ গড়ার প্রবণতা, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে ভাবার মনোভাবই এর জন্য দায়ী।


এত এত মৃত্যুর মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে হৃদয়বিদারক নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটি এলাকার ছয় বছর বয়সী শিশু রিয়া গোপের মৃত্যুর ঘটনা। ১৯ জুলাই বিকেলে চারতলা বাড়ির ছাদে খেলছিল সে। ওই সময় তাদের বাড়ির কাছে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাতে শুরু করে। তখন তার বাবা দীপক কুমার গোপ দৌড়ে ছাদে যান রিয়াকে আনতে। তিনি যখন মেয়েকে কোলে নিয়ে নিজের ফ্ল্যাটে ফিরছিলেন, তখন হঠাৎ একটি গুলি এসে শিশুটির মাথায় লাগে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৫ জুলাই মৃত্যু হয় রিয়ার।


কীভাবে চারতলা ভবনের ছাদে থাকা কারো গায়ে গুলি লাগে, যদি না পুলিশ সেই ছাদ লক্ষ্য করে গুলি না ছুড়ে থাকে? রিয়া কি কারো জন্য হুমকি ছিল? হয়তো এটাকে দুর্ঘটনা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হবে। কিন্তু চারতলা ভবনের ছাদে বাবার কোলে থাকা এক শিশুর মৃত্যুর ক্ষেত্রে কি এই ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য হবে?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও