দুর্নীতি সর্বগ্রাসী ও সর্বত্র

www.ajkerpatrika.com আব্দুর রাজ্জাক প্রকাশিত: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:১৪

দুর্নীতি মহামারিতে পরিণত হয়েছে, একেবারে রাজধানী থেকে শুরু করে প্রান্তিক পর্যায়ে সব জায়গায়, সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতির ছোঁয়া পড়েছে। দুর্নীতি বন্ধ করার কার্যকর ব্যবস্থা তেমন একটা এখনো দেখা যাচ্ছে না। যে দু-চারটা ঘটনা সমসাময়িক সময়ে লোকসমক্ষে  এসেছে, আসল ঘটনার তুলনায় এটা বিন্দুমাত্র।


আমাদের প্রথমেই স্বীকার করে নিতে হবে, যেসব মানুষের হাতে ক্ষমতা আছে, অর্থাৎ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্বায়ত্তশাসিত-আধা স্বায়ত্তশাসিত করপোরেশন, অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় যেসব কর্তৃপক্ষ চলে, তাদের মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষমতাবান ব্যক্তি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, কিছু লোক দুর্নীতিমুক্ত থাকতে পারে। একইভাবে রাজনীতিবিদ, সমাজপতি, সমাজের উঁচুপর্যায়ের লোকজন, যাদের হাতে ক্ষমতা আছে, তাদের ক্ষেত্রেও বেশির ভাগ লোক দুর্নীতিপরায়ণ; অল্পসংখ্যক দুর্নীতিবহির্ভূত।


এককথায় বলতে হবে, ক্ষমতাবানেরা বেশির ভাগ দুর্নীতিগ্রস্ত আর অল্পসংখ্যক লোক দুর্নীতিমুক্ত। আমরা সচরাচর বলি, সমাজের কিছু লোক দুর্নীতিপরায়ণ, অন্য সবাই ভালো। আমাদের জনসংখ্যার তুলনায় এ কথা সত্যি, কিন্তু ক্ষমতাবানদের মধ্যে তুলনা করলে এ কথা সত্যি নয়। এটা স্বীকার করে নিয়েই সামনে আগাতে হবে, কঠিন ব্যবস্থা নিতে হবে রাষ্ট্রীয়ভাবে, তাহলেই দুর্নীতি বন্ধ হবে।


একটা জিনিস আপনারা লক্ষ করছেন, বর্তমানে বাজারে নতুন টাকা, আধা নতুন টাকা নেই বললেই চলে। কালো, ময়লা, পচা টাকার নোটে বাজার সয়লাব। এর অর্থ দাঁড়ায়, নতুন টাকা, নতুনের কাছাকাছি টাকা দুর্নীতিবাজেরা ঘরের সিন্দুকে রেখে দিয়েছে। বাজারে টাকার এই চেহারা দেখে বোঝা যায়, দুর্নীতি কত গভীরে। এ রকম ছেঁড়া, পচা, ময়লা টাকা দেখে দুর্নীতির আধিক্য বোঝা যায়।


ব্যাংকে তারল্যসংকট। এখানে সব গণ্যমান্য ব্যক্তি আছেন। প্রতিদিনই কোনো না কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টেলিফোন পাবেন—তাঁদের ব্যাংকের মুনাফার হারসহ তাঁদের সেবাগুলোর বর্ণনা ও তাঁদের ব্যাংকে টাকা রাখার জন্য অনুরোধ। এর অর্থ এই দাঁড়ায়, দুর্নীতিবাজদের হাতে টাকা চলে গেছে। এই টাকা তারা ব্যাংকে রাখতে সাহস পায় না, তাই ব্যাংকে তারল্যসংকট বেড়ে গেছে।


রিজার্ভের ঘাটতির কারণ দুর্নীতি। দুর্নীতিবাজেরা তাদের কালোটাকা দিয়ে, কালোবাজার থেকে বেশি দামে ডলার সংগ্রহ করে। আমাদের বিদেশে কর্মরত যেসব মানুষ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেন, তাঁদের কাছ থেকেও হুন্ডি ব্যবসায়ীরা বেশি দামে বৈদেশিক মুদ্রা কিনে বিদেশে পাচার করে অথবা আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েস ও আন্ডার ইনভয়েসের কাজে ব্যবহৃত করে বলে ব্যাংকের রিজার্ভে সংকট দেখা দেয়। এই প্রক্রিয়াটা সম্পূর্ণই দুর্নীতির মধ্যে পড়ে।


এ রকম দুর্নীতির কারণে দেশের টাকা পাচার হয় বৈদেশিক মুদ্রায়। এই প্রক্রিয়া এখন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। তিন-চার বছরে এ রকম টাকা পাচার হওয়ার কারণে রিজার্ভ-সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুর্নীতি বন্ধ না করা গেলে গভীর সংকটে পড়বে দেশ, আমদানি-রপ্তানিতে প্রভাব পড়বে, উন্নয়নকাজ ব্যাহত হবে।


ট্যাক্স আহরণের অনুপাত হওয়া উচিত জিডিপির ১৫ শতাংশ। বর্তমানে আহরণ হয় ৭ শতাংশের কিছু বেশি। বাকি অর্থের কিছুটা যায় ট্যাক্স আহরণকারী কর্তৃপক্ষ, রেভিনিউ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেটে, কিছুটা যায় দালালদের পকেটে, কিছুটা যায় যারা ফাঁকি দেয়, তাদের পকেটে। ট্যাক্স আহরণকারী কর্মকর্তা ও দালালেরা এই ঘুষের টাকা, দুর্নীতির টাকা ব্যয় করে স্থাবর সম্পত্তিতে।


এরা রিসোর্ট করে, বাংলো করে, বাগানবাড়ি করে, বিদেশে ভ্রমণে যায়, বিদেশে চিকিৎসা করায়, এরা বিদেশে বাড়ি-গাড়ি করে, তাদের ছেলেমেয়েদের বিদেশে পড়ায়, সেখানে সম্পদ গড়ে। ব্যবসায়ীরা যে কর ফাঁকি দেয় তা দিয়ে সম্পদ গড়ে দেশে ও বিদেশে। বেশি দামে জমি কিনে গরিবের জমি তারা সব দুর্নীতির টাকায় কিনে সম্পদে পুঞ্জীভূত করে ফেলছে। সাধারণ মেহনতি মানুষের কাছে জমিজমাসহ তেমন আর সম্পদ থাকছে না, সম্পদ পুঞ্জীভূত হচ্ছে কয়েক লাখ রেন্ট সিকারের হাতে।


আমাদের সমাজে নতুন করে জমিদারি প্রথা ফিরে এসেছে। বড় বড় শহরের আশপাশে শহরতলিতে হাজার হাজার রিসোর্ট তৈরি হয়েছে।হাজার হাজার বিঘা জমি দুর্নীতির টাকায় কিনে বিলাসবহুল রিসোর্ট বানিয়েছে। যে অঙ্কের টাকায় জমি কেনে, রেজিস্ট্রি খরচ দেখায় তার চার ভাগের এক ভাগ। বিশাল বিশাল ইমারত—বৈদেশিক আসবাবে তৈরি হয় এই সব রিসোর্ট এবং ইমারত। এখানে চলে অবৈধ ব্যবসা।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও