ঋণখেলাপিরা সমাজে এত সমাদৃত কেন?

যুগান্তর ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী প্রকাশিত: ১৩ জুন ২০২৪, ১২:২৭

সভ্য সমাজের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, যে কোনো ধরনের অপরাধই শাস্তিযোগ্য। বাংলাদেশের সংস্কৃতি একটি প্রশংসনীয় জায়গায় ছিল। অপরাধী যেই হোক না কেন, আইনের শাসন সুরক্ষায় তার বিচার অবধারিত ছিল। স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকেই চোরাকারবার-মজুতদারি-দুর্বৃত্তায়ন দেশে অসহনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী চিন্তা-চেতনা বরাবরই জনগণের সুখ-সমৃদ্ধির লক্ষ্যেই স্থির ছিল। এর মূলে ছিল অসাম্প্রদায়িক, সমাজতান্ত্রিক ও মানবিক রাষ্ট্রব্যবস্থা। জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র-সমাজব্যবস্থার টেকসই সমৃদ্ধি নিশ্চিতে বঙ্গবন্ধু গণবিরোধী কার্যক্রমকে উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা হিসাবে বিবেচনা করেছেন। রাষ্ট্রযন্ত্রের সব ক্ষেত্রে দুর্নীতিমুক্ত শাসন পরিচালনায় তার অঙ্গীকার ছিল নিখাদ। দুর্নীতি নির্মূলে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা ছিল অত্যন্ত যৌক্তিক, যুগোপযোগী এবং খোলামেলা। অকপটেই তিনি এসব বিষয়কে জনগণের সম্মুখে প্রকাশ করতেন এবং এর প্রতিকারে সহযোগিতার আহ্বান করেছেন।


ঘুস-সুদ, মজুতদারি, চোরাকারবারি, চোরাচালানি, অন্যের জমি-বাড়ি দখল ইত্যাদির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু কঠোর ভাষায় বহুবার সাবধান করেছেন। তাদের আইনের আওতায় আনার হুঁশিয়ারি উচ্চারণও ছিল অতি জোরালো। ১৯৭২ সালে ঐতিহাসিক ৭ জুন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘তাদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলতে চাই, যারা শহরে সরকারি বাড়ি, গাড়ি দখল করে আছো, যারা দোকান বা অন্যের জমি দখল করে আছো, যারা মজুত করছো, জিনিসপত্র বিক্রয় করছো না, জিনিসের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছো, তাদের রেহাই নেই। আমি ভিক্ষা করে দুনিয়ার নানা দেশ থেকে জিনিসপত্র আনছি আমার গরিব-দুঃখীদের জন্য। সেই জিনিস যারা লুটপাট করে খাচ্ছো, তাদেরও রক্ষা নাই।’ ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫ সালে জাতীয় সংসদে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আজ দুর্নীতিবাজ, ঘুসখোর, কালোবাজারি, নতুন পয়সাওয়ালা-এদের কাছে আমার আত্মা বিক্রি করতে হবে, অধিকারের নামে আমাদের এদের ফ্রিস্টাইলে ছেড়ে দিতে হবে-কখনো না। কোনো দেশ কোনো যুগে তা দেয়নি। দিতে পারে না। যারা আজকে আমার মাল বিদেশে চালান দেয়, চোরাকারবারি করে, যারা দুর্নীতি করে, এদের বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করতে হবে।’


বর্তমান প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণে চোরাকারবারি-মজুতদারিদের বেপরোয়া অভিপ্রায় সহজেই অনুমেয়। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার কতিপয় কর্মকর্তা বা অসাধু রাজনীতিকদের পৃষ্ঠপোষকতা তাদের শক্তির মূল উৎস রূপে প্রতিষ্ঠিত। সিন্ডিকেট কারসাজিতে অত্যন্ত সিদ্ধহস্ত এসব মাফিয়াচক্র পুরো দেশকেই জিম্মি করে ফেলেছে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো, অবৈধ আমদানি-রপ্তানি, অর্থ পাচার, ঋণখেলাপি, অসৎ ঠিকাদারি এমন কোনো হীন কাজ নেই, যাতে তারা সংশ্লিষ্ট নয়। অর্থলোভী হিংস্র দানবরূপী এসব মানুষ কেন জানি সবার কাছে প্রিয়। মসজিদ-মন্দির-স্কুল-কলেজ-দাতব্যচিকিৎসালয় নির্মাণ, আর্তমানবতার সেবা ইত্যাদি কর্মযজ্ঞে তাদের আসল চরিত্র আড়ালে চলে যাচ্ছে। অনৈতিক-অবৈধ রাজনীতির ক্ষমতা দখলের কদর্য সংঘাত প্রতিনিয়তই জনগণ উপলব্ধি করতে পারছে। শহর-বন্দর-গ্রামীণ জনপদ ও দেশের প্রতিটি অঞ্চলে তাদের স্বরূপ উন্মোচন নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানা গর্হিত পন্থায় উপার্জিত অর্থ দিয়ে সবকিছু তারা দখলে নিচ্ছে। যখন যেখানে যাকে দরকার, তাকে ম্যানেজ করে চলছে।


সম্প্রতি প্রস্তাবিত বাজেটে ১৫ শতাংশ কর প্রদান করে কালোটাকা সাদা করার সুযোগে ঘুস-দুর্নীতিকে কোন যুক্তিতে বৈধ করা হচ্ছে, তা মোটেও বোধগম্য নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আইন-আদালত-আইনজীবী প্রায় সবকিছুই তাদের অর্থের কাছে পরাভূত। বাহিনীভিত্তিক বড় ভাইয়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে কিশোর গ্যাং গঠন, মাদক-অস্ত্র ব্যবসা এর অন্তর্ভুক্ত। বহুতল ভবন নির্মাণ, বড় মাপের সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামো নির্মাণ, জলাশয় ভরাট করে ইটভাটা-শিল্প স্থাপনে এদের ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। ইত্যবসরে সাধারণ মানুষ হারাতে বসেছে সৎ উপায়ে কষ্টার্জিত জমি-ধনসম্পদ-পুকুর-জলাশয়-দোকান-ক্ষুদ্রব্যবসা ইত্যাদি প্রায় সবকিছু। নিরীহ জনগণ চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে শুধু নির্বাক তাকিয়ে থাকছে। অর্থ-ক্ষমতার প্রভাবের কাছে তারা সম্পূর্ণ নতিস্বীকারে বাধ্য হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই প্রচার-সংবাদমাধ্যমসমূহের চিত্রে মানুষের হাহাকার-আর্তনাদ-কাতরতা প্রকাশিত হচ্ছে। সামান্য প্রতিবাদ করার বাকশক্তিও হারাতে বসেছে মানুষ। ফলাও করে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রম প্রায়ই পরিচালিত হচ্ছে। এতসব উদ্যোগ কোনোভাবেই দুর্বৃত্তায়নকে রোধ করতে পারছে বলে মনে হয় না। কার্যকর কোনো আইনি ব্যবস্থা এদের বিরুদ্ধে পরিলক্ষিত নয়। পক্ষান্তরে অনেক ক্ষেত্রে নির্দোষ-অসহায়-নিরীহকে নানা কারসাজিতে ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও