একটি মৃত্যু, অনেক প্রশ্ন

www.ajkerpatrika.com চিররঞ্জন সরকার প্রকাশিত: ২৮ মে ২০২৪, ১১:২১

সম্প্রতি ভারতের কলকাতায় একটি ফ্ল্যাটে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন বাংলাদেশের ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। এই মৃত্যু নিয়ে দেশজুড়ে নানা আলোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। একজন সংসদ সদস্যের দেশের বাইরে ‘চিকিৎসা’ করাতে গিয়ে নির্মমভাবে খুন হওয়ার ঘটনাটি বেদনার শুধু নয়, অত্যন্ত ভয়াবহও বটে। আর তাঁকে শুধু হত্যা করাই হয়নি, তাঁর শরীর থেকে মাংস ছাড়িয়ে টুকরা টুকরা করে হলুদ মেখে তা প্রথমে ফ্রিজে রাখা হয়েছে। এরপর স্যুটকেসে ভরে খালে ফেলে দেওয়া হয়েছে।


অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তাঁর শরীরের অংশবিশেষ খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাওয়া যাবে বলেও মনে হয় না। বলা হচ্ছে, অত্যন্ত শান্ত মাথায়, পরিকল্পনা করে হত্যা করে তাঁর অস্তিত্ব গায়েব করে ফেলা হয়েছে। এমন ঘটনা একেবারেই বিরল।


এটাও বলা হচ্ছে, ভারতের মাটিতে বসে পৈশাচিক এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে বাংলাদেশেরই কয়েকজন মানুষ। দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে এই খুনের ঘটনার পেছনে সীমান্তে চোরাচালান নিয়ে বিরোধের বিষয়কে তুলে ধরা হচ্ছে। কোনো কোনো গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, ব্যবসায়িক লেনদেনের সম্পর্কে কিছু বিষয়ে এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের ওপর ক্ষোভ ছিল তাঁর বন্ধু ও হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে সন্দেহভাজন আক্তারুজ্জামান শাহীনের। ২০০ কোটি টাকার ভাগাভাগি নিয়ে নাকি আনারকে খুন করা হয়। তাঁকে আগেও একাধিকবার খুনের চেষ্টা করা হয়েছে বলে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।


এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির কথা মনে করিয়ে দেয়। সৌদি রাজতন্ত্রের এই সমালোচককে ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে গিয়ে খুন করার পর শরীর টুকরা টুকরা করা হয়। হত্যার পর ওই ব্যক্তিরা তুরস্ক ছেড়ে চলে যায়। এমপি আনারকেও হত্যার পর টুকরা টুকরা করা হয়। ঘটনার মূল হোতারা বিমানে করে নিরাপদে কলকাতা ত্যাগ করে।


খাসোগি হত্যায় যুক্ত ছিল একটা বড় রাষ্ট্রশক্তি। আর এমপি আনার হত্যায় যুক্ত একটি আঞ্চলিক চোরাচালানি চক্র। খাসোগি হত্যার শিকার হয়েছেন প্রতিবাদী সত্তার কারণে। পক্ষান্তরে আনার খুন হয়েছেন অনৈতিক কোনো ব্যবসার কর্তৃত্ব অথবা অর্থ ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে!
আনার হত্যার ঘটনাটি ঠিক সিনেমার গল্পের মতো। কলকাতার নিউ টাউনে যে ফ্ল্যাটে আনারকে হত্যা করা হয়, সেটি এই আক্তারুজ্জামান শাহীনের ভাড়া করা। তিনি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. সহিদুজ্জামানের ছোট ভাই। তাঁরা ছিলেন একে অপরের বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার। তিনি যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এবং মার্কিন পাসপোর্টধারী।


উভয়ের বিরুদ্ধেই সোনা চোরাচালান, হুন্ডিসহ আন্তর্দেশীয় বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া আনার ভারতে গিয়ে যে বন্ধুর বাসায় উঠেছিলেন, সেই গোপাল বিশ্বাসও নাকি সোনা চোরাচালানে জড়িত। ঘটনায় একটি নারী চরিত্রও আছে। ব্যবসায়ী আক্তারুজ্জামান শাহীন এমপি আনারকে হত্যার জন্য টোপ হিসেবে ব্যবহার করেন তাঁর বান্ধবী শিলাস্তি রহমানকে। কলকাতা নিউ টাউনের অ্যাপার্টমেন্টের সিসিটিভি ফুটেজে এমপি আনারকে শিলাস্তির সঙ্গে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। এই খুনের কুশীলবেরা নাকি সবাই পরস্পরের পরিচিত।


এই খুনের ঘটনায় খুলনা জেলার ‘সর্বহারা’ বা ‘চরমপন্থী’ কানেকশনও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। আনারকে খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন সৈয়দ আমানুল্লাহ। তাঁর গ্রামের বাড়ি খুলনার ফুলতলার দামোদর ইউনিয়নে। তিনি একসময় চরমপন্থী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গণেশ নামে এক ব্যক্তিকে খুন করে যশোরের অভয়নগর থানার এক মামলায় আমানউল্লাহ সাত বছর (১৯৯১-৯৭) জেল খাটেন। ইমান আলী নামের আরেক ব্যক্তিকে খুনের ঘটনায় ২০০০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আবার জেল খাটেন তিনি।অবশ্য আমানউল্লাহর আসল নাম শিমুল ভূঁইয়া; যিনি খুলনায় চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান ছিলেন। শিমুল ভূঁইয়াই পরে আমানউল্লাহ হিসেবে নিজেকে পরিচিত করান।


ভারতে গ্রেপ্তার হওয়া ‘কসাই’ জিহাদের বাড়িও খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর ইউনিয়নে। গ্রামের বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও একটি ছোট ছেলে রয়েছে। দেড় বছর ধরে জিহাদ ভারতে রয়েছেন। জিহাদ ডাকাতি ও শেখ আনসার আলী হত্যা মামলার আসামি। এমন একজন ব্যক্তি কীভাবে পুলিশের চোখে ধুলা দিয়ে ভারতে চলে গেলেন, কীভাবেই-বা সেখানে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে থাকলেন, সেই প্রশ্নের কোনো জবাব নেই।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও