ইসরায়েলের সামনে শেষ সুযোগ
ইসরায়েলের কাছে একটা মাত্র পথ আছে, যদিও এটা সে বেছে নেবে না। আমরা এখন যে খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছি, তাতে পতিত হওয়া থেকে রক্ষা পেতে একমাত্র উপায় হলো গত শুক্রবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) নির্দেশ মেনে নেওয়া। আইনের শাসন দ্বারা পরিচালিত একটি রাষ্ট্রের এমন আচরণই করা উচিত। বৈশ্বিক পরিবারের একটি বৈধ সদস্য হতে চাওয়া যেকোনো রাষ্ট্রের ব্যবহার অবশ্যই এমন হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উচিত, এই প্রতিশ্রুতি দেওয়া যে তিনি শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘোষিত আদেশ পরিপালন করবেন। এর মধ্য দিয়ে অল্প সময়ের জন্যে হলেও নরকের দরজাগুলো খুলে যাওয়ার যে হুমকির মধ্যে ইসরায়েল আছে, তা বন্ধ থাকবে। যে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আদালতকে মান্য করে, তা হবে আইনশাসিত রাষ্ট্র এবং সে রাষ্ট্র অবশ্যই সম্মান পাবে। [ফিলিস্তিনের গাজার রাফা এলাকায় অবিলম্বে অভিযান বন্ধ করতে ইসরায়েলকে নির্দেশ দিয়েছেন আইসিজে। একই সঙ্গে গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ প্রবেশ নিশ্চিত করতে উপত্যকাটির দক্ষিণের রাফা ক্রসিং খুলে দিতে ইসরায়েলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে গত শুক্রবার (২৪ মে) নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে অবস্থিত আইসিজের কার্যালয়ে।
হ্যাঁ বলার মধ্য দিয়ে নেতানিয়াহু শুধু রাফায় অর্থহীন রক্তপাত থেকে ইসরায়েলকে রক্ষা করবেন না, বরং তিনি এই রাষ্ট্রের ওপর ধেয়ে আসা আন্তর্জাতিক চাপকেও থামাতে পারবেন। যুদ্ধ–পূর্ববর্তী আন্তর্জাতিক অবস্থান ফিরিয়ে আনার জন্য রাফায় লড়াই শেষ করা তথা গোটা যুদ্ধ বন্ধ করা এখন সম্ভবত ইসরায়েলের শেষ সুযোগ। এটা খুব বেশি কিছু নয়, কিন্তু এটা আজকের চেয়ে অনেক বেশি কিছু।
ইসরায়েল যদি আইসিজের আদেশ অবজ্ঞা করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং প্রায় নিশ্চিতভাবেই তা করবে [এবং করছেও বটে], তাহলে সে আসলে নিজেকে একটি অচ্ছুত রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করতে যাচ্ছে। আর এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে কয়েক বছর লেগে যাবে এবং তা–ও অনেক অসহনীয় মূল্য দিয়ে, যার কিছু অংশ হবে ব্যক্তিগত, মানে প্রত্যেক ইসরায়েলিকেই তা চুকাতে হবে।
গভীর খাদ যখন মাত্র এক পা দূরে দাঁড়িয়ে, তখন ইসরায়েলকে দুটি জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে: যুদ্ধ বন্ধ করা এবং [নেতানিয়াহুর] সরকারকে পাল্টানো। বিশ্বের দুটি শীর্ষ আদালত তা–ই করতে বলেছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসির) প্রধান কৌঁসুলি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানিয়েছেন। আর আইসিজে রাফায় অভিযানের সমাপ্তি টানতে বলেছে।
যদি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়, তাহলে তাঁদেরকে সরকার ছেড়ে দিতে হবে (অবশ্য তাঁরা যদি রেহাই পেতে চান)। আর রাফায় অভিযানের সমাপ্তি টানা মানে সাত মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধেরও সমাপ্তি হওয়া এবং জিম্মি হওয়া ইসরায়েলিদের মুক্তি পাওয়া। তবে ইসরায়েল তো কোনো নির্দেশই মানবে না। তার জন্য তো এগুলো অতিমাত্রায় যৌক্তিক, সঠিক ও ন্যায্য হয়ে যায়!
ইসরায়েল আইসিজের আদেশ এড়ানোর জন্য পথ খুঁজছে এবং বরাবরের মতো এবারও ওয়াশিংটনের ওপর ভর করেছে আন্তর্জাতিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে। এ রকম বড় মাপের মূর্খতার কথা চিন্তা করাও কঠিন। আমরা অবশ্যই আশা করতে পারি যে এবার অন্তত যুক্তরাষ্ট্র গোটা দুনিয়া ও আন্তর্জাতিক আইনকে অবজ্ঞা করার ক্ষেত্রে একটা সীমারেখা টানবে এবং তা তার অনুগত রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের স্বার্থেই।