মূল্যস্ফীতি কমানোর আলাপ কি বাদ দিতে হবে?
গেল বছর কাঁচা মরিচের দাম বাড়তে বাড়তে হয়ে গিয়েছিল কেজিপ্রতি ৭০০ টাকা। এবারও কাছাকাছি সময়ে এর দাম বাড়তে শুরু করেছে এবং কারণ অভিন্ন-তাপপ্রবাহ; এরই মধ্যে ঝড়বৃষ্টি বেড়ে যাওয়া। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ সময়টায় কাঁচা মরিচের ঘাটতি হয়ে থাকে। সময়মতো আমদানি প্রয়োজন। গেল বছর এটা আমদানি করতে হয়েছিল ভারত থেকে। এবারও হয়তো কাঁচা মরিচ আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে হবে দ্রুত। আমদানি ব্যয় কম পড়লে এটা কমে বিক্রি করা যাবে। তাতে কমে আসবে দাম।
প্রসঙ্গটা তোলা হলো বলতে যে, অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বোধহয় শিখছি না। সংকট সৃষ্টির পর নিচ্ছি সিদ্ধান্ত। ততক্ষণে ভোক্তার পকেট যাচ্ছে খালি হয়ে আর এটা ঘটছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলাকালে। খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি এখন। বিআইডিএস-এর হিসাবে আরও বেশি। অন্যরা বলছেন, পরিস্থিতি আরও খারাপ। এ অবস্থায় কাঁচা মরিচের দাম বাড়লে সেটাও গায়ে এসে লাগবে। অবস্থা বুঝে তা আমদানি করা যেতেই পারে। এক্ষেত্রে এলসি জটিলতা হবে না। সরকার তো আমদানি অনেক কমিয়ে এনেছে এর মধ্যে। গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের আমদানিও কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। কাঁচা মরিচ আমদানিতে তাই বেগ পেতে হবে না।
খাদ্যশস্য আমদানি অবশ্য ধারাবাহিকভাবে কমছে ভারত থেকে। তারা রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করাতেও এমনটি ঘটছে। তবে কাঁচা মরিচ রপ্তানি বোধহয় নিরুৎসাহিত করছে না। সম্প্রতি পেঁয়াজ আমদানির সুযোগও তৈরি হয়েছে দেশটি থেকে। তবে দামে পোষাচ্ছে না বলে আমদানি কম। এদিকে মাসখানেক আছে কুরবানি ঈদের। খামারে গরু কিনতে ‘বুকিং’ দেওয়ার খবর মিলছে। গরু পালন ব্যয় বেশি বলে এবার গরুর দাম নাকি বেশি। মসলার বাজারের খবরও ভালো নয়। চোরায় পথে চিনি আসার খবর রয়েছে। মসলার দামে দুদেশে অনেক ব্যবধান থাকলে সেটাও চোরায় পথে আসবে। কাঁচা মরিচের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে এটাও চোরায় পথে এলে অবাক হওয়া যাবে না।
খামারিদের কারও কারও অভিযোগ-কিছু গরুও আসছে চোরায় পথে। দেশ কুরবানির গরুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও দাম অনেক। এ কারণে গোমাংসের দামও কমছে না। মাঝে নানা কাণ্ডকীর্তির পর বাজারটা ফিরে এসেছে আগের অবস্থায়। গোমাংসের দাম কমাতে এটাও আমদানির প্রস্তাব রয়েছে। এতে অবশ্য উচ্চহারে আরোপিত আছে কর-শুল্ক। আগামী বাজেটে যে ৩০০ পণ্যে শুল্কছাড়ের কথা শোনা যাচ্ছে, তাতে গোমাংস আছে কি? ভারত থেকে আনলে অবশ্য আনতে হবে মহিষের হিমায়িত মাংস। বিদ্যমান শুল্কেও এর দাম নাকি পড়বে অনেক কম। ‘সুনিয়ন্ত্রণে’ রাখা গেলে খামারিদের ওপরও এর বেশি প্রভাব পড়বে না। সবাই আমদানিকৃত মাংস খেতে হুমড়ি খেয়ে পড়বে, তা তো নয়।
৪৫০-৫০০ টাকা কেজিতে হিমায়িত মাংস কেনাও বহু মানুষের জন্য কঠিন এখন। ব্রয়লার আর সোনালি মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ায়ও তারা বাড়তি সমস্যায় পড়েছে। মাছের দাম বেড়েছে নতুন করে। রমজানের পর এটা প্রত্যাশিত ছিল না। নজিরবিহীন তাপপ্রবাহ নাকি এজন্য মূলত দায়ী। গ্রীষ্মকালীন সবজির দামও বেশি। এ অবস্থায় কাঁচা মরিচের দাম বাড়লে সেটা খবর হবে বৈকি। পেঁয়াজ আর আলুর দামও গেলবারের একই সময়ের তুলনায় অনেক। এ অবস্থায় খোদ সরকারকে চাল আমদানিতে নামতে হতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে। তাপপ্রবাহ ও ঝড়বৃষ্টিতে বোরো মার খেলে চাল আমদানি করতে হবে বৈকি। ইতোমধ্যে বেসরকারি খাতকে কিছু চাল আনার অনুমতি দিয়ে রাখা হয়েছে। তারা অবশ্য আমদানি করবে পরিস্থিতি বুঝে। এ খবর স্বস্তির যে, আগামী বাজেটে সরকার খাদ্যশস্য আমদানি বাবদ বেশি বরাদ্দ রাখছে। অর্থাভাবে আমদানি যেন ব্যাহত না হয়। তবে সরকারিভাবে চাল আমদানি করতে না হলেই ভালো। বরং উচিত দেশীয় কৃষকের কাছ থেকে কিনে মজুত বাড়ানো। এতে কৃষকের ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা। মজুতটাও বাড়ানো দরকার এজন্য যে, সামনে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচিগুলো জোরদার করতে হবে। দারিদ্র্য পরিস্থিতির তো অবনতি ঘটছে টানা উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে। সেটা প্রকাশ পাচ্ছে বিবিএস-এর জরিপেও।
- ট্যাগ:
- মতামত
- মূল্যস্ফীতি
- নিত্যপণ্যের দাম