তাঁরা কি ভয় নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়জীবন পার করে দেবেন?
ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা নামের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী গত শুক্রবার রাতে আত্মহত্যা করেছেন। মৃত্যুর আগে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর এক সহপাঠী এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির সহকারী প্রক্টরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে গিয়েছেন। মৃত্যুর জন্য এই দুজনকে তিনি নিজেই দায়ী করে গিয়েছেন তাঁরই লেখা একটি সুইসাইড নোটে।
সুইসাইড নোটের ভাষ্য অনুযায়ী, মেয়েটি তাঁর বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন প্রক্টরের কাছে। যাঁর কাছে তিনি প্রতিকার চাইতে গিয়েছিলেন, সেই শিক্ষকই উল্টো তাঁকে হয়রানি করেছেন। বাজে ভাষায় গালি দিয়েছেন। দিনের পর দিন বিচার চেয়েও পাননি।
মেয়েটি আত্মহত্যা না করলে হয়তো অন্য আর দশটা ঘটনার মতো এ ঘটনাও আড়ালেই থেকে যেত। অবন্তিকার মৃত্যুর পর বেশ কিছু প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে—বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হচ্ছেন কারা? কেন ক্লাসরুমে শিক্ষকদের প্রশ্ন করা যায় না? কেন প্রশ্ন করলে শিক্ষকেরা উল্টো বিরক্ত হন? কেন কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যায় না? কেন প্রতিবাদ করলে উল্টো প্রতিবাদকারীকেই একসময় হাল ছেড়ে দিয়ে মৃত্যুর মতো পথ বেছে নিতে হয়?
কারণ, কখনোই এসব ঘটনার সঠিক বিচার হয় না। কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও কখনো দেওয়া হয় না। যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় একটা ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। ছাত্রছাত্রীরা সব সময় একটা ভয়ের থাকেন—এই না আমাকে ফেল করিয়ে দেবেন!
আপনি যদি সব সময় ভয়ের মধ্যে থাকেন, তাহলে আদৌ কি আপনার পক্ষে স্বাভাবিকভাবে নিজের কাজ পরিচালিত করা সম্ভব? তাহলে আমাদের ছেলেমেয়েগুলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় গিয়ে কীভাবে নিজেদের বিকশিত করবেন?
অবন্তিকার ঘটনার পর এখন অন্য আরও কিছু ঘটনা হয়তো সামনে আসতে শুরু করবে। যেমন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের এক ছাত্রী অবন্তিকার ঘটনার প্রতিবাদ করতে এসে বলেছেন, তিনি নিজেও এমন ঘটনার ভুক্তভোগী। দুই বছর আগে তাঁর বিভাগের এক শিক্ষক তাঁকে যৌন হয়রানি করেছিলেন। ওই ঘটনার প্রতিবাদ করে তিনি বিভাগে বিচার চাইলে বিভাগের শিক্ষক নাকি তাঁর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন।
একটি টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেয়েটি বলেছেন, তাঁকে বিভাগে একঘরে করে রাখা হয়েছে। তাঁর ক্লাসমেটরা কেউ তাঁর সঙ্গে ভয়ে কথা বলেন না। সবাই ভয়ে থাকেন—কথা বললে যদি স্যাররা ফেল করিয়ে দেন! ওই ছাত্রী অভিযোগ করেছেন, অনার্স ফাইনাল পরীক্ষায়ও ফেল করিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি এটাও বলেছেন, এসব কথা গণমাধ্যমে বলায় তাঁর জীবন এখন হয়তো হুমকির সম্মুখীন হবে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা