পশ্চিমা নেতৃত্বের কী নিদারুণ অবক্ষয়
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের এক দল যুবক বছরের অস্বাভাবিক উষ্ণ সন্ধ্যায় একটি ক্যাফেতে আড্ডা দিচ্ছিল। তাদের আলোচনার বিষয় ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। কিছুটা জাতিগত অহম থেকে তারা সম্ভাব্য প্রধান দুই প্রার্থী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে উপহাস করে। বাইডেনের বয়স ৮১ বছর, ট্রাম্পের ৭৭। যুক্তরাষ্ট্রের একজন আইনজীবী জো বাইডেনকে ‘কম স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন বয়স্ক ব্যক্তি’ বলে অভিহিত করেছেন। এ শব্দগুলো একজন প্রেসিডেন্টের প্রতি মোটেই আস্থাজাগানিয়া নয়। তবে বাইডেন এ মন্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করে আরও সংকটে পড়েছেন। তিনি মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসিকে ‘মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট’ বলেছেন। এদিকে ট্রাম্পের প্রার্থিতা বিষয়ে নতুন কোনো প্রমাণের প্রয়োজন নেই। এ অবস্থায় প্যারিসের নামকরা কলেজের এক শিক্ষার্থী ক্লাউডিনের প্রশ্ন– ‘যুক্তরাষ্ট্র কি সর্বোচ্চ এটাই দিতে পারে?’
এ তরুণ প্রজন্ম যথেষ্ট সচেতন। আটলান্টিকের ওপারের মার্কিন প্রেসিডেন্টের হাস্যকর নির্বাচন সম্পর্কে তারা জানে। তবে ইউরোপের পরিস্থিতিও কম হাস্যকর ও বিপজ্জনক নয়। আমি যখন তাদের ইউরোপের প্রধান নেতা জার্মানির ওলাফ শলৎস এবং ফ্রান্সের ইমানুয়েল মাখোঁ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি, তারা উদাসীন ভাব করে কাঁধ ঝাঁকায় এবং ‘বোকা’ ও ‘ব্যক্তিত্বহীন’ শব্দ উচ্চারণ করে আলোচনায় প্রবেশ করে। প্যারিসের লেস হ্যালেসের এসব তরুণ কিছুক্ষণ আগেই গাজার রাফাহ অঞ্চলে ইসরায়েলি বোমা হামলা বন্ধে আয়োজিত এক বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। এ বছর ফ্রান্সে কাটানো ইংল্যান্ডের এক তরুণ বলেছিল, ‘রাফাহ জায়গাটির আয়তন লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরের সমান’। তারা মনে করছে, ইউরোপের নেতাদের কেউই গাজায় সংঘটিত মৃত্যু ও ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে স্পষ্টভাবে কিছু বলেননি। বস্তুত এসব তরুণ মনে করছে, এই অনুভূতি কেবল তাদের একার নয়; তাদের অনেক সহপাঠীর একই অনুভূতি।
প্রতি সপ্তাহে ইউরোপে শলৎস ও মাখোঁর জনপ্রিয়তা কমছে। জার্মান বা ফরাসিদের কেউই বিশ্বাস করে না যে, এসব লোক গাজা বা ইউক্রেনের অর্থনৈতিক অবস্থা ফিরিয়ে দিতে বা যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে। গ্লোবাল নর্থ তথা পশ্চিমা বিশ্ব যে জাতিসংঘের ফিলিস্তিন সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সির (ইউএনআরডব্লিউএ) তহবিল কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে জন্য ক্লাউডিন হতাশ। উমর নামে আরেক যুবক যোগ করে, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা বলেছেন, তাঁর দেশ ইউএনআরডব্লিউএতে তহবিল দেবে। সবাই তাঁকে সমর্থন দেয়।
এর এক সপ্তাহ পর আমরা খবর পাই, যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর একজন সৈনিক অ্যারন বুশনেল আত্মাহুতি দিয়েছেন এই বলে– তিনি আর ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যায় অংশগ্রহণ করতে চান না। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জ্যা-পিয়েরেকে বুশনেলের আত্মহত্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বিষয়টি নিয়ে ‘সচেতন’ এবং এটি ‘ভয়াবহ ট্র্যাজেডি’। কিন্তু যুবকটি কেন আত্মাহুতি দিয়েছেন, সে সম্পর্কে তারা কোনো বিবৃতি দেয়নি এবং উত্তেজিত মানুষকে শান্ত করার মতো কিছুই করেনি।
- ট্যাগ:
- মতামত
- নেতৃত্ব
- পশ্চিমা বিশ্ব