কোন গলিতে কার বাড়ি কে করে দখল?
রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের ৩৩১ নম্বর বাড়িটি এক অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব বিশেষত গত ছয় বছর যেভাবে দখলে রেখেছেন, তাতে চক্ষু চড়কগাছ না হয়ে উপায় নেই। সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৩ সালে যুগ্ম সচিব থাকাকালে ড. আশরাফুল ইসলাম পূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন আবাসন পরিদপ্তরের পরিচালক পদে নিয়োগ পান। তখন তিনি ১০ কাঠার প্লটের ওপর ছায়াঘেরা অত্যন্ত আকর্ষণীয় তিন তলাবিশিষ্ট সরকারি বাড়িটি নিজেকে নিজে বরাদ্দ দিয়ে সেখানে সপরিবারে বসবাস শুরু করেন।
যেখানে অনেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বেইলি রোডে ২২শ থেকে ২৩শ বর্গফুটের সরকারি ফ্ল্যাটে থাকছেন, সেখানে একজন যুগ্ম সচিব কী বিবেচনায় এমন বাড়ি নিয়েছিলেন, সেটা কৌতূহলোদ্দীপক বিষয়। অবশ্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য বাসা বরাদ্দ দেওয়ার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একজন যদি একটু ‘উদার’ হয়ে পছন্দসই একটা বাড়িতে থাকতে চান, তাহলে বিষয়টা উদারভাবে দেখলে নিশ্চয় বিরাট ক্ষতি হয় না; বিশেষত তিনি যেহেতু অচিরেই অতিরিক্ত সচিব হয়ে যান এবং সরকারি নিয়ম মেনে মূল বেতনের ৬০ শতাংশ ভাড়া হিসেবে সরকারি কোষাগারে জমা দেন।
যা হোক, তিনি তো আর অন্তত তখন পর্যন্ত বর্তমান পূর্ত সচিবের মতো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বেইলি রোডের মতো অভিজাত পাড়ায় সরকারি ডুপ্লেক্স বাড়িতে থেকেও বেতনের মাত্র সাড়ে ৭ শতাংশ তথা ৫ হাজার টাকা ভাড়া দেননি। (১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪)। উপরন্তু পূর্ত সচিব যেভাবে মন্ত্রিপাড়ায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নির্মিত বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ও তাঁর তত্ত্বাবধানকারী প্রকৌশলীর বাসা দখল করে ভবনটিকে রীতিমতো সরকারের অর্ধকোটি টাকা খরচ করিয়ে ডুপ্লেক্সে রূপ দেন, তেমন কিছুও করেননি।
গোল বেধেছে ড. আশরাফুল অবসর গ্রহণের পর। প্রতিবেদন অনুসারে, তিনি ২০১৭ সালের ৮ জুন পিআরএল বা অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে যান। এক বছর পর ওই ছুটি শেষ হয়। নিয়ম অনুযায়ী তখনই তাঁর সরকারি বাসা ছেড়ে দেওয়ার কথা। বিশেষ প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে নতুন বাসা খোঁজার জন্য আরও দুই মাস তাঁর বাড়িতে থাকার সুযোগ ছিল। কিন্তু ছুটিতে যাওয়ার আগে তিনি একটি অসাধু কৌশল নেন। বাড়িটিকে সরকারের ‘পরিত্যক্ত সম্পত্তি’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেন; আইন অনুযায়ী যেখানে কোনো সরকারি কর্মকর্তার বসবাস করার সুযোগ নেই।
এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে পেনশন তুলে নেন। ফলে তাঁর কাছ থেকে বাসা ভাড়া ও ইউটিলিটি বিল কর্তনের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। চালানের মাধ্যমে নিজে থেকে সেগুলো পরিশোধের গরজও বোধ করেননি তিনি। গত বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ওই বাড়ির বিপরীতে তাঁর কাছে সরকারের পাওনা দাঁড়ায় প্রায় ৩০ লাখ টাকা। মজার ব্যাপার হলো, এর পর আরও প্রায় এক বছর অতিবাহিত হলেও সরকারি আবাসন পরিদপ্তর সেই ভাড়া হিসাবই করেনি।
এটা যে নিছক ড. আশরাফুলের ওপর সংস্থাটির বিরক্তির ফসল নয়, বরং তাঁর ক্ষমতার ফসল– তা আমরা বুঝতে পারি বিশেষত গত এক বছরে বাড়িটি ঘিরে ড. আশরাফুলের কিছু তৎপরতা দেখে। ভাড়া ও বিল বিষয়ে আবাসন পরিদপ্তর কয়েক দফা নোটিশ দিলেও তিনি তা আমলে নেননি। উল্টো নাকি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন– পরিত্যক্ত বাড়ির আবার ভাড়া কীসের?
- ট্যাগ:
- মতামত
- বাসা ভাড়া
- পরিত্যক্ত ভবন
- সরকারি আবাসন