গণমাধ্যম কি ‘ভিউ’র কাছে জব্দ?
সাংবাদিকতা এখন কৈশোরের চঞ্চল কাল অতিক্রম করছে। যাকে ডাকা হয় ‘নিউ মিডিয়া’ বলে। গণমাধ্যমের সেই নতুনেরও বয়স বেড়েছে। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বালখিল্যতা।
সাধারণভাবে প্রত্যাশা ছিল, 'নিউ মিডিয়া' বয়স বাড়লে পরিণত হবে। তৈরি হবে ব্যক্তিত্ব। এই প্রক্রিয়ায় যাওয়ার লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছে না। বরং শিশু-কৈশোর সুলভ আচরণ বাড়ছে। এই কাণ্ডটি যে কেবল বাংলাদেশে ঘটছে তা নয়। বিশ্বজুড়েই বিরাজমান।
তবে বৈশ্বিক উঠোনে ব্যক্তিত্ব তৈরি বা সাবালকত্বের লক্ষণ ফুটে উঠলেও বাংলাদেশ, বেশ খানিকটা ভারতের বেলাতে তার রেখা দৃশ্যমান হয়ে উঠছে না।
নিউ মিডিয়া, গোষ্ঠী-প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিতে ব্যক্তিকে শক্তিশালী করার প্রণোদনা বা শক্তি জুগিয়েছে। প্রতিষ্ঠানের বহুমাত্রিকতা ধারণ করেছে ব্যক্তি। প্রতিষ্ঠানের যে লাট বহর দরকার হয় সেটি ব্যক্তি একাই সামাল দিতে পারে। কনটেন্ট বা আধেয় নিজে তৈরি করছে, সম্পাদকের গুরু দায়িত্বটিও নিজের কাঁধে রাখছে।
প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতার স্বাদ না পেলেও ব্যক্তি পাচ্ছে এক প্রকার স্বাধীন গণমাধ্যমের স্বাদ। এখানে সে নিজের ইচ্ছে বা পছন্দমতো কনটেন্ট তৈরি করতে পারছে। কতটুকু প্রচার হবে সেই সিদ্ধান্তটিও তার নিজের। ফলে নিজের রুচি, বাজারে ছেড়ে দিতে পারছে কোনো দরজা, কপাটের বাঁধা ছাড়াই।
প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এই কাজটি করা সম্ভব নয়। ছিল না এতদিন। কিন্তু যখন দেখা গেল ব্যক্তি, রুচির ডিজিটাল আধেয়পণ্য লোকে দেখছে, পছন্দের আঙুলি দেখাচ্ছে এবং অন্তর্জাল দুনিয়ায় দ্রুত সহভাগ করে নিচ্ছে, তখন পুরাতন গণমাধ্যম একধরনের হীনমন্যতায় ভুগতে শুরু করলো। তারা ভাবলো হয়তো পাঠক, দর্শক হারিয়ে ফেলছে তারা।
তাদের পাঠ ও দৃশ্যমাধ্যম এই বুঝি ফেলনা ভাগাড়ে নিক্ষেপিত হলো। এই হীনমন্যতার পাশাপাশি লোভও যুক্ত হলো। যত দেখা তত টাকার যে প্রলোভন নিউ মিডিয়ায় আছে, সেই প্রলোভনের গুড়ের ভাগও ছাড়তে রাজি হলো না পুরাতন। তাই তাকে নেমে পড়তেই হলো, নিতেই হলো ব্যক্তি রুচির পিছু।
- ট্যাগ:
- মতামত
- গণমাধ্যম
- সংবাদমাধ্যম