আবারও করোনার উৎপাত থাকছে কোথায় দৃষ্টিপাত?
খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, দুই-তিন-চার বছর আগে প্রতিনিয়ত আমাদেরকে আলফা, বিটা, ডেলটা, অমিক্রন ইত্যাদি নামের নানান করোনা ভাইরাসের কথা শুনতে হয়েছে। এই গ্রিক লেটারগুলোকে করোনা মহামারির বদৌলতে প্রথমবার উচ্চারণ করতে হয়েছে আপামর অনেক জনসাধারণকে|
জীবন সুরক্ষাকারী ভ্যাক্সিনও নিতে হয়েছে| কেউ কেউ শুধুমাত্র প্রথম ডোজ, কেউ আবার প্রথম দুটি, প্রথম তিনটি, আবার অনেকে চারটি ডোজও নিয়েছি। নানান ধরনের স্বাস্থ্যবিধি, বিধি নিষেধ এবং ফরমায়েশ মানতে হয়েছে বিশেষ করে মহামারীর প্রথম দিকের দিনগুলিতে। পরবর্তীতে স্বাস্থ্যবিধি এবং সুরক্ষার নানান বটিকার কথা কর্ণপাত করতে হয়েছে। এখনো চতুর্থ ডোজ নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।
এই মহামারির কারণে অনেক প্রাণ ঝরেছে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে| সেটি শ্রেণি জাত পাত ভেদে না ঘটায় তা সবার মনে ভয়ংকর এক অজানা আশঙ্কা বা আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল| বাংলাদেশে সাড়ে বিশ লাখ রিপোর্টেড আক্রান্তের বিপরীতে এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুবরণ করেছে প্রায় সাড়ে ২৯ হাজার মানুষ| অর্থাৎ প্রতি ২০০ জন আক্রান্তের বিপরীতে তিনজন মৃত্যুবরণ করেছে|
যাত্রী কল্যাণ সমিতি এবং বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা যথাক্রমে ৭৯০২ এবং ৫০২৪| এই দুটি সংখ্যার গড় ধরলেও দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ছয় হাজার| অর্থাৎ গত চার বছরে সড়ক দুর্ঘটনা জনিত মোট মৃত্যুর সংখ্যা গড় পড়তায় প্রায় করোনা মহামারির মোট মৃত্যু সংখ্যার কাছাকাছি হবে এমনটি অনুমেয় করা যায় খুব সহজেই|
তাহলে প্রশ্ন জাগে, প্রায় সমান সংখ্যক মৃত্যু সংখ্যা হওয়া সত্ত্বেও সড়ক দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যুঝুঁকি করোনা মহামারির মৃত্যু ঝুঁকির মত আলোড়িত করতে কেন পারেনি বা পারছে না কাউকেও| না আমাদেরকে, না সমাজকে, এমনকি রাষ্ট্রকেও না| এই চিত্রটি পৃথিবীর অন্যান্য দেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশে যেমন ভারত, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, এবং নেপালেও একই রকমভাবে ঘটতে দেখা যায়| তাত্ত্বিকভাবে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া খুবই সহজ| উত্তরটি হল করোনাভাইরাসে মৃত্যু ঝুঁকি সড়ক দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যু ঝুঁকির তুলনায় অনেক বেশি ছিল| এবং করোনাভাইরাসে মৃত্যু ঝুঁকির প্রভাব সার্বজনীন ছিল|