এটাই কি বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ?
গত ২৬ ডিসেম্বর দৈনিক সমকালে ‘নির্যাতনে শুধু কাতরিয়েছি চিৎকারও করতে পারিনি’ শীর্ষক খবরটা পড়তে গিয়ে বারবার মনে এই প্রশ্ন জাগছিল যে, এটাই কি বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ? মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ?
খবরে প্রকাশ, যশোরের এক রিকশাচালক ইউনুচের বাড়িতে চারজন ব্যক্তি র্যাব পরিচয়ে ঢুকে তাঁর হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে, মেয়ের হিজাব দিয়ে মুখ বেঁধে লাঠি দিয়ে নির্যাতন করতে থাকেন। ইউনুচকে হাত-পা বেঁধে ঝোলানোরও হুমকি দেন। নির্যাতনের কারণে ইউনুচ বর্তমানে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পত্রিকার খবর অনুযায়ী, ইউনুচের দাবি– তাঁর নামে কোনো মামলা নেই। সমকাল আরও জানাচ্ছে, যশোর জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী বলেন, আঘাতের কারণে ইউনুচের শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্ত জমে গেছে। ইউনুচের নিজের ভাষ্য অনুযায়ী, র্যাব সদস্যরা পায়ে আঘাত করার কারণে তাঁকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে হচ্ছে। ধর্মপ্রাণ ইউনুচ কোরআন শরিফ এবং তাঁর মায়ের মাথার ওপর হাত রেখে তাঁর কাছে অস্ত্র নেই বলা সত্ত্বেও র্যাব নির্যাতন বন্ধ করেনি।
অন্যদিকে র্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন দাবি করেন, ইউনুচের বাসায় অস্ত্র রাখার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালানো হয়। তারা স্বীকার করেন, ইউনুচের বাসায় অস্ত্র পাওয়া যায়নি। তবে ইউনুচের শরীরে আঘাতের চিহ্ন এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রসঙ্গে তিনি কিছুই বলেননি। এই অস্বীকৃতিতে আশ্চর্য হওয়ার অবশ্য কিছু নেই। এটা তাদের গৎবাঁধা আচরণ। যশোরের মানবাধিকার সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ইউনুচের ওপর নির্যাতনের ভয়াবহতার চিহ্ন দেখেছেন বলে মন্তব্য করেছেন এবং সংগঠনটি তাঁকে আইনি সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছে। এটি স্বস্তির ব্যাপার।
ওপরের উপাখ্যানটি একেবারেই নতুন কিছু নয়; এ দেশে অপ্রত্যাশিতও নয়। দিনের পর দিন রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সাধারণ নাগরিকদের সন্দেহের বশে অথবা প্রাপ্ত কোনো তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো রকম জবাবদিহির তোয়াক্কা না করে তাদের ইচ্ছামতো অপমানজনক ও নির্যাতনমূলক আচরণ করে পার পেয়ে যাচ্ছেন। কখনও কখনও তাদের এ ধরনের ‘অভিযান’ হত্যাকাণ্ড ও গুমের মতো গুরুতর ঘটনা পর্যন্ত গড়ায়।
কয়েক দশক ধরে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর, যার মধ্যে রয়েছে মূলত র্যাব ও পুলিশ, এহেন বিচারবহির্ভূত বেআইনি আচরণের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তাতে কোনো কিছু আসে যায় বলে মনে হয় না। বরং যারা এসব বিষয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ বা জবাবদিহি আদায়ের চেষ্টা করেছেন, তাদেরই কর্তৃপক্ষের রোষানলে পড়তে হয়েছে। মৌখিক তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, অপমানজনক কথাবার্তা থেকে শুরু করে আরও নানা রাষ্ট্রীয় বৈরিতার শিকার হতে হয়েছে মানবাধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীদেরই। মন্তব্য শুনতে হয়েছে, পশ্চিমা মানদণ্ড ধার করে মানবাধিকারকর্মী বা সংগঠনগুলো ‘ষড়যন্ত্রমূলকভাবে’ দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এসব করে থাকে।