পলিটেকনিক শিক্ষা কেন চক্ষুশূল হলো

সমকাল এম আর খায়রুল উমাম প্রকাশিত: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৫৫

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে এক অদ্ভুত উটের পিঠে চাপিয়ে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দেশের ক্ষমতাবানদের একেকজন কখন কী স্বপ্ন দেখবে এবং অন্যদের দেখতে বাধ্য করবে– তা সাধারণ মানুষের বুঝের অতীত। বছরখানেক আগের খবর; জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ৭৮ শতাংশ আসনই খালি। সে খবরের একটি অংশে বেসরকারি পলিটেকনিক মালিকদের সংগঠনের সভাপতির বাণীও ছিল। আমাদের ব্যবসায়ীবান্ধব সরকারের মন্ত্রী সেই এক বাণীতেই কুপোকাত হলেন। সত্যিই তো! ব্যবসায় এমন ক্ষতি ক্ষমতাবানদের সহ্য হবে কীভাবে! মন্ত্রী মহোদয় তাই সাত তাড়াতাড়ি চার বছরের পলিটেকনিক শিক্ষা কোর্সকে তিন বছরে রূপান্তর করার ঘোষণা দিয়ে দিলেন। আন্দোলনের মুখে ঘোষণা যখন বাস্তবে রূপ পেল না, তখন কৌশলে সেমিস্টারের সময়সীমা কমিয়ে ছয় মাসের স্থলে চার মাস করা হলো। যাতে চার বছরের কোর্স এমনিতেই তিন বছরে শেষ হয়।


দেশের পলিটেকনিক শিক্ষা কোর্স অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজকের এই অবস্থানে পৌঁছেছে। আহসানউল্লাহ স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে যার পথপরিক্রমা শুরু। আপার সাব-অর্ডিনেট, লোয়ার সাব-অর্ডিনেট, ওভার শেয়ার, লাইসেন্সিয়েট ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাসোসিয়েট ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে বর্তমানে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং। স্কুলটি কলেজে রূপান্তর হওয়ার পর ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তি তৈরির কাজটিও চলমান ছিল। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু ১৯৫৫ সালে ফোর্ড ফাউন্ডেশন ঢাকা পলিটেকনিক স্থাপন করার পর মূল সমস্যার শুরু। বাংলাদেশে মূলত ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়ার এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা একই কাজ করে থাকেন। ফোর্ড ফাউন্ডেশনের পলিটেকনিক শিক্ষা কোর্স আমেরিকান সিলেবাস, আমেরিকান বই, আমেরিকান শিক্ষক দিয়ে পরিচালিত হওয়ায় এ শিক্ষার মান অনেক উন্নত হয়ে যায়, ফলে পলিটেকনিক শিক্ষার মান কমানোর প্রতিযোগিতায় ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়াররা নিবেদিত হয়ে পড়েন। সেই প্রতিযোগিতা আজও চলমান।


মানুষের চিন্তায় যদি দেশ ও মানবপ্রেম থাকত, তাহলে পলিটেকনিক শিক্ষা কোর্সের মান কমানো নয় বরং ডিগ্রি ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা কোর্সের মান উন্নত করার ভাবনাই প্রাথমিক বিবেচনায় আসত। কিন্তু তা তো হওয়ার নয়। দেশের সমাজ যেহেতু অভিজাত শ্রেণির, তাই তাদের সুরক্ষার দায়িত্ব তো সরকারকেই নিতে হবে। আর সরকারও চায় অভিজাত শ্রেণির বিশেষজ্ঞদের দিয়ে সাধারণ জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে। কিন্তু সুষ্ঠু সেবা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন শ্রেণির দক্ষতাসম্পন্ন জনশক্তির প্রয়োজন পড়ে। মূলত এ ভাবনা থেকেই সরকার আজ বিচ্যুতপ্রায়। সরকারের ভাবনার সঙ্গে মিলিয়ে দেশের পেশাজীবী বিশেষজ্ঞরাও এই দলের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি বিশ্বাস করেন না। তাই অসম দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার কার্যক্রম প্রতিটি পেশায় দেখা যায়। এতে সেবার মান দিন দিন কোথায় যাচ্ছে, তা বিবেচনার কেউ আছে বলেও মনে হয় না। সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে না– বৈষম্যমূলক দল তৈরির ব্যবস্থা রেখে সেবার মান উন্নত করা যাবে।


বেসরকারি পলিটেকনিকের এক নেতা দাবি করেছেন, বিশ্বে চার বছরের পলিটেকনিক শিক্ষা কোর্স কোথাও নেই। কিন্তু ১৪ বছরের স্কুলিংয়ের পলিটেকনিক শিক্ষা কোর্স বিশ্বের বহু দেশে আছে, তা বোধ করি তিনি ভালোই জানেন। পলিটেকনিক শিক্ষা কোর্সের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াররা দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করে দেশে ১৪ বছরের স্কুলিংয়ের পলিটেকনিক শিক্ষা কোর্স চালু করেন। বিজ্ঞানের অগ্রগতি, রেমিট্যান্স, সেবার মান বৃদ্ধি ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরবর্তী সময়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে তিন বছরের পলিটেকনিক শিক্ষা কোর্সকে চার বছরে রূপান্তরের নির্দেশ দেন। ‘প্রকৃচি’র পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গোষ্ঠী স্বার্থে অন্ধ শিক্ষামন্ত্রী আজ গণমানুষের আস্থার প্রতীকের বিবেচনাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। এটা কতটা শোভন কাজ হচ্ছে, সে বিচারের ভার না হয় জনগণের ওপরই ছেড়ে দিলাম। দেশের কল্যাণ না গোষ্ঠী স্বার্থ– কোনটির জয় হবে, তা-ই এখন দেখার বিষয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও