রাজনীতিতে কিশোর গ্যাংয়ের ব্যবহার উদ্বেগজনক

যুগান্তর ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:৩৩

দুঃখজনক হলেও সত্য, বর্তমানে যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, সভা-সমাবেশ, মিছিল, পিকেটিংসহ নানামুখী সহিংস ও অবিবেচক কর্মসূচি পালনে কিশোর গ্যাংয়ের ব্যবহার বেড়েছে। দল-মত নির্বিশেষে নগর-শহর-গ্রামীণ জনপদে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতায় দেশবাসী যারপরনাই আতঙ্কগ্রস্ত। সন্ত্রাস, ভাঙচুর, আক্রমণ, ভূমি দখল, মাদক পাচার, হত্যা ইত্যাদি অবাঞ্ছিত কাজে কিশোরদের উপস্থিতি এবং নৈরাজ্য সৃষ্টিতে তাদের ভূমিকা সর্বমহলে আলোচিত। সম্প্রতি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনকালে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় কিশোরদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল লক্ষণীয়। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরতা ভয়ংকর রূপ পরিগ্রহ করেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যানুসারে নির্বাচনকেন্দ্রিক অরাজকতা-নাশকতা সৃষ্টিতে কিশোর গ্যাং নানামুখী অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।


বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন, গবেষণার ফলাফল ও জনশ্রুতি অনুসারে-পারিবারিক-সামাজিক-ধর্মীয় অনুশাসনের অভাব, অপরাজনীতির কদর্য প্রভাব বা আধিপত্য বিস্তারের অপচেষ্টা, অনৈতিক-অবৈধ পন্থায় অর্থ ও ক্ষমতালিপ্সু ব্যক্তিদের পদ-পদায়ন, জঙ্গি-সন্ত্রাসী-মাদকসেবী-দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিকদের প্রভাবে কিশোর গ্যাং অপসংস্কৃতি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। দরিদ্র, শিক্ষা ও কর্মবঞ্চিত, নিপীড়িত-নিগৃহীত ব্যক্তি ও পরিবারের, এমনকি নিম্ন-উচ্চবিত্তের সন্তানদের অনেকেই এ অপসংস্কৃতির শিকার হচ্ছে। একদিকে রাতারাতি বা স্বল্প সময়ের মধ্যেই অনৈতিক প্রাচুর্যের ঊর্ধ্বগতি, অন্যদিকে প্রত্যাশার তুলনায় প্রাপ্তির ব্যাপক দূরত্বের সাংঘর্ষিক মিথস্ক্রিয়া এ অপসংস্কৃতিকে গতিশীল করছে। নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টিতে এই অবুঝ, অনেকটা নির্বোধ শিশু-কিশোরদের ব্যবহারে তৎপর কথিত ‘বড় ভাই’ নামধারীরা কোনো না কোনোভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অশুভ পৃষ্ঠপোষকতা অর্জনে সক্ষম হচ্ছে। এদের ধনসম্পদ ও বিত্ত-বৈভব অর্জনের জঘন্য প্রক্রিয়ায় কিশোরদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাচ্ছে।


বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কিশোর গ্যাং কালচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কিশোরদের একত্রিত করে কতিপয় নষ্ট চরিত্রের ঘৃণ্য ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের অপরাধে কিশোরদের সম্পৃক্ত করছে। কিশোর গ্যাংয়ের নেপথ্যে আছে স্থানীয় পর্যায়ের অপরাধী চক্র ও কতিপয় রাজনৈতিক নেতা। সহজ ও স্বল্প ব্যয়ে কিশোরদের দিয়ে তারা অপরাধ করানোর সুযোগ নিচ্ছে। বিভিন্ন অপরাধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতারের পর এই অপরাধীদের আইনগত সহায়তাও দেয় আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া রাজনৈতিক নেতারা। কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কিশোর গ্যাং তৈরি করছে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কাজে লাগাতে তারা নতুন নতুন গ্যাং তৈরিতেও ইন্ধন জোগাচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দেশের ৬৪ জেলায় গ্যাং কালচারের অস্তিত্ব পেয়েছে।


২০১৭ সালে রাজধানীর উত্তরায় ছাত্র হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে কিশোর গ্যাং সংস্কৃতি জনসম্মুখে উন্মোচিত হওয়ার পর দেশব্যাপী এর দ্রুত বিস্তার ঘটেছে। সারা দেশে হত্যাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে কিশোর গ্যাংয়ের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতারও করা হয়। গণমাধ্যম সূত্রমতে, চলতি বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরে কিশোর গ্যাং পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠকের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ২২৫টি। ওই সদস্যরা আলাদাভাবে ১১০টি গ্যাংয়ের সদস্য। গ্যাংগুলোর সদস্য সংখ্যা প্রায় এক হাজার। উল্লেখিত সময়ে গ্রেফতার হয়েছে বিভিন্ন গ্যাংয়ের ৫২৯ সদস্য, যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। বৈঠকে আরও বলা হয়, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এলাকাভিত্তিক মাদকের কারবার-সেবন-সরবরাহ, ছিনতাই, ইভটিজিং, চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, এমনকি খুনের মতো অপরাধেও জড়িত। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তালিকাভুক্ত কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা ৫২ এবং সদস্য সংখ্যা প্রায় ৭০০। সবচেয়ে বেশি গ্যাং রয়েছে ঢাকার মিরপুরে। ডিএমপির তথ্যানুসারে, পুলিশের মিরপুর বিভাগে ১৩টি কিশোর গ্যাংয়ের ১৭২ জন সক্রিয় সদস্য আছে। ওই বৈঠকে আগামী নির্বাচনে কিশোর গ্যাং সক্রিয় হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীরা তাদের কাজে লাগালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও