নির্বাচন: দেশ যখন ক্ষয়িষ্ণু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে
ধরে নিতে হচ্ছে, একটি একতরফা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে দেশ। আমাদের রাজনীতির মূল বলয়ে থাকা দুটি দলের একটি বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, অপরটি ক্ষমতার বৃত্তের বাইরে থাকা বিএনপি।
এ ছাড়া আরও অনেক দল কিছু না কিছু জনসমর্থন নিয়ে রাজনীতিতে আছে। নির্বাচনে দলগুলোর একটি মেরুকরণও দেখা যায়। বিএনপির সঙ্গে রয়েছে সমমনা আরও কয়েকটি দল। তাদের দাবি, সরকার পদত্যাগ করে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচন।
এমন বিধানই বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের দাবিতে সংবিধানে একপর্যায়ে ছিল। তবে সেটি তারাই ২০১১ সালে বদলে ফেলে। এ বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের একটি বিভক্ত রায়ের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এর বিকল্প কোনো কিছু খুঁজে দেখে একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রচেষ্টা নেওয়া হয়নি।
নির্বাচনী দৌড়ের বাইরে থাকা রাজনৈতিক শক্তি এমনটা বলতে পারে যে সবার জন্য একটি সমতল ক্ষেত্র বিরাজমান নেই। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সেটা লক্ষণীয়ও হয়েছে। ২০১৪-এর নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অর্ধেকের বেশি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে যান। অন্য আসনগুলোয়ও তেমন প্রতিযোগিতার নমুনা ছিল না।
২০১৮ সালের নির্বাচনে সব কটি দল অংশ নিলেও সরকার শাসনযন্ত্র ব্যবহার করে বিরোধীদের প্রচার-প্রচারণার সুযোগ দেয়নি। কারাবন্দী ও দৌড়ের ওপর রেখেছে তাদের অধিকাংশ কর্মী-সমর্থককে।
তদুপরি ভোটারের অনুপস্থিতিতে আগের রাতে ব্যালট পেপারে সিল দিয়ে বাক্স ভর্তি করে রাখার জোরদার অভিযোগও রয়েছে। ফলে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হয়নি—এমনটা বলা চলে।
আশা করা হয়েছিল, এবার এমনটি হবে না। দেশবাসীর এই প্রত্যাশার সঙ্গে সহমর্মিতা জানাচ্ছে পাশ্চাত্যের গণতান্ত্রিক দেশগুলো। তারা একটি অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের দাবি করে আসছিল এক বছরের বেশি সময় থেকে।
তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বহুমাত্রিক। সেসব দেশের মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র। পৃথিবীর সর্বত্র তাদের কার্যক্রম এ ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থার পক্ষে রয়েছে, এমনও নয়। তদুপরি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, এমন অনেক ক্ষেত্রে বেদনাদায়ক সমর্থনও দিয়ে যাচ্ছে। এসব আমাদের পীড়িত করে। আমরা এর নিন্দাও করি। অন্যদিকে আমরা আপাতত আমাদের শতবর্ষের ঐতিহ্য বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার সহায়ক বিবেচনা করে, তাদের সমর্থনকে বিবেচনা করছি।