বিএনপি এখন কী করবে
বিএনপি ছাড়াই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে যে অনুমান করেছিলাম, অবশেষে সেটাই শতভাগ সত্য হলো। বিএনপি এবং এর সমমনা দলগুলো নির্বাচনে এলই না। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিলের যে সময়সীমা নির্বাচন কমিশন তফসিলে নির্ধারণ করে দিয়েছিল, সেই সময় উত্তীর্ণ হওয়ায় তারা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ হারিয়েছে। অবশ্য সুযোগ হারানোর কথা বলা বোধ হয় এ ক্ষেত্রে অসংগত। কারণ তারা যেটা করতে চেয়েছিল, শেষ পর্যন্ত সেটাই করল।
এখন প্রশ্ন হলো তারা যেটা চেয়েছে এবং এখনো চাইছে, কিংবা ভবিষ্যতেও চাইবে—মানে সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, সেটাও তো হলো না এবং হচ্ছে না। তাহলে এখন তারা কী করবে? কী হবে এখন তাদের রাজনৈতিক কৌশল? কোন পথে এগোবে তারা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে?
গত ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন বিএনপি এবং এর সমমনা দলগুলোর কর্মসূচি ছিল হরতাল। সেই হরতাল কতটা সফল হয়েছে বা কে পালন করেছে, সে আলোচনায় না যাওয়াই ভালো। কারণ সেই হরতালের অভিজ্ঞতা কমবেশি সবারই আছে। ওই দিনের হরতাল শেষে তারা আবার দুই দিনের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আগামী রবি ও সোমবার পালিত হবে এই অবরোধ। তাদের কর্মসূচির গতি-প্রকৃতি যাঁরা পর্যবেক্ষণ করেন, তাঁদের আর বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে আগামী মঙ্গলবার কোনো কর্মসূচি থাকবে না। তারপর বুধ ও বৃহস্পতিবার হয়তো আবার অবরোধ কিংবা হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলোর মাসখানেকের কর্মসূচি পর্যবেক্ষণকারীদের পক্ষে এই অনুমান করাও অসম্ভব নয় যে নির্বাচন পর্যন্ত এভাবে ‘থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়’ ধরনের কর্মসূচি চলবে। মাঝখানে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তারা নির্বাচন হতে দেবে না বলে যে হুংকার দিয়েছিল সে কথা স্মরণে রেখেই বলা যায়, তারা তেমন কিছুই করতে পারবে না। এ ধরনের কর্মসূচি কিংবা লাগাতার অবরোধ-হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি দিয়েও নির্বাচন ঠেকানো সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। বিএনপি এবং এর সমমনা দলগুলোর মধ্যেও এই উপলব্ধি এসেছে যে নির্বাচন ঠেকানো আর সম্ভব হচ্ছে না।
তাহলে পরবর্তী কর্মসূচি বা দাবি আদায়ের পন্থা কী হবে? বিষয়টি এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। তবে গভীরভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং আলাপ-আলোচনা করা হচ্ছে। তাতে এখন পর্যন্ত যে ফলাফলের কথা জানা যায়, সেই অনুযায়ী নির্বাচন পর্যন্ত কঠোর কোনো কর্মসূচি দেওয়া সম্ভব না হলে অবরোধ-হরতালের নামকাওয়াস্তে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর, নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণের হার, কী পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো, তা দেখে নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে। তবে আন্দোলনের কর্মসূচি বন্ধ রাখা হবে না।