হাওরে সড়ক: অবশেষে বোধোদয়
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গত ৩০ অক্টোবর ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং বিশ্বব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত জ্বালানি ব্যবহারসংক্রান্ত দুদিনব্যাপী এক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বলেছেন, ‘হাওর এলাকায় আর কোনো সড়ক নির্মাণ করা হবে না’ (আজকের পত্রিকা, ৩১ অক্টোবর ২০২৩)। পরিকল্পনামন্ত্রীর এ বক্তব্য নিয়ে আলোচনা করার আগে এ-সংক্রান্ত কিছু তথ্য সামনে আনা যেতে পারে বলে মনে করি, যার প্রথমটি হচ্ছে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কসংক্রান্ত।
২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ উক্ত সড়কের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সাড়ে চার বছরের কম সময়ের ব্যবধানে এবং নির্ধারিত সময়ের কয়েক মাস আগে ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর উক্ত সড়কের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মোট ৮৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২৯ দশমিক ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কের উদ্বোধনকালে বলা হয়েছিল, এর মধ্য দিয়ে হাওরাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হলো।
এখন প্রশ্ন দুটি: এক. ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক নির্মাণের মধ্য দিয়ে ওই এলাকার সাধারণ মানুষের লালিত স্বপ্ন আসলেই পূরণ হয়েছে কি না; এবং দুই. অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ কেনই-বা হাওরে সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নিলেন? প্রথম প্রশ্নের উত্তর পেতে প্রথমেই জানা দরকার, ওই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের যাতায়াতের কষ্ট লাঘবের জন্য আসলে কী ধরনের রাষ্ট্রীয় সহায়তা প্রয়োজন। জবাবে বলব, তাদের সাধারণ প্রত্যাশা হচ্ছে বিদ্যমান সেকেলে নৌযানব্যবস্থার বিপরীতে একটি মোটরযানচালিত আধুনিক যোগাযোগ অবকাঠামো।
তা সেটি সড়ক, সেতু, নাকি টানেল—সেটি মুখ্য বিবেচ্য নয়। সে ক্ষেত্রে এর মধ্যে কোনটি ওই অঞ্চলের জন্য উপযুক্ত, তা নির্ধারণের দায়িত্ব ছিল সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ যে এ ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, তা এরই মধ্যে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আরও প্রমাণিত হয়েছে, হাওর অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি ও জলাভূমির গঠন বিবেচনায় সেখানে ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়ক নির্মাণ একেবারেই সমীচীন হয়নি।
- ট্যাগ:
- মতামত
- হাওরাঞ্চল
- হাওরের বাঁধ